হাসনাত-সাদিক কি করবেন : খোকন সেরনিয়াবাত’র পক্ষে বরিশালে জনজোয়ার
প্রকাশ: ৯ মে, ২০২৩, ১২:২৮ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত ৫ বছর আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং তার পুত্র সাদিক আব্দুল্লাহর কর্তৃত্বে ছিল বরিশাল। বরিশাল থেকে নির্বাচিত পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কারো নাম না বলে সম্প্রতি বরিশালে এক অনুষ্ঠানে এরকমই ইঙ্গিত দিয়েছেন। শুধু পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নন, বরিশালের আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাকর্মীরাও স্বীকার করেছেন যে বরিশালে আওয়ামী লীগ ছিল না, ছিল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সাদিক রাজত্ব। এখন আওয়ামী লীগ তার প্রার্থী পরিবর্তন করেছে। সাদিক আব্দুল্লাহকে এবার মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তার বদলে খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ণ দেওয়া হয়েছে। যিনি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই। কিন্তু ছোট ভাই হলে কি হবে? হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো নয়। বিশেষ করে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ তার পৈত্রিক বাসভবনে খোকন সেরনিয়াবাতকে প্রবেশ করতে দেননি—এমন অভিযোগ কেউ কেউ করে থাকেন। যদিও বিভিন্ন মহল মনে করছেন যে খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দেয়ার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বিচক্ষণতা এবং বুদ্ধিদীপ্ত পরিচয় দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হল যে মনোনয়নবঞ্চিত হবার পর সাদিক আব্দুল্লাহ কি করছেন? সামনে কি করবেন?
সাদিক আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর আলমের মত ভুল কাজ করেননি। তিনি নির্বাচনের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নি। এটি তাঁর রাজনৈতিক পরিপক্কতার পরিচয় বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অর্থাৎ তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হননি বা আওয়ামী লীগ সভাপতির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেননি। কিন্তু চ্যালেঞ্জ না করলে কি হবে, বরিশালে নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি এবং রাজনৈতিক অবস্থান টিকিয়ে রাখার জন্য তিনি খোকন সেরনিয়াবাত এর যে বিরোধীতা করবেন সেটি মোটামুটি নিশ্চিত এবং তার ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে।
মে দিবস উপলক্ষে শ্রমিক লীগের যে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও সেই উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত বেশি দূর গড়ায় নি। কিন্তু খোকন সেরনিয়াবাত এর নির্বাচনে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সাদিক আব্দুল্লাহ যে তার পক্ষে কাজ করবেন না এটি মোটামুটি নিশ্চিত। প্রশ্ন হল তারা যদি নির্বাচনে কোনো ভূমিকা না রাখেন বা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান করেন তাহলে কি আওয়ামী লীগ প্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
বরিশালের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোটেও হবে না। বরং তারা খোকন সেরনিয়াবাত এর বিরোধিতা করেন এবং নির্বাচন থেকে দূরে থাকেন তাহলে সাধারণ জনগণ খুশি হবে এবং খোকন সেরনিয়াবাত এর পক্ষে ভোটের জোয়ার তৈরি হবে। এই কারণেই বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা চাইছেন যে সাদিক আব্দুল্লাহ এবং তার পিতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ যেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরোধিতা করে বা নির্বাচনী প্রচারণা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সাদিক আব্দুল্লাহকে মনোনয়ন থেকে বাদ দিয়ে একটি নৈতিক বিজয় অর্জন করেছে এবং খোকন সেরনিয়াবাত এর পক্ষে বরিশালে একটি জনজোয়ার তৈরি হয়েছে। এই নির্বাচনে কোনো রকম বড় ধরনের প্রচারণা ছাড়াই খোকন সেরনিয়াবাত বিজয়ী হবেন—এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেক্ষেত্রে হাসনাত পরিবারের কি হবে? বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এত সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। তিনি অপেক্ষা করবেন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বা তার পরবর্তী সময়ে তিনি একটি সুযোগ খুঁজবেন আবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ঘনিষ্ঠ হওয়ার এবং তার যে নড়বড়ে অবস্থান তা পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি শেষ চেষ্টা করবেন। এখন দেখার বিষয় সে শেষ চেষ্টায় তিনি সফল হন কিনা।