অবশেষে বদলী হল বরিশাল জেলা সমবায় কর্মকর্তা সেই মিজানুর রহমান
প্রকাশ: ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ২:২৬ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার : বরিশাল জেলা সমবায় কর্মকর্তা ও উপ -নিবন্ধক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে অবশেষে স্হানীয় সরকার ,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রশাসন অধিশাখা-২ এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা বিভাগীয় সমবায় অফিসে উপ-নিবন্ধক পদে বদলীর আদেশ প্রদান করা হয়। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের উপ-সচিব সিদ্ধার্থ শংকর কুন্ডু স্বাক্ষরিত এ বদলীর প্রজ্ঞাপন ৪ ডিসেম্বর’১৯ তারিখ জারি করা হয়।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে এক ই-মেইল বার্তায় মুহাম্মদ মিজানুর রহমান,উপ-নিবন্ধক ( প্রশাসন) ,বরিশাল বিভাগীয় সমবায় দপ্তর ও অতি:দ্বায়িত্ব বরিশাল জেলা সমবায় অফিসার কর্তৃক অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম,দূর্নীতি ও সমবায়ীদের থেকে চাঁদাবাজীর ব্যাপারে অভিযোগের বিষয়ে যাচাইপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে জানানো হয়।
সম্প্রতি বরিশাল জেলা সমবায় কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সম্পর্কিত সংবাদ বিভিন্ন পত্র -পত্রিকা ও অনলাইন গনমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
এদিকে বরিশাল জেলা সমবায় কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে দুদক,স্হানীয় সরকার ,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় ও সমবায় অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন সমবায়ীদের পক্ষে নাজমুল সানী।
অভিযোগের সত্যতা পেয়ে দুদক ও সমবায় বিভাগ ইতিমধ্য তদন্ত শুরু করেছে এবং সমবায় বিভাগ বদলীর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ :
২ নভেম্বর ‘১৯ সমবায় দিবস উপলক্ষে সমবায়ীদের চাদাঁ থেকে পাওয়া ৪ লাখ ২০ হাজার টাকাসহ বরিশালে ৩ বছর ধরে একই পদে থেকে অর্থ আত্মসাৎ,অনিয়ম ও দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা,ঢাকায় প্লট,ফ্লাট ও ঢাকা,গাজিপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি ক্রয় করেছেন। তিনি বরিশাল বিভাগীয় সমবায় অফিসের উপ -নিবন্ধক পদে কর্মরত হলেও তিনি অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব হিসেবে বরিশাল জেলা সমবায় অফিসার হিসেবে রয়েছেন।বরিশালে সমবায়ের রেজিষ্ট্রেশনে এ ঘুষখোর জেলা সমবায় কর্মকর্তাকে দিতে হয় বিশ থেকে পচিঁশ হাজার টাকা।
২ নভেম্বর’১৯ তারিখ সমবায় দিবস পালিত হলেও দিবস বাস্তবায়ন কমিটির নিকট এখনো হিসেব প্রদান করেনি।সমবায় দিবসে বাবুগঞ্জ থেকে নিম্মমানের তেহারী পরিবেশন করেছে। অনেকেই সেই তেহারীও পায়নি। দিশা নামে প্রতিষ্ঠান দাওয়াত কার্ড,আরবান ইসলামী ত্রিশ হাজার টাকা ,অফিসার্স সমবায় সমিতি দিয়েছে ত্রিশ হাজার টাকা,রাজারচর ক্রেডিট দশ হাজার টাকা এভাবে সমবায়ীদের থেকে চাঁদা আদায় করা হয় চার লাখ বিশ হাজার টাকা।
এদিকে, মোঃ মিজানুর রহমান সমিতি নিবন্ধনের জন্য বিশ থেকে পচিঁশ হাজার টাকা,নির্বাচন কমিটি অনুমোদনের জন দশ হাজার টাকা,সমিতি পরিদর্শনের জন্য দশ হাজার টাকা নিয়েও পরিদর্শন প্রতিবেদন দেয়না বলে অভিযোগ রয়েছে মোঃ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। এছাড়া মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সমিতির বাজেট অনুমোদনের জন্য দশ হাজার টাকা নেন। এসব ঘুষের টাকা সমবায় অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি নিয়ে থাকেন। বরিশালের শ্রেষ্ঠ এই ঘুষখোর কর্মকর্তার ঘুষ নেয়া দেয়ার কারনে সবাই অতিষ্ঠ। কারনে অকারনে মিজানুর রহমান সমিতিগুলো থেকে চাঁদা আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সমিতিগুলোকে হুমকি দিয়ে অবৈধ বাবে ঘুষ নিচ্ছেন। মিজানুর রহমানের ঘুষের জন্য আজ বরিশালের সমবায় সমিতিগুলো ধ্বংসের পথে বলে জানিয়েছেন একাধিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
বরিশাল জেলা সমবায় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা সমবায় কর্মকর্তা হিসেবে মো. মিজানুর রহমান যোগদানের পরেই ঘুষ বানিজ্যে মেতে উঠে।এদিকে একই পদে দীর্ঘদিন কর্মরত থেকে অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সমবায় সমিতির একাধিক ব্যাক্তির নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মিজানুর রহমান এ জেলায় যোগদানের পর থেকে প্রায় প্রতি বছরই আমাদের গুনতে হয় অলিখিত ঘুষের একটি পরিমান। তিনি এই প্রতিষ্ঠানকে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে নিয়েছেন। তাই তাকে সংস্থার অডিটসহ অন্যান্য কার্যক্রম করতে গেলেই দিতে হয় টাকা।
সূত্রে আরোও জানা যায়, তার অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষের টাকা দিয়ে তার গাজিপুর ও ঢাকায় অনেক সম্পত্তি ক্রয় করেছে। অনেক ব্যবসার অংশীদারিত্ব গ্রহন করেছে। ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছে। বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর হিসেবে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। কর্মস্থলে সাদাসিধে চললেও তাঁর পরিবার চলে রাজকীয় হালে। এছাড়া তিনি নারায়নগঞ্জ,সাতক্ষিরা ও গাজিপুর জেলা সমবায় অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে লাখ লাখ টাকা অবৈধ পন্থায় অর্জন করেছেন।