কাবুলের স্টেডিয়ামে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলছে মেয়েরা, গ্যালারিতে নারী দর্শকদের উল্লাস- আফগানিস্তানের এই ছবি আর কখনও তুলতে পারবেন কেউ? ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দেশটিতে তালেবান শাসনভার গ্রহণের পর অনেক নারী ক্রীড়াবিদ দেশ ছেড়েছেন। যারা রয়েছেন, তারা খেলা ছেড়ে ঘরে বসে আছেন- এমন অবস্থায় আফগানিস্তান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়েই চিন্তিত আইসিসি।

কেননা তাদের শর্তই রয়েছে সদস্য দেশগুলোর পুরুষ জাতীয় দলের পাশাপাশি থাকতে হবে নারী ক্রিকেট দল, থাকতে হবে নারী ক্রিকেটের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট- এসব শর্ত পূরণ করলেই শুধু সেদেশকে আর্থিক অনুদান ও সহযোগিতা করবে আইসিসি। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সেসব আর্থিক সুবিধা ভোগ করলেও বাতিল করেছে নারী ক্রিকেট টুর্নামেন্ট।

আগামীকাল দক্ষিণ আফ্রিকায় যে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী বিশ্বকাপ শুরু হতে যাচ্ছে, সেখানে আইসিসির প্রতিটি সদস্য দলের অংশগ্রহণ থাকলেও অনুপস্থিত আফগানিস্তান। এমন অবস্থায় আইসিসি কি তালেবান সরকারকে চাপে ফেলতে আফগানিস্তানের সদস্যপদ বাতিল করবে? নাকি তাদের টেস্ট মযার্দা স্থগিত করবে? গতকাল অস্ট্রেলিয়া আফগানিস্তানের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজ বাতিল করায় সেসব প্রশ্ন আবার সামনে এসেছে।

আফগানিস্তান নারী দল সেভাবে কখনই প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তার পরও বছর তিনেক আগে শুরু হয়েছিল কিছু কার্যক্রম। ধীরে ধীরে তা জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল। কিন্তু তালেবান সরকার দেশটির ক্ষমতা নেওয়ার পর আতঙ্কে আছেন নারী ক্রিকেটাররা।

‘আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক সময়ে যা ঘটছে, তা অবশ্যই উদ্বেগজনক। সেখানে ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকেই আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কিছু অগ্রগতির প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। এটা অবশ্যই উদ্বেগের। আগামী মার্চে পরবর্তী সভায় আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।’ আইসিসির প্রধান নির্বাহী অ্যালারডাইসও ভীষণ হতাশ আফগানিস্তান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আফগান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ২০২১ সালের নভেম্বরে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছিল আইসিসি। সংস্থার ডেপুটি চেয়ারম্যান ইমরান খাওয়াজের নেতৃত্বে কমিটি তালেবান সরকার ও আফগান ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়েছিল। সে সময় তালেবান মুখপাত্র সোহাইল শাহিন আইসিসিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এই বলে যে আইসিসির গঠনতন্ত্র মেনে আফগানিস্তান ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায় যা কিছু করার, তার সব কিছুই করবে তালেবান সরকার। এর মধ্যে নারী ক্রিকেটকে সমর্থন দেওয়ার শর্তও মেনে নিয়েছিল তারা।

কিন্তু সেই কথা রাখেনি তালেবান সরকার। বর্তমানে পুরুষ ও বয়সভিত্তিক মিলিয়ে মোট ছয়টি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট সেখানে চালু রয়েছে। কিন্তু মেয়েদের জন্য কিছুই নেই।

ইএসপিএনক্রিকইনফোর এক প্রতিবেদনে বতর্মান আফগান ক্রিকেট বোর্ডের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন বর্তমান বাস্তবতায় আফগানিস্তানে নারী ক্রিকেট চালু করা সম্ভব নয়। তার যুক্তি নারী ক্রিকেটাররা আফগানিস্তানে থাকলেও তারা আর ক্রিকেট খেলতে চান না। ‘আফগানিস্তানে নারী ক্রিকেট সবসময়ই আলোচিত-সমালোচিত ছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিগগিরই এই সমস্যার কোনো সমাধান দেখছি না। আফগানিস্তান একটি পরিবর্তিত সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে মেয়েরা এখন আর ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী নয়। কেউ কেউ বাড়ির আঙ্গিনায় ক্রিকেট খেললেও মাঠে গিয়ে খেলার কথা তারা চিন্তাও করতে পারছে না।’

আফগান বোর্ডের ওই কর্মকর্তার পরামর্শ যারা দেশের বাইরে চলে গিয়েছেন, সেসব মেয়ে অস্ট্রেলিয়াতে যদি কোনো দল গড়ে, তাতে সমর্থন থাকবে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের। অর্থাৎ আর যা-ই হোক আফগানিস্তানে থেকে যে মেয়েরা ক্রিকেট খেলতে পারবেন না, সে কথা আবার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন ওই কর্মকতা।