‘দ্য বিগেস্ট আপসেট অব ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ’- কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনাকে যখন বিধ্বস্ত করছে সৌদি আরব তখন কেবল এই বাক্যটিই চর্চিত হচ্ছিল বিশ্বজুড়েই। এমন দাবির পেছনে অবশ্য অনেক যুক্তি দেখানো সম্ভব। তবে আপাতদৃষ্টিতে দুই দলের র্যাঙ্কিংয়ের পার্থক্য দিয়েই বিষয়টি বুঝানো সম্ভব।
কাতার বিশ্বকাপে ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে দুই দল যখন মুখোমুখি হচ্ছিল তখন আর্জেন্টিনার র্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান ৩। অন্যদিকে পঞ্চাশের বাইরে সৌদি আরব। র্যাঙ্কিংয়ে ৪৮ ধাপ পিছিয়ে থেকেও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয় তুলে নিয়েছে এশিয়ার এই পুঁচকে দেশটি। আর তাইতো সৌদি আরবের ইতিহাসে সবচেয়ে বিগেস্ট জয় হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচটিকে।
কাতারের বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম অঘটন ঘটিয়ে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২-১ গোলে জয় তুলে নিয়েছে সৌদি আরব। ম্যাচটিতে সৌদির পক্ষে ভিন্ন দুই ফুটবলার গোল করেছেন। একজন দলটির প্রধান স্ট্রাইকার সালেম আল সেহরি এবং অন্যজন উইঙ্গার সালেম আল দাউসারি।
কিন্তু সৌদির জয়ের নায়ক এই দুইজনের কেউই নয়। সৌদির জয়ের নায়ক হিসেবে অবশ্য চাইলে গোলরক্ষক মোহাম্মদ আল ওয়াইসকেও বিবেচনায় আনা যায়। পুরো ম্যাচ জুড়ে এই সৌদি গোলরক্ষক ৫টি সেইভ দিয়েছেন। এরমধ্যে দুটি তো একদম গোললাইনের মুখ থেকেই।
তবুও এই ম্যাচে সৌদির জয়ের নায়ক হিসেবে এই তিনজনের কাউকে বিবেচনায় আনা উচিত হবে না। কারণ এই ম্যাচে সবুজ জার্সিধারীদের আসল জয়ের নায়ক সৌদির কোচ হার্ভ রেনার্ড। এই কোচের দুর্দান্ত কৌশলের কাছেই যেন হেরে গেছে আর্জেন্টাইনরা।
লে আলবিসেলেস্তেদের বিপক্ষে এদিন শুরুতে ডিফেন্সিভ খেলার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন সৌদির এই ফরাসি কোচ। আর তাই ৪-৫-১ ফরমেশন দিয়ে শুরুতে নিজের দলকে মাঠে নামান তিনি। তার এই সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল প্রথমার্ধে সেটি হাড়ে হাড়ে প্রমাণ করেন আর্জেন্টাইনরা। ৪ বার সৌদির জালে বল জড়ায় তারা।
এরমধ্যে সৌভাগ্যের কারণে অফসাইডের ফাঁদে আর্জেন্টিনার তিনটি গোল বাতিল হওয়ায় মাত্র ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে দলটি। পরবর্তীতে দ্বিতীয়ার্ধে ফরমেশন বদলে ৪-৪-১-১ এ দলকে খেলান এই কোচ। এমনকি দলকেও আক্রমণাত্মক খেলার ইঙ্গিত দেন।
তাতে যেন বদলে যায় দলটি। মাঠে নেমেই আক্রমণের ধার বাড়ায় সৌদিয়ানরা। বিরতির পর মাঠে নেমেই ৩ মিনিটের মধ্যে গোল আদায় করে নেয় তারা। ৪৮তম মিনিটে প্রথম গোল দিয়ে ম্যাচে সমতায় ফেরে সৌদি আরব। এর ৫ মিনিট পর দর্শনীয় আরেক গোলে সবুজ জার্সি ধারীরা লিড নেয় আর্জেন্টিনার বিপক্ষে।
ম্যাচের বাকি সময় ডিফেন্সে জোর বাড়ান কোচ। সৌদি ডিফেন্ডাররাও নিজেদের সেরাটা দিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন। ছোট দলকে বড় সাফল্যা এনে দেওয়া অবশ্য রেনার্ডের পুরনো অভ্যাস।
এর আগে ২০১২ সালে জাম্বিয়াকে ন্যাশন্স আফ্রিকা কাপ জেতান এই কোচ। ২০১৫ সালে একই শিরোপা জেতানো আইভরি কোস্টকে। এবার তো বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজের ট্যাকটিক্যাল ব্রিলিয়ান্সে সৌদিকে নিয়ে হারিয়ে দিলেন আর্জেন্টিনাকেই।