সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



শিক্ষার চেয়ে ভিক্ষায় আগ্রহ বরিশালের পথ শিশুরা
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১:১৭ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

শিক্ষার চেয়ে ভিক্ষায় আগ্রহ বরিশালের পথ শিশুরা

শিক্ষার চেয়ে ভিক্ষায় আগ্রহ বরিশালের পথ শিশুরা
সুমাইয়া জিসান।।

শিক্ষার চেয়ে ভিক্ষায় বেশি আগ্রহ বরিশালের পথ শিশুরা। স্কুল ফাঁকি দিয়ে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন ভিক্ষা করছে অনেক পথ শিশু। এদের ভিক্ষা চাওয়ার আবদারের বিব্রত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বাধ্য হয়ে ৫/১০ টাকা ধরিয়ে দিচ্ছেন পথ শিশুদের। কেউ বা আবার পড়াশুনা কথা জিজ্ঞেস করলে টাকা নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। কাজের কথা বললে উল্টো কথা শুনিয়ে চলে আসছে। এদের প্রতিকারে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কতৃপক্ষ। তাই দিন দিন বেড়েই চলেছে শিশু ভিক্ষুকদের সংখ্যা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশালে করোনার পরে নাম মাত্র স্কুলে যাচ্ছে এক শ্রেণীর শিশুরা। তারা স্কুল-মাদ্রাসার নাম করে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করছে। যা টাকা পাচ্ছে তা দিয়ে কেউ সংসার চালাচ্ছে, কেউ নেশা করছে, কেউ মোবাইলে জুয়া খেলছে, কেউ আবার খাবার কিনে খাচ্ছে । এমন চিত্র নগরীর প্রান কেন্দ্র সদর রোডথেকে শুরু করে গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে। যে কারনে কিছু স্কুল ও মাদ্রাসা গুলোতে শিশু শিক্ষার্থীদের উপস্থিত খুব কম। বেসরকারি সংস্থার তথ্য মতে বরিশালে শিশু ভিক্ষুকেদের মধ্যে ৪-৬ বছরের শিশু রয়েছে 30 শতাংশ, ৭-১০ বছরের রয়েছে ৪৫ শতাংশ, এবং ১১-১৩ বছরের রয়েছে ২৫ শতাংশ, যাদের মধ্যে মেয়ে শিশু ৩৫ শতাংশ ছেলে শিশু ৫০ শতাংশ এসব শিশুর বেশির ভাগই তথা ৬৭ দশমিক ২০ শতাংশ লেখাপড়া জানে না। বাকিদের মধ্যে ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ দ্বিতীয় শ্রেণি ও ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করছে। অন্যান্য অর্থাৎ মাদরাসার পড়া আছে ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ভিক্ষাবৃত্তিতে আসার আগে কোনো কিছুই করত না এমন শিশু ভিক্ষুকের সংখ্যা বেশি অর্থাৎ ৩৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। প্রথম থেকে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। ভিক্ষাবৃত্তির আগে ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ গৃহকার্যে, ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ লেখাপড়া ও পথশিশুর কাজে ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ শিশু যথাক্রমে হোটেল ও ভাঙারির কাজে নিয়োজিত। করোনার কারনে সংসারে টানাটানিতে আর বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুবাদে শিশুরা ভিক্ষায় ঝুঁকছে। সূত্র জানায়, বরিশালের বস্তি থেকে শুরু করে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে শিশুদের বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ২/৩ বেলা ফ্রি খেয়ে বাহিরে বের হয়ে ভিক্ষা করে টাকা উপার্জন করে। এর ফলে অনেক শিশুদের এটা নেশায় পরিনতি হয়। নেশা দিয়ে বর্তমানে পেশায় পরিনতি হয়েছে। বিশেষ করে অনেক মাদ্রাসা চলাকালীন সময় শিশুদের দিয়ে ভিক্ষা করান কতৃপক্ষ যার প্রমান ও রয়েছে বরিশালে। এই ভিক্ষার টিকা দিয়ে অনেক শিশুরা নেশার দ্রব্য কিনে সেবন করছেন। সেন্টার গুলোতে ফ্রি খেয়ে রাতে নেশা করে রাস্তায় মাতলামি করছে। এমন চিত্র বরিশালে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন। ভিক্ষুক নিরসনের জন্য বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা পুরোপুরি ভাবে নিরসন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু শিশু ভিক্ষুকদের ক্ষেত্রে কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বরিশালে। শিশুরা নিজেদের মতো করে ভিক্ষা বৃত্তি করে জীবন ধারনা করছেন। বরিশালে একটি সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে যারা শিশুদের দিয়ে ভিক্ষা করান। ভিক্ষা করার টাকার একটি অংশ তারা নিয়ে থাকেন। শিশু আইন ২০১৩ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো শিশুকে ভিক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন বা কোনো শিশুর দ্বারা ভিক্ষা করান অথবা শিশুর হেফাজত, তত্ত্বাবধান বা দেখাশোনায় নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি শিশুকে ভিক্ষার উদ্দেশ্যে নিয়োগদানে প্রশ্রয়দান বা প্রদান করেন, তাহলে সেটা অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ অপরাধের জন্য ওই ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা জানান, শিশুদের ভিক্ষা বন্ধে আইন থাকলেও আইনের বাস্তব প্রয়োগ নেই। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে প্রকাশ্য শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহারের ঘটনা ঘটছেই।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সুস্থ-স্বাভাবিক কাজে সামর্থ্যবান মানুষ কাজ না করে শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তির কাজ পরিচালনা করছে। বেসরকারি সংস্থার ভিক্ষাবৃত্তি এক জরিপে দেখা গেছে জরিপে দেখা গেছে ৬ হাজার ভিক্ষুকের একটি তালিকা। ওই জরিপের প্রতিবেদন অনুসারে প্রতিবছর নদীভাঙন, ফসলহানি, দরিদ্র অবস্থায় উপনীত হওয়াসহ নানা কারণে গ্রামের ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী কাজের সন্ধানে বা উন্নত জীবনের আশায় শহরমুখী হচ্ছে। কিন্তু আশানুরূপ কাজের সুযোগ না পেয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত হচ্ছে। এদের একটি বড় অংশ হচ্ছে শিশু৷ এদের ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করছে।
