সৌন্দর্য্যে আসমুদ্র হিমাচলকে যিনি মাতোয়ারা করেছেন তিনি বলিউডের লাস্যময়ী অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফ। দেখতে দেখতে পা রাখলেন জীবনের চল্লিশ বসন্তে। আজ এই বলিউড সুপারস্টারের জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে অগণিত ভক্ত অনুরাগীর শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি।
১৯৮৩ সালের আজকের এই দিনে (১৬ জুলাই) ভিক্টোরিয়া হংকং-এ জন্মেছিলেন ক্যাটরিনা ৷ তার বাবা মোহাম্মদ কাইফ ভারতীয় হলেও মা সুজান টারকোট ছিলেন ব্রিটিশ। শৈশবেই তার বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরিত্যক্ত পরিবারে ৬ ভাই-বোনের সঙ্গে বেড়ে ওঠাটা ক্যাটরিনার জন্য সহজ ছিল না। তার মা সুজান টারকোট কাজের জন্য নানা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। যার কারণে ক্যাটরিনা কখনো স্কুলেও যেতে পারেননি।
সে তার মায়ের সঙ্গেই থাকতো। বাবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। একবার ক্যাটরিনা কাইফ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘দুঃখজনকভাবে বাবার ধর্ম, সমাজ কিংবা নৈতিকতা আমার উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি।’
মাত্র ১৪ বছর বয়সে একটি জুয়েলারীর বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হন ক্যাটরিনা। মডেলস্ ওয়ান এজেন্সী’র সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে লন্ডনে মডেলিং কার্যক্রম চালিয়ে যান। কাজ করেন লন্ডন ফ্যাশন উইকে। সেখানে তিনি নজরে পড়েন চলচ্চিত্র নির্মাতা কাইজাদ গুস্তাদের, এরপর তিনি তাকে চলচ্চিত্রের রূপালী পর্দায় নিয়ে আসেন।
সালটা তখন ২০০৩, কাইজাদের মাধ্যমে ‘বুম’ দিয়ে চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগ পান। যেখানে তিনি সুপার মডেলের চরিত্রে অভিনয় করেন। সেই থেকে ক্যাটরিনার চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার শুরু। তবে সেসময় হিন্দি ভাষায় কথা বলতে না পারায় পরিচালকরা তাকে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন না। সিনেমার প্রস্তাব খুব একটা আসত না। তবে একসঙ্গে অনেকগুলো বিজ্ঞাপনচিত্রের প্রস্তাব পান ক্যাটরিনা। তখন বিজ্ঞাপনে চুটিয়ে কাজ করতে থাকেন। বলিউডে সিনেমা না পাওয়ায় ২০০৪ সালে তিনি তেলেগু সিনেমা ‘মল্লিশ্বরী’-তে অভিনয় করেন। ছবিটির জন্য মাত্র সাত লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন।
২০০৫ সালে ‘সরকার’ সিনেমায় অভিষেক বচ্চনের প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। ছবিটিও সাফল্য পায়। এরপর বলিউড ভাইজান সালমানের খানের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় এবং তারা একসঙ্গে কাজ করেন ‘ম্যায়নে পেয়ার কিউ কিয়া’ সিনেমায় এবং তার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায়।
এরপর ক্যাটরিনা ‘নামাস্তে লন্ডন’, ‘পার্টনার’, ‘ওয়েলকাম’, ‘রেস’ ছবিতে কাজ করেন। ‘রেস’ ছবিতে কাজ করতে গিয়ে ২০০৮ সালের দিকে অক্ষয় খান্নার প্রেমে পড়েন ক্যাটরিনা। ২০০৯ সালে ‘নিউইয়র্ক’ সিনেমায় উচ্চমাত্রায় প্রশংসিত হয়েছিলেন। তার ক্যারিয়ারে যোগ হয় ‘এক থা টাইগার’, ‘ধুম ৩’ এবং ‘জাব তাক হ্যায় জান’ এর মত সিনেমা, অভিনয় করেন সব বলিউড সুপারস্টারদের সঙ্গে। কালক্রমেই তিনি হয়ে ওঠেন বলিউড সুপারস্টার।
হিন্দি ভাষাসহ ভারতীয় অন্যান্য ভাষায় ক্যাটরিনার জ্ঞান কম থাকায় প্রথমদিকে সিনেমায় তার পরিবর্তে অন্য মেয়ে ভয়েজ ওভার দিতেন। তবে ‘বুম’, ‘দে দানা দান’, ‘সিং ইজ কিং’, ‘নামাস্তে লন্ডন’ ছবিগুলোতে আবার ক্যাটরিনার নিজস্ব ভয়েজ ছিল।
দরিদ্রতার কারণে স্কুলে যেতে না পারা এবং হিন্দি ভাষা বলতে না পারা সেই মেয়েটাই এখন বলিউডের সফল অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন। পারিশ্রমিকও নেন উচ্চহারে। ক্যাটরিনা কাইফ প্রতি ছবির জন্য ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা পারিশ্রমিক নেন। সিনেমার পাশাপাশি বিজ্ঞাপনও করেন তিনি৷ একটি বিজ্ঞাপনের জন্য ৭ কোটি টাকা নেন। একসময়ে টাকার খোঁজে বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ানো সেই ক্যাটরিনার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২৩০ কোটি টাকা অর্থাৎ ২.৩ বিলিয়নেরও বেশি ৷ এমনটাই ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের৷
মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে ক্যাটরিনা কাইফের, যেটির দাম আট কোটি টাকা। এছাড়া লন্ডনে ১০ কোটি টাকা মূল্যের একটি সুন্দর বাংলো রয়েছে তার। রয়েছে ৪২ লক্ষ টাকা মূল্যের অডি-কিউ থ্রি, ৫০ লক্ষের মার্সিডিজ-এমএল থ্রি ফাইভ জিরো এবং ৮০ লক্ষের অডি-কিউ সেভেন মডেলের বিলাসবহুল গাড়ি।
২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর অভিনেতা ভিকি কৌশালকে বিয়ে করেন ক্যাটরিনা কাইফ। বিয়ের পর বেশ সুখেই রয়েছেন নায়িকা। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার ‘টাইগার থ্রি’ সিনেমা।