১১৬ ধর্মীয় বক্তা দুর্নীতিবাজ হলে তোমরা কি
|
![]() ![]() সম্প্রতি দেশের এক হাজার মাদরাসা নিয়ে তদন্ত করেছে একটি কমিটি। জানা নেই মাদরাসা নিয়ে তদন্ত করার আইনগত ও নৈতিক অধিকার এ কমিটির আছে কি না। এ কমিটিরও বিশাল বদনাম রয়েছে। এর আগে নানাসময়ে দেশের স্থিতি ও শান্তি বিনাশে এ কমিটির ভূমিকা ছিল বিরাট। মার্কামারা অনেক পচা লোকজন এ কমিটিতে রয়েছেন। একজন সম্পর্কে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি মন্তব্য করেছেন, ‘সে কবে মুক্তিযোদ্ধা ছিল? সে তো একাত্তরে পাক বাহিনীকে মুরগী সাপ্লাই দিত। অথচ, এ লোক আজ মুক্তিযুদ্ধের গোটা চেতনার দেখভালকারী হয়ে বসেছে।’ তার সম্পর্কে দেশের এক সাবেক বিচারপতি বলেন, ‘সে বাহাত্তর থেকে বিরানব্বই পর্যন্ত ছোটোখাটো চাকরি করত। চাকরি যাওয়ার পর সে চলে কীভাবে, সেটাই আমার বুঝে আসে না। একবার মানুষের হাতে হাতে একটি তালিকা ঘুরতে ফিরতে দেখেছি, সেখানে বিদেশী একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এদেশের কিছু লোক কত টাকা করে মাসোহারা পায়, তার একটি হিসাব দেখেছিলাম। এ ধরনের কোনো পয়সাকড়ি পেয়েই সম্ভবত ব্যবসা বা চাকরি না করা কিছু লোক এদেশে চলে। একবার এ লোক বাংলাদেশের শান্তি শৃংখলাবিরোধী কিছু ডকুমেন্টসহ বর্ডার এলাকায় ধরা পড়েছিল। তখনও কোনো ‘মুরব্বী’র হস্তক্ষেপে ছাড়া পায়।’ দেশে মাদরাসা সম্পর্কে খোঁজখবর আর তদন্ত যেন শেষ হয়ই না। আলেম-ওলামারা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলে জবাব দেওয়া হয়, না না, আর তদন্ত হবে না। মন্ত্রী পর্যায়ে জানালে বলা হয়, দু’য়েকটি তদন্ত হতে পারে। কিন্তু বারবার তদন্ত তো হওয়ার কথা নয়। দেশে একেকটি সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে আর মাদরাসাগুলোতে শুরু হয় পুলিশ ও গোয়েন্দা নামধারী নানা লোকের আনাগোনা। যদিও সন্ত্রাসী সব ঘটনায় আধুনিক শিক্ষিত লোকজন জড়িত দেখা যায়। কোনো মাদরাসা শিক্ষার্থী এখানে জড়িত থাকে না। কিন্তু তদন্তগুলো হয় মাদরাসায় মাদরাসায়। পুলিশ পরিচয় দিলে আলেমগণ নিশ্চিন্ত হন। বলেন, কোনো আসামী থাকলে আমরাই ধরিয়ে দেব। তবে, সাদা পোশাকে লোকজন গেলে তারা পড়েন বিপদে। বুঝতে পারেন না এরা কি আসলে গোয়েন্দা, না মিশনারী, এনজিও না বিধর্মী অন্যকেউ, না চাঁদাবাজ বাটপার। যেমনটি ঘটেছে ঘাদানিকের তদন্তে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি হয় একটি সংস্থা বা এনজিও। তারা নিশ্চয় পরিচয় গোপন করে কিংবা মিথ্যা পরিচয়েই এক হাজার মাদরাসায় তদন্ত করেছে অথবা মাদরাসায় যায়ইনি। পথেঘাটে বা রাজধানীর চিপায়-চাপায় ফর্মায়েশি তদন্ত সেরে ফেলেছে। তারা পঞ্চাশজন আলেমের নামে নালিশ করে দুদককে তদন্তে নামিয়েছে। দুদকের কি নিজস্ব চিন্তা, নীতিমালা ও কর্মশক্তি নেই? একবার দুদকের দায়িত্বশীল ব্যক্তিটিই বলেছিলেন, দুদক এখন দন্তনখরবিহীন বাঘ। তাহলে ঘাদানিক কি বর্তমানে দুদকের দন্তনখর? একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা এক আলোচনা সভায় মন্তব্য করেছিলেন, ‘দেশে জেনুইন ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও সম্মানিত নাগরিককে শায়েস্তা করার জন্য কোনো নেপথ্য শক্তি দুদককে ব্যবহার করে। দুদক যত না দুর্নীতিবাজ খুঁজে পায়, তারচেয়ে এর বেশি নিরীহ লোককে হয়রানি করে। নেপথ্য শক্তির ইশারায় সুনাগরিকদের হাইকোর্ট দেখায়। জনৈক ভুক্তভোগী বলেছিলেন, ‘দুদক আমার যেসব গোপন সম্পত্তি ও দেশে বিদেশে বাড়ীঘরের মিথ্যা আরোপ লাগিয়েছিল, যার কোনো সত্যতা তারা পায়নি। যদি আইন থাকতো যে, এসব আমাকে দিতে হবে। তাহলে আমি হতাম বাংলাদেশের সেরা ধনী। অথচ, আমি সঠিকভাবে চলার মতো টাকারও মালিক নই।’ মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেব সম্পর্কে ‘মুরব্বী’দের খুশি করতে গিয়ে তাকে যত সম্পদের মালিক বানানো হয়েছিল, যা কল্পনাও করা যায় না। অথচ, আজীবন শিক্ষাবিদ ও ইসলাম প্রচারক এ মানুষটির সামান্য শিক্ষকতার আয় ও মাতুলালয়ে পিতা নির্মিত সাধারণ একটি বাড়ীর একাংশ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। অথচ, দেশের সংবাদপত্রে কথিত গোয়েন্দাসূত্রের বরাত দিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ধারী লোকেরাই প্রকাশ করেছিলেন যে, বাবুনগরীর দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ, সউদীতে ব্যবসা, দুবাইয়ে সুপার মার্কেট, কাতারে ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা এবং ওমানে প্রায় শ’খানেক লরি আছে। এসবের মূল্য কত শত কোটি টাকা হয় তা কি নিউজ করার সময় এসব রিপোর্টারের মাথায় ছিল? নাকি তারা কোনো বুদ্ধিবিনাশক দ্রব্য খেয়ে রিপোর্ট লিখেছিলেন। আর কথিত ওই গোয়েন্দাসূত্রগুলো এখন কোথায়? ‘মুরব্বী’রা কি এর কোনো জবাব দিবেন? তারা কি বাবুনগরীর পরিবারকে এসব ধনসম্পদ এনে দেবেন? তার যে বদনাম তারা করেছেন, এর ক্ষতিপূরণই বা তারা কি দিবেন? নাকি এ অপরাধের জন্য তারা জাতির সামনে ক্ষমা চাইবেন? এ কমিটি নিজেদের কাজ দেখানোর জন্য লম্বা চওড়া নাম নিয়েছে। মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আরও কি কি শব্দ ব্যবহার করে তারা ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে জনমনে ঘৃণা ছড়ানোর জন্য গণতদন্ত কমিশন গঠন করেছে। দুঃখজনক হলেও এমন বাজে কাজ করার জন্য কোনো আত্মসম্মানসম্পন্ন লোক তারা পায় না। বেশিরভাগ বেহায়া, ভাড়াটে দালাল, হুকুমের চাকর বা কেনা গোলাম ধরনের লোকই এসব ক্ষেত্রে নেওয়া হয়। আমরা কারও বদনাম করছি না, কাউকে ছোটো করাও উদ্দেশ্য না। তবে, ঘটনাচক্রেই এ কাজের পুরোভাগে কিছু লোক এমন এসেছেন, যারা বাংলাদেশে পচা মানুষের সামিল। একজনকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি স্যাডিস্ট, সরল বাংলায় বিকৃত মনের লোক আখ্যা দেন। এর সঠিক তরজমা আরো খারাপ। যা বয়স্ক লোকটির সম্মানার্থে করা হলো না। যিনি লন্ডনে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মিটিংগুলোতে হাজির হয়ে ফ্লোরে বসার জায়গা পেতেন। বিচারক ছিলেন। বিএনপি করতেন। পরে প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ তিন ডবল আওয়ামী লীগ করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে ইসলামকে দুর্বল করার, মুসলমানদের অপমান করার দায়িত্ব নিয়েছেন। টিপকাণ্ডের সময় তদন্ত বা অভিযোগ প্রমাণের আগেই এ মর্মে বিবৃতি দিয়েছেন, পুলিশ কিংবা অন্য কোনো বাহিনীতে মৌলবাদী রাখা যাবে না। মৌলবাদী অর্থ ইসলাম ধর্মের প্রতীক বহনকারী ব্যক্তি। মানে দাড়ি, টুপি, নামাজ, সুন্নতি কালচার কিংবা ইসলামী শিষ্টাচার তার দুই চোখের শত্রু। অথচ, এ বিবৃতি দেওয়ার সময় ও ভাষা একটি বড় চক্রান্তের অংশ বলে পরবর্তীতে ধরা পড়ে। কয়েকটি সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সাথে তার বিবৃতিটি সমভাব ব্যক্ত করায় তার উদ্দেশ্য ও পরিচয় স্পষ্ট হয়। ১১৬ জন ধর্মীয় বক্তার বিরুদ্ধে ২২০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দুদকের কাছে জমা দেওয়ার সময় মিডিয়াকে দেওয়া তার বক্তব্যে তার মোটিভ প্রকাশ পেয়েছে। তিনি ৯২ ভাগ মানুষের নেতা, আলেম, ধর্মীয় বক্তাদের মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী ও অপরাধী আখ্যা দিয়ে বারবার আপত্তিজনক মন্তব্য করেছেন। আর রেফারেন্স টানার সময় একের পর এক সংখ্যালঘুর সূত্র উল্লেখ করেছেন। বোঝা গিয়েছে, রাগ তার ইসলামের প্রতি, আর কথা বলছেন তিনি অন্য কারও হয়ে। মনে হবে যেন, এটাই হুকুম। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। ওয়াজ মাহফিল নিয়ে যারা ২২০০ পৃষ্ঠা নষ্ট করতে পারলেন, দেশের হাজারও সমস্যা, অন্যায়, অপরাধ, দুর্নীতি নিয়ে তারা ২২টি লাইন লেখতে পারলেন না? কমিটির আরেক সদস্য যার নামে অভিযোগ আছে, মানবতাবিরোধী ট্রাইবুনালের সুবাদে ১৫ কোটি টাকা ঘুষ খাওয়ার চেষ্টার। এটি সত্য নাও হতে পারে। তিনি বোরকা পরে (যে বোরকাপ্রথাটি তিনি সবসময় ঘৃণা করেন) নিজের সহকারী ফারাবী নামক একজনকে স্বামী পরিচয় দিয়ে বিশিষ্ট এক ব্যক্তির সাথে গোপনে দেখা করতে যান। সেটি দেশপ্রেমিক গোয়েন্দাদের সুবাদে সরকার ও জনগণ জানতে পারে। তার মায়ের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি বাড়ীঘর সম্পত্তি জোর করে দখল করেন। মা এবং ভাইকে জুলুম ও হুমকির মুখে রেখেছেন। ট্রাইবুনালের উকিল হিসাবে নিজের মা’কে ডিজিএফআই, এনএসআই ও র্যাব-পুলিশের ভয় দেখান। তিনি হয়েছেন, ১১৬ ওয়ায়েজ ও এক হাজার মাদরাসার দুর্নীতি ধরার স্বঘোষিত জিম্মাদার। বিশেষ কষ্টের কথা এই যে, দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়রা নিজেদের মনের মতো খেলা খেলুক, সীমা অতিক্রম করলে রাষ্ট্র আছে, সরকার আছে, মাথার উপরে এখনও জাতির জনকের কন্যা আছেন, ইমাম, আলেম, ধর্মীয় বক্তা, মসজিদ-মাদরাসা কোনোটাই সরকারের শাসনের বাইরে নয়। সবার ভালো-মন্দ দেখা সরকারের দায়িত্ব। কওমী মাদরাসাকে দেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু নয়, আমাদের এ অঞ্চলে শিক্ষার শুরু এবং উৎস হিসাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সংসদে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি কওমী শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্সের মান দিয়েছেন। ঘাদানিকের আলেম-ওলামা ও মাদরাসাবিরোধী কথিত প্রতিবেদন কী করে তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উন্মোচন করেন? তা এদেশের আলেম-ওলামারা কিছুতেই বুঝতে পারছেন না। কোন খুঁটির জোরে ওলামায়ে কেরামকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দেওয়া কথিত রিপোর্টটি সরকারি সংস্থা দুদকের প্রধান সবক’টি দাঁত কেলিয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে গ্রহণ করেন সেটিও বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের বোধগম্য নয়। তাহলে কি স্বরাষ্টমন্ত্রী বছরের পর বছর ধরে আলেম-ওলামাদের শ্রদ্ধা-সম্মান দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত ঘাদানিকের সাথেই একমত হলেন? তাহলে কি শেষ পর্যন্ত সুনীতি ও পুতঃপবিত্রতায় ভরা এ বাংলাদেশে একমাত্র ধর্মীয় বক্তা ও আলেম ওলামারাই দুর্নীতিবাজ? বাংলাদেশে চিরকালের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বহাল রাখা এবং সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য মসজিদ, মাদরাসা, ইমাম আলেম ও ওয়ায়েজগণ আন্তরিক ভূমিকা রেখে চলেছেন। তারা সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কানি দেন, এটি সম্পূর্ণ অপবাদ ও ডাহা মিথ্যা। দুর্নীতির কথা বলতে গেলে বাংলাদেশের সকল অঙ্গনের তুলনায় ইসলাম ধর্মীয় অঙ্গন সবচেয়ে স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ও পবিত্র বলে প্রমাণিত। এ বাস্তবতাকে অস্বীকার করে ঘাদানিকের এমন অবাস্তব, মিথ্যা, বানোয়াট, ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও উদ্দেশ্যমূলক গণতদন্ত এবং ২২০০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়াই অধিক যুক্তিযুক্ত। গত দু’দিন দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব ইসলামী দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। শীর্ষ আলেমগণ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ অপকর্মের নিন্দা জানাচ্ছেন। আগামী কয়েকদিন বড় বড় সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ করবে। ১১৬ জন আলোচক ও এক হাজার মাদরাসা সীমালঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে। মুসলমানদের ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, রীতিনীতি, প্রতিষ্ঠান ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে বিতর্কিত কিছু লোকের এ অবিমৃশ্যকারিতা বাংলাদেশের মুসলমানরা কিছুতেই মেনে নেবে না। |