এরই মধ্যে স্বপ্নের আমন ধান জমি থেকে কেটে এনে রাখা হয়েছে বাড়ির উঠোনে। অনেকে ‘বঙ্গা’ মেশিনে ধান মাড়াই করেছে। অনেকে রয়েছে মেশিনের অপেক্ষায়। সোনালি ধানের ম-ম গন্ধে মেতেছে কৃষকের বাড়ি। অনেক কৃষাণী ব্যস্ত পিঠাপুলির আয়োজনে। আবার কেউবা ব্যস্ত সারা বছর ভাত খাওয়ার ধান সিদ্ধ করে তা রোদে শুকানোর কাজে। এবার আমনের বাম্পার ফলনের সঙ্গে বাজারমূল্য ভালো থাকায় খুশি কৃষকও। কৃষকরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধান বাজারে বিক্রয় করে তারা গম, আলু, হাইব্রিড টমেটোসহ বিভিন্ন ফসল আবাদের কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
কৃষকরা জানান, পঞ্চগড়ে কৃষকদের প্রধান আবাদ প্রকৃতি নির্ভর আমন ধান। বৃষ্টির পানিতে এই ধান চাষ করার কারণে তুলনামূলকভাবে উৎপাদন খরচ বোরো ধানের চেয়ে অনেক কম হয়। গত বর্ষা মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় আশঙ্কায় পড়ে কৃষকরা। অবশ্য কিছুদিনের মধ্যেই পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে একযোগে জমিতে আমন চারা লাগানোর কাজ শুরু করে কৃষকরা। চারা লাগানোর পর থেকে মৌসুমের শেষ পর্যন্ত কম বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার পঞ্চগড়ে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
এরই মধ্যে জমিতে লাগানো কষ্টের আমন ধান কেটে বাড়িতে তুলেছে কৃষকরা। ছোট ও প্রান্তিক চাষিরা ধান মাড়াইয়ের কাজও শেষ করে ফেলেছেন। ধার-দেনা করে আমন ধান আবাদ করার কারণে তারা ধান বিক্রয় করে দিচ্ছেন হাটবাজারে। তাই এখন পঞ্চগড়ের সব ছোট-বড় হাট বাজার নতুন ধানের ভরে গেছে।
জেলা সদর, জগদল, টুনিরহাট, হাঁড়িভাসা, চাকলাহাট, ফকিরের হাট, বোদার ধানহাটী, ময়দানদিঘী, মাড়েয়া, তেঁতুলিয়ার ভজনপুর, শালবাহান, তিরনইহাটসহ বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি মণ আমন ধান বিক্রয় হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। বাজারে সবচেয়ে বেশি উঠছে পারিজাত নামের বিভিন্ন ধরনের ধান। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার অটো রাইস মিল মালিকরা পুরোদমে বাজার থেকে ধান কেনা শুরু না করার কারণে বাজারে ধানের দাম বাড়ছে না। ধানের বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি না হওয়ার কারণে ছোট ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামাফিক দামে ধান ক্রয় করছে। ছোট ও প্রান্তিক কৃষকরা ধান দেনা করে আমন ধান আবাদ করার কারণে বাধ্য হয়েই কম দামে ধান বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করছেন।
পঞ্চগড় জেলা সদরের বলেয়া পাড়া গ্রামের কৃষক মোজাহারুল হক বলেন, এবার মানুষের জমি বর্গা নিয়ে তিনি ২ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেন। ধান মাড়াইয়ের পর ৩৬ মণ ধান পেয়েছেন। গত বছর একই জমিতে ধান আবাদ করে পেয়েছিলাম ৩০ মণ। এবার রোগ বালাইয়ের আক্রমণ বেশি থাকায় ওষুধের খরচ অনেক বেশি হয়েছে। শেষ মুহূর্তে এসে আক্রমণ করেছে কারেন্ট পোকা। এই পোকা জমির অনেক ধান নষ্ট করেছে। ওষুধে কোন কাজ হয়নি। নাহলে ধান আরো বেশি পাওয়া যেত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, চলতি আমন মৌসুমে পঞ্চগড় জেলায় ৯৭ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬০ টন ধান।
তবে মৌসুমের শেষে বৃষ্টিতে শেষ পর্যন্ত ৯৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করা হয়েছিল। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৯৭ হেক্টর বেশি। এতে করে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, গত বর্ষা মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বিপাকে পড়ে কৃষকরা। অনেকে সেচ দিয়ে চারা রোপণ করে। পরে অবশ্য পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় শঙ্কা কেটে যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার পঞ্চগড়ে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা আগাম ধান কেটে গম, আলুসহ শীতকালীন শাকসবজি আবাদ করেছে। এতে করে তারা অধিক লাভবান হচ্ছে।