ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এক ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও হেনস্তার ঘটনা দেশব্যাপী আলোচিত হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনার ভিডিওটি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর তা সর্বস্তরের মানুষকে নাড়া দিয়েছে। আতঙ্ক ও উদ্ধেগ দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষ ও অভিভাবকদের মধ্যে।
ইতোমধ্যে হাইকোর্ট বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগজনক প্রকাশ করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী মেসগুলোতে অবস্থানরত নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সাম্প্রতি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ঘটনায় হলের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন অজানা শঙ্কায়। আতঙ্কে হল ছেড়ে বাড়ি ফিরেছেন অনেকে। অনেকে বাড়ি যেতে না চাইলেও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করায় বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন ছাত্রীরা। হলের গণরুমগুলোতে প্রায় অর্ধেকের বেশি গণরুম ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। গণরুমের পাশাপাশি অন্য শিক্ষার্থীরাও বাড়ি ফিরছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া গত দুদিন থেকে ছাত্রীদের হল থেকে বাড়ি চলে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হল গেটে দায়িত্বরত আনসার সদস্য।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, দুই দিন আগেও ক্যাম্পাসে দলবেঁধে আনন্দ-উল্লাসে মেতে থাকা নবীন শিক্ষার্থীরা এখন সিনিয়রদের দেখলে ভয়ার্ত কন্ঠে সালাম দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যান। তাদের চোখে-মুখে ভয়, অজানা এক আতঙ্কের ছাপ। অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে হলের গণরুম থেকে বাড়ি চলে যাওয়ার সময় কথা হয় এক ছাত্রীর সঙ্গে। ভয় কিংবা আতঙ্কে হল ছাড়ছেন কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। তবে কোন অহেতুক ঝামেলায় না জড়াতেই হল থেকে বাড়ি যাচ্ছেন বলে জানান ওই ছাত্রী। শিক্ষার্থীদের হলে থাকতে এবং তাদের নিরাপত্তা ও অভয় দিতে শনিবার থেকে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শামসুল আলম।
তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে; শনিবার কমিটি কার্যক্রম শুরু করবে। আমরা চাই প্রকৃত যে অপরাধী তদন্তসাপক্ষে তার শাস্তি হোক। এরকম পরিস্থিতি আমার মেয়াদকালে এর আগে কখনো ঘটেনি। শিক্ষার্থীদের থেকে আতঙ্ক দূর করতে শনিবার ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলব। আশাকরি এ পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে।’
হল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে আবাসিক আসন সংখ্যা ৫৬৮টি। গণরুমসহ মোট ৮৭৮ ছাত্রী হলে থাকেন। হলের সাতটি গণরুমে থাকেন ২০২০-২১ সেশনের অন্তত ১৩৪ জন ছাত্রী। ছয়টি গণরুমের মধ্যে দোয়েল-১ এবং দোয়েল-২ নামে দুইটি কক্ষ রয়েছে। প্রত্যেক কক্ষে ১৬ জন করে মোট ৩২ জন ছাত্রী অবস্থান করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে দোয়েল-১নং কক্ষে। তবে গণমাধ্যমগুলোতে প্রজাপতি-২ (গণরুম) কক্ষে নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ হওয়াতে আতঙ্কে রয়েছেন ওই কক্ষের ছাত্রীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর বিভিন্ন কক্ষ, হলের ছাদে, পার্শ্ববর্তী মেস এবং কুষ্টিয়া নিশান মোড় এলাকার একটি মেসসহ বিভিন্ন স্থানে নবীন শিক্ষার্থীদের ‘ম্যানার’ শেখানোর নামে বেশ কয়েকটি র্যাগিংয়ের ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে ঘটেছে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘ছাত্রীদের হল ছাড়ার বিষয়টি শুনেছি। হল কর্তৃপক্ষকে তাদের নিরাপত্তা ও অভয় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’