শিশুদের নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার করার জন্য একদিকে যেমন শিশুকে বিকলাঙ্গ করে তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে, তেমনি সুস্থ শিশুকে ভিক্ষার কাজে ব্যবহার করার কারণে তাকে ধীরে ধীরে পরনির্ভরশীল জীবনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এখান থেকে অনেক শিশু দ্রুতই অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। এসব শিশুই পরবর্তী সময়ে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে। তাদের দিয়ে মাদক বহনের ঘটনাও ঘটছে। এ বিষয়ে বি এম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একাধিক শিক্ষক বলেন, শিশুরা অনেক কিছুই জানে না বা বোঝে না। মা-বাবা বা অন্যরা শিশুদের ব্যবহার করে সহানুভূতি আদায় করে ভিক্ষা করছে। শিশুরা ছোট থেকে এ ধরনের কাজে নিয়োজিত থাকার ফলে তারা পরনির্ভরশীল হয়ে ওঠে। পরে তারা এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। শিশুকাল থেকে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত থাকার কারণে তাদের মানসিক গঠন ঠিকমতো হয় না। তাদের সামাকিজীকরণ ব্যাহত হয়। তাদের দিয়ে কেবল ভিক্ষাবৃত্তিই নয়, অনেক অপরাধমূলক কাজও করিয়ে নেওয়া হয়। এই চক্র থেকে শিশুদের বের করে আনতে হলে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। শিশু ভিক্ষুকদের শিক্ষার আলোয় এনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। আইন অনুসারে দোষী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনাও খুব জরুরি। এ বিষয় সুশীল সমাজের একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলতে গেলে তারা জানান, শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি মানবাধিকারের লঙ্ঘন। আমরা কেউ চাই না এরা ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন ধারনা করুক।ভিক্ষাবৃত্তি শিশুদের পেশা হতে পারে না। শিশুদের জন্য এটা একটা অভিশাপ। এই অভিশাপ দিয়ে শিশুদের বের করে আনতে হবে। করে যারা শিশুদের খাবার দিয়ে পড়াশুনা করাচ্ছেন তাদের নজর রাখতে হবে শিশু রাস্তায় বের হয়ে ভিক্ষা করছে কিনা। হাসান নামে এক শিশু বয়স দশ বছর তাকে বিবিড় পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করতে দেখে। সে সময় তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে তার বাবা নেই সে ভিক্ষা করে সংসার চালায়। পাশ দিয়ে অন্য শিশু সাব্বির বলছে না অর বাপে আছে আজকে স্কুলে না যাইয়া ভিক্ষা করছে। এই টাকা দিয়া ড্যান্ডি আর সিগারেট খাইবে। আমি আর ও এক স্কুলে পরি। আমিও নেশা করি ওর লগে। গত তিন চার দিন আগে পলাশপুর মাদ্রাসার কয়েকটি শিশু দল বেঁধে ভিক্ষা করতে দেখা গেছে নগরীতে। তাদেরও একই অবস্থা। এদের মতো অনেক শিশু রয়েছে যারা ভিক্ষায় জড়িত। যাদের বছরের শুরুতে নতুন বইয়ের পাতায় মুখ লুকানোর কথা তারা ভিক্ষার থলি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় পথে পথে। এ বিষয় বিশিষ্ট সংগঠক জীবন কৃষ্ণ দে বলেন, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। এ সব শিশুদের সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। শিশুভিক্ষা ভিত্তি এটা আমাদের সমাজের জন্য কাম্য নয়। এ সব শিশুদের ভালোবাসা দিয়ে সঠিক পথে আনতে হবে। যারা শিশুদের স্কুলে না পাঠিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছে তাদের আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশু আইনে উল্লেখ আছে কোন শিশু ভিক্ষা করতে পারবে না। এ বিষয় জেলাপ্রশাক মোঃ জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন যারা স্কুল ও মাদ্রাসা ফাঁকি দিয়ে ভিক্ষা করছে তাদের ঘরে ফিরানোর দায়িত্ব স্কুল কতৃপক্ষের। এসব শিশুদের সুরক্ষার জন্য ফান্ড আছে। জেলা প্রাথমিকে একজন করে দায়িত্বে রয়েছেন। সেক্ষেত্রে তারা যদি সিরিয়াস ভাবে দায়িত্ব পালন না করে তাহলে তো এ অবস্থা হবেই। এসব শিশুদের সুরক্ষার জন্য প্রথমে কাউন্সিলিং করতে হবে। যে এরা নেশা গ্রস্থ হয়ে পরছে এদের এখন সঠিক পথে পরিচালিত করতে না পারলে ভবিষ্যত প্রজন্ম ধ্বংস হবে। তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শিশু ভিক্ষা বন্ধ করতে হবে। এই বিষয়টি আমার জানা ছিলো না যেহেতু আমি জেনেছি এখন সবার সাথে কথা বলে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে এরা বড় হয়ে বড় ধরনের অপরাধী হিসেবে গড়ে উঠবে।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া