এনজিও নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ আইন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে
প্রকাশ: ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনায় নতুন আইন তৈরি করছে সরকার। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। আইন কার্যকরের পর এক্ষেত্রে বিদ্যমান অধ্যাদেশটি স্বাভাবিকভাবেই বাতিল হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, অধ্যাদেশটি তৈরি হয়েছিল ১৯৬১ সালে, যা আইনে রূপান্তর করা হচ্ছে এবং এতে নতুন বিধিবিধান যুক্ত হবে। আইনি কাঠামোর মধ্যে সুরক্ষিত থাকলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে নতুন আইন যেন নিপীড়নমূলক ভূমিকা নিয়ে আবির্ভূত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য নতুন আইনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্ণনা করে বলা হয়েছে-কাউকে হেনস্তা করার জন্য আইন করা হচ্ছে না; এছাড়া অংশীজনরা যেসব মতামত দেবেন, তা গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।
’৭১-পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকটি এনজিওর কার্যক্রম শুরু হয় মূলত ত্রাণ সহায়তার মাধ্যমে। তবে গত ৫১ বছরে এ সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখে গিয়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত ৫৬ হাজার, সমবায় অধিদপ্তরের অধীনে ১ লাখ ৫০ হাজার, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে ১৬ হাজার এবং এনজিও ব্যুরোতে নিবন্ধিত আছে ২ হাজার ৫০০। বেসরকারি সংস্থার কাজের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-শিক্ষা, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, মৌলিক অধিকার, স্যানিটেশন, আর্সেনিক, এইডস/এইচআইভি, নারী উন্নয়ন, মানবাধিকার, শিশু, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রাধান্য বিস্তারকারী খাত হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম; যেখানে দেশি-বিদেশি উভয় উৎস থেকেই অর্থের জোগান দেওয়া হয়। এদেশে এমনও এনজিও আছে, যেটির কার্যক্রম ও শাখা-প্রশাখা বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশে বিস্তৃত; এছাড়া সম্মানজনক নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থাও রয়েছে আমাদের দেশে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এনজিও খাত দেশে একটি বড় অবদান রেখে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য। বস্তুত সুষ্ঠু নিয়োগ প্রক্রিয়া, কর্মীদের দক্ষতা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন, প্রতিনিয়ত তাদের প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া প্রভৃতির মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি এবং এর যথাযথ ব্যবহারে এনজিওগুলো উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে চলেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
স্বল্পব্যয়ে ডায়রিয়া ও কলেরার মতো প্রাণসংহারি ব্যাধি রোধে ওরাল স্যালাইন তৈরি ও সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করে বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের জন্য প্রশংসা ও সম্মান বয়ে আনলেও এনজিও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশে অনেক সমালোচনা রয়েছে, বিশেষত ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে। বলা হয়, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি মহাজনদের মতো শোষণমূলক, যা দরিদ্রকে আরও দরিদ্র করে রাখার জন্য মোক্ষম একটি অস্ত্র বৈ কিছু নয়। এছাড়া এনজিগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই; তারা রাজনীতি করে; সংস্থায় গণতন্ত্রের চর্চা নেই, কর্মীদের অনেক কম পারিশ্রমিক দিয়ে অনেক বেশি খাটিয়ে নেয়-বিপরীতে এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা ও কর্মকর্তারা বিলাসী জীবনযাপন ও দুর্নীতি করেন প্রভৃতি নানা অভিযোগ আছে। এছাড়া কিছু এনজিওর বিরুদ্ধে দেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারে ভূমিকা রাখার অভিযোগও রয়েছে। দেশে কর্মরত এনজিওগুলোর দক্ষ কর্মীবাহিনী রয়েছে; রয়েছে আর্থিক সংগতি। নতুন আইনের আওতায় এটি দুটিকে কাজে লাগিয়ে তারা আধুনিক, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, এটাই প্রত্যাশা।