ইংরেজীতে কবি জর্জ হারর্বাট বলেছেন, শীতে প্রত্যেক মাইল হয়ে যায় দ্বিগুণ । শীতে আমাদের জয়েন্ট মুভমেন্ট কমে যায় অনেকেই দীর্ঘ সময় এক পাশে শুয়ে থাকেন ফলে জয়েন্ট ব্যথা হয়।
এছাড়াও শীতে আমাদের ভাইটাল ওরগান হার্টকে গরম রাখার জন্য আমাদের শরীরের কাজ করে ফলে পেরিফিরাল বা প্রান্তীয় জয়েন্টগুলো অতি মাত্রায় ঠান্ডা হয়ে যায় এবং ব্যথা হয়।
হাঁটু ব্যথা নাই এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না। হাঁটু ব্যথা বললেই মনে হয় এইটা বয়স্ক লোকের অসুখ। কিন্ত আমি বলব না। হাঁটু ব্যথা অল্প বয়স্ক লোকের হতে পারে। অল্প বয়সের লোকদের যে ধরনের হাঁটু ব্যথা হয় সেইরকম হাঁটু ব্যথা বয়স্ক লোকদের সাধারণত হয় না।
বিভিন্ন বয়সে, বিভিন্ন কারণে হাঁটু ব্যথা হয়ে থাকে। যেমন: বয়স্ক লোকদের অস্টিওআর্থ্রাইটিস-এর কারণে বেশি হাঁটু ব্যথা হয়, কিন্তু অল্প বয়সের রোগীদের অস্টিওআর্থ্রাইটিস হয় না বললেই চলে। সেজন্য আমি হাঁটু ব্যথার রোগীদের জন্য প্রথমেই সঠিক ইতিহাস জেনে নেই। হাঁটুতে অনেক ধরনের স্ট্রাকচার আছে। চিকিৎসার আগে আমাকে অবশ্যই জেনে নিতে হবে অথবা পরীক্ষা করে বের করতে হবে তার কোন স্ট্রাকচারে অসুবিধা।
নিরাময়- নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন (প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট)।এক্সারসাইজ আপনার রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা হাঁটু ব্যথা কমায়। নিয়মিত এক্সারসাইজ হাঁড়ের ডেনসিটি বাড়িয়ে জয়েন্ট রিলেটেড বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে। এছাড়াও ডিপ্রেশন কমিয়ে মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। অধিক ওজনের রোগীদের ক্ষেত্রে শরীরের ওজন কমাতে হবে।
ব্যথা বেশি থাকা অবস্থায় টয়লেটে হাইকোমড ব্যবহার করবেন কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর স্বাভাবিক কোমড ব্যবহার করবেন। হাঁটু ব্যথার কারনে অনেকে চেয়ারে নামাজ পরে কিন্তু আমার ৪৩ বছরের অভিজ্ঞতায় এবং বিভিন্ন সময় রোগীরা বলেছেন হাঁটু ব্যথা কমানোর জন্য দীর্ঘদিন চেয়ারে নামাজ পরছি তবুও হাঁটু ব্যথা কমে না। তাই মাথায় রাখুন স্বাভাবিক ভাবে নামাজ পরার।
এক্সারসাইজ ইজ মেডিসিন ফোর টুডে এন্ড টুমোরো। ফিজিওথেরাপি পার্শ্বপতিক্রিয়া হীন যুগান্তকারী চিকিৎসা। ফিজিওথেরাপি ইজ মেডিসিন ফোর টুডে এন্ড টুমোরো।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যেমন- মেনুয়াল থেরাপি এবং অন্যান্য ইলেক্ট্রো থেরাপি, অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিলে আরও দ্রুত উপকার হবে ইনশাআল্লাহ।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ব্যথা নিরাময়ে কিছু প্রাকৃতিক ঔষধের কথা বলেছেন যেমনঃ মধু (ব্যথার স্থানে মধুর সাথে ভিনেগার মিশিয়ে মাখালে ব্যথা কমে), খেজুর, কালো জিরা, ওলিভ অয়েল, তরমুজ ইত্যাদি খাবার ব্যথা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।এছাড়াও লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত খান, প্রচুর পানি খান।প্রতিদিন ৩০ মিনিট গাঁয়ে রোদ লাগান। ধূমপান বর্জন করুন।
খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন -সামদ্রিক মাছ, টুনা মাছ, বাদাম, ফ্লাকসসীড, যোগ করুণ। এগুলো শীতকালীন ব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
আমার এই ছোট লেখার মাধ্যেমে ধারণা দিতে চেষ্টা করেছি যে, আপনার যদি এইরকম হাঁটুর কষ্ট হয় তাহলে আপনি কি ধরনের চিকিৎসা করবেন। আপনার হাঁটুর যত্ন নিন, সুস্থ জীবন-যাপন করুন।
শীতে নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন, সুস্থ থাকুন, হাঁটু ব্যথা মুক্ত থাকুন। যারা হাঁটুর অসুস্থায় বা ব্যথায় ভুগছেন তারা নিকটস্থ মাস্কুলোস্কেলিটাল ডিসর্ডার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন।
প্রফেসর আলতাফ সরকার, মাস্কুলোস্কেলিটাল ডিজঅর্ডারস বিশেষজ্ঞ