গরুর চোখ কাপড় দিয়ে বাঁধা। কাঠের ঘানির এক প্রান্ত ঘাড়ে নিয়ে ঘুরছে কলুর বলদ। ঘানিতে থাকা শর্ষে কাঠি দিয়ে নেড়ে দিচ্ছেন ওমর আলী (৫৪)। ঘানির জাঁতাকলে শর্ষে পিষ্ট হয়ে ফোটায় ফোটায় তেল ঝরে পড়ছে পাতিলে। গত শুক্রবার টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার বাসাইল পূর্বপাড়া গ্রামে দেখা গেল এমন দৃশ্য।
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ঘানির তেলের টাকায় সংসার চলছে ওমর আলীর। এক ছেলে ও দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন তিনি। বললেন, পূর্বপুরুষের পেশা টিকিয়ে রাখার জন্য তিনি এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর বাবা রমজান আলীও একই কাজ করতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁর পেশাকে ধরে রেখেছেন তিনি। তাঁর গরু একটাই। একাধিক গরু কেনা ও লালনপালনের সামর্থ্য নেই তাঁর।
ওমর আলী বলেন, বাজার থেকে শর্ষে কিনে এনে তা কাঠের ঘানিতে দিয়ে তেল বের করেন। গরু দিয়ে ঘানি টেনে তেল করা হয়। পরে তা খাবার উপযোগী করে বাজারে বিক্রি করেন। প্রতিদিন ভোর থেকে গরু দিয়ে কাঠের ঘানি টানা শুরু করেন। থেমে থেমে চলে বিকেল পর্যন্ত। প্রতিদিন ২৫ কেজি শর্ষে থেকে ৮ লিটার তেল পাওয়া সম্ভব। একটি গরু দিয়ে ঘানি টানালে গরুর ওপর চাপ পড়ে। গরু অসুস্থ হলে মাঝেমধ্যে তিনিই ঘানি টানেন। কষ্ট হলেও এই পেশাকে মেনে নিয়েছেন তিনি। নিজের এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসে তাঁর কাছ থেকে তেল কিনে নিয়ে যান।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীর হাসড়া গ্রাম থেকে মতিয়ার রহমান এসেছেন তেল নিতে। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি জানান, দুই মাস পরপর এখান থেকে খাঁটি শর্ষের তেল কিনে নেন। সখীপুর থেকে আসা আবদুল কাদের বলেন, বাজারের তেলে ভেজাল। বাজার থেকে তেল কিনলে ১ লিটার ২৫০ টাকায় পাওয়া যায়। এখানে ঘানিতে ভাঙানো শর্ষের তেল খাঁটি বলে প্রতি লিটার বিক্রি হয় ৩২০ টাকায়।
ওমর আলীর স্ত্রী সখিনা বেগম বলেন, তিনি মাঝেমধ্যে তাঁর স্বামীকে সহযোগিতা করেন। স্বামী বাজারে গেলে তিনিই সব করেন।