অব্যবস্থাপনা, মানসম্মত পাঠদানের অভাব, শিক্ষক অনুপস্থিতি, কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও গাফিলতির কারণে গফরগাঁও উপজেলার অর্ধশতাধিক বিদ্যালয়ের অবস্থা শোচনীয়। এ নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক আয়োজন-
উপজেলার ২৩৮টি বিদ্যালয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা উপকরণ কিনতে ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। প্রত্যেক বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা উপকরণ কেনা হয়নি। আগের বছরের উপকরণ দেখিয়ে নতুন করে কেনার কথা বলছেন কোনো কোনো শিক্ষক। তবে বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে উপকরণ ক্রয়ের ভাউচার দেখতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করেন তাঁরা।
স্বল্প ছাপিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্লিপের টাকায় পাঁচটি দামি চেয়ার বানানো হয়েছে। ছোট অফিসকক্ষে চেয়ারগুলো সাজিয়ে রাখায় নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান এক শিক্ষক। চলতি অর্থবছরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য কী কী উপকরণ কেনা হয়েছে তা দেখতে চাইলে প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, বঙ্গবন্ধু কর্নার বানানো হয়েছে। অন্যান্য উপকরণ ক্রয় করা হবে। তবে ২০১৯ সালের পরে বঙ্গবন্ধু কর্নার বানানোর কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সবুজ মিয়া।
কেল্লারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কী কী উপকরণ কেনা হয়েছে, এ প্রশ্নে শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, চলতি বছর কোনো উপকরণ কেনা হয়নি। না কেনার কারণ জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক রাহিমা সরকার বলেন, কেনা হবে।
চলতি অর্থবছরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কোনো উপকরণ কেনা হয়নি মৃধাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অসুস্থ। তাই কিনতে পারিনি।’
খোঁজ নেওয়া হয় চরমছলন্দ কিনারআলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। এ প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষা উপকরণ কেনার কোনো ভাউচার দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। চলতি বছর কোনো উপকরণ কেনা হয়েছে কিনা প্রশ্নে সহকারী শিক্ষক সায়মা সুলতানা বলেন, এখনও কেনা হয়নি।
একই অবস্থা চরমছন্দ মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। চলতি অর্থবছরে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষা উপকরণ না কেনার কারণ সম্পর্কে সহকারী শিক্ষক সখিনা খাতুন বলেন, ‘রনি স্যার (উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কুশল আহম্মেদ রনি) পরে কিনে দেবেন বলে জানিয়েছেন।’
শিক্ষা উপকরণ কেনা হয়নি চরমছলন্দ কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী বলেন, ‘খুব অল্প দিনের মধ্যেই কিনে ফেলব।’
সম্প্রতি উপজেলার আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে চলতি অর্থবছরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা উপকরণ কেনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে শিগগিরই উপকরণ কেনা হবে বলে সমকালকে জানান প্রত্যেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
এর মধ্যে রয়েছে বাগবাড়ি-১ ও বাগবাড়ি-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডুবাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাতলাসী নায়েব আলী প্রধান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেদনারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমাতুরেরটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টাঙ্গাব দক্ষিণ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছোট বারইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাকুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চান্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টাঙ্গাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বারইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আঙ্গারী-১ ও আঙ্গারী-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সবুজ মিয়ার ভাষ্য, স্লিপের টাকায় দামি চেয়ার বানানো উচিত না। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে এই টাকা ব্যবহার করা উচিত। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল মালিক বলেন, খোঁজ নিয়ে অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।