নাজমুল সানী : বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে ১৯৫৭ সালে ৩০ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ততকালীন যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যা মন্ত্রী থাকা কালে পূর্ব পাকিস্তান ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন নামে যাত্রা শুরু করে। দেশ স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) নাম করন করা হয়।
প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও অবকাঠামোর অভাবে ৫৮ বছরেও পূর্ণতা পায়নি বরিশালের বিসিক শিল্পনগরী। এখনো অধিকাংশ প্লট অব্যবহৃত রয়েছে। আবার বরাদ্দ দেওয়া প্লটগুলোর মধ্যেও অর্ধেকের বেশি বন্ধ হয়ে গেছে।
কয়েকজন উদ্যোক্তা শাহনমাকে জানান, এই শিল্পনগরীতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ-পানিসহ শিল্পের জন্য সহায়ক অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেই। বর্তমানে অল্পসংখ্যক শিল্পকারখানা এখানে চালু আছে। কিছু প্রতিষ্ঠান উদ্যোক্তাদের নিজস্ব চেষ্টায় সাফল্যের মুখ দেখলেও বেশির ভাগই চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
তথ্য সূত্রে বরিশাল শিল্প নগরী কেন্দ্র বিসিক ১৯৬০ সালে ১৩০.৬১ একর জমিতে গড়ে তোলা হয়। । যাতে ৩৩৪টি উন্নত এবং ১১২টি অনুন্নত প্লটসহ মোট ৪৪৬টি প্লট রয়েছে।
ইতিমধ্যে ১৭৩টি শিল্প ইউনিটের বিপরীতে ৩৭৮টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু নানামুখী সংকট ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা এবং উদাসীনতার কারণে ১৭৩টি ইউনিটের মাত্র ৭২টি ইউনিট উৎপাদনমুখী।
বিসিকের মূলকাজ হলো শিল্পউদ্যোক্তা চিহ্নিত বা উদ্যোক্তা তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত গবেষণা, উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, পুজির যোগান ও পণ্যর বিপণনে সহয়তা করা। এ ছাড়া ক্রেতা ও বিক্রেতা সম্মেলন আয়োজন কর, উদ্যোক্তাদের কর কমানোর বিষয়ে সহয়তা এবং পণ্যের মনোনয়নে সহয়তা করা। সব কিছু মিলিয়ে মূল উদ্দেশ্য হলো কম শিক্ষিত মানুষকে দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার মধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা।
বিসিকের তথ্যানুযায়ী শিল্প প্লট মূলত ৯৯ বছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে ৯৯ বছরের যে কোন শর্ত ভঙ্গ করলে বিসিক ওই প্লট বাতিল করতে পারে। তবে যারা প্লট বরাদ্দ পায় তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বিসিক সূত্রে জানা যায় বরিশাল বিসিক আওতাধীন অনেক শিল্প প্লট অব্যহৃত পড়ে আছে। শিল্প কারখানা করার মতো প্লট ফেলে রেখেছেন প্লট মালিকরা।
দেখা গেছে কিছু কিছু প্লটে কারখানার নাম-ঠিকানা সম্বলিত প্লাকার্ড পুঁতে রাখলেও নেই কোনো কার্যক্রম। ওই সকল প্লটের বরাদ্দ বাতিল করেনি কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবী নানা জটিলতা থাকায় বরাদ্দ বাতিল করা সম্ভব হচ্ছেনা। এদিকে বিসিক শিল্প নগরীতে শিল্প কারখানা স্থাপনের শর্ত থাকলেও একশ্রেনীর অসাধু লোক প্লট বরাদ্দ নিয়ে সেখানে দীর্ঘদিন যাবত পরিবার পরিজন নিয়ে আবাসস্থল গড়ে তুলেছে। কেউ বা আবার ঘর তুলে ভাড়া দিচ্ছেন।
উদ্যোক্তারা বলেন মূল সমস্যা চাঁদাবাজি এবং বিসিকের অব্যবস্থাপনা। উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী নেই বিসিকের পরিবেশ, রাস্তা, প্রাচীর, ড্রেনেজ সহ নিরাপত্তার ব্যবস্থা। বহিরাগত লোকজনের আনাগোনায় বিভিন্ন সমস্যা সম্মুখীন হতে হয় উদ্যোক্তাদের।
বরিশাল বিসিকের উপ- মহাব্যবস্থাপক মোঃ জালিস মাহমুদ (অ.দা.) বলেন বিসিকের সংকট সহ নানামুখী সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ চলছে। বরিশাল বিসিকে আধুনিকরনের লক্ষ্যে প্রায় ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন মূলক কাজ চলমান। কাজ সম্পূর্ণ হলে বরিশাল বিসিকের দৃশ্য বদলে যাবে। অতিতের তুলায় বর্তমান বিসিকের অনেক পরিবর্তন হয়েছে, নানা জটিলতা নিরসনের জন্য কাজ চলে, উদ্যোক্তাদের চাহিদা পুরন হবে আশা করি, নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করবে, বিসিক নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা পাল্টে যাবে।