দুবাই যাব! যতবার এই কথাটা মনে হয়েছে, অন্যরকম এক আনন্দে মন ভরে গেছে। কল্পনায় কত যে ছবি এঁকেছি এই সফর নিয়ে, বলে বোঝানো যাবে না। এটি ২০০৯ সালের কথা। সত্যি বলতে কি, তখন পর্যন্ত নিজ দেশেও খুব একটা ঘোরাঘুরি করা হয়নি। তাই শুরুতেই মরু প্রান্তরে ছুটে যাওয়া ছিল স্বপ্নের মতো। এরপর নির্দিষ্ট দিনে উঠি উড়োজাহাজে। বুনতে থাকি কল্পনার দৃশ্যপট।
অবাক হয়েছি, সৌন্দর্য কল্পনাকেও হার মানিয়ে ফেলায়। উটের পিঠে চেপে মরুর বুকে ঘুরে বেড়ানো কী যে মজার- বোঝাতে পারব না। যেদিকে চোখ যায়, শুধু গেরুয়া রঙের বালিয়াড়ি। গাড়ি চড়ে মরুর বুক চষে বেড়ানো, সন্ধ্যায় সবাই মিলে পিকনিকের আনন্দে মেতে ওঠা- সব দৃশ্যই আজও চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এরপর অনেকবার দুবাই যাওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রথম সফরের মতো আনন্দ আজও পাইনি, যা ছিল অন্যরকম।
পাহাড়কন্যা নেপাল মাঝেমধ্যে হাতছানি দিয়ে ডাকে। শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডিতে গিয়ে যে মুগ্ধতা তৈরি হয়েছিল সেটিও কখনও ভুলতে পারি না। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জমা হয়ে আছে অনেক স্মৃতি। মালদ্বীপের নীল জল ছুঁয়ে যে শিহরন জেগেছিল মনে, সেটি এখনও মনে অনুরণন তুলে যায়। মনে আছে, তখন মুম্বাইয়ে শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ করেই জানলাম, দলবেঁধে মালদ্বীপ যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই খবর শুনে আর কি বসে থাকা যায়? যায় না বলেই ছুট দিলাম মালদ্বীপে।
দারুণ একটা সফর ছিল। তবে ঘুরেফিরে কেন জানি ব্যাংককের পাতুম বিচের কথাই মনে পড়ে। অনেক দেশ ঘুরেও পাতুমকে ভুলতে পারি না। যদি কেউ আমার কাছে জানতে চান, কোথায় ঘুরতে যেতে বেশি ভালো লাগে- তাহলে দুটি জায়গার নাম বলব। এক. বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার; দুই. ব্যাংকক। থাইল্যান্ড এমন একটি দেশ, যেখানে প্রকৃতি নানারূপে মুগ্ধ করে। অনেকে বলেন, মালদ্বীপের চোখ ধাঁধানো নীল জল সম্মোহিতের মতো কাছে টেনে নেয়। কথাটা একেবারে ভুল নয়। তবে মালদ্বীপের মতো একই রকম নীল জলরাশি পাতুমেও আছে। যদি খরচের হিসাব-নিকাশ করেন, তাহলে মালদ্বীপের চেয়ে ব্যাংকক ভ্রমণ কোনো দিক থেকেই মন্দ নয়।
যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথাও অনেকদিন মনে রাখার মতো। বছরখানেক আগে ফোবানা সম্মেলনে যোগ দিতে সেখানে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু শুটিংয়ের ব্যস্ততায় ফোবানা সম্মেলনে যোগ দিতে পারিনি। কিন্তু আমেরিকায় পা দেওয়ার সুযোগ ঠিকই পেয়েছিলাম। যেহেতু হাতে কাজ ছিল না, তাই ঘুরে বেড়িয়ে সময় কাটানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। যেটুকু ঘুরেছি তা থেকেই স্পষ্ট হয়েছে, লোকে কেন আমেরিকাকে [যুক্তরাষ্ট্র] স্বপ্নের দেশ বলে। শুধু আমেরিকা নয়, মেক্সিকোতেও যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল একই সফরে। তার আগে দুর্গাপূজায় সময়টা কাটিয়েছি কলকাতায়। শারদ উৎসবের সেই সময়টা দারুণ কেটেছিল। এই যে এত দেশের কথা বললাম, তার সবই সৌন্দর্যের লীলাভূমি। কিন্তু আমার দেশটা যে কত সুন্দর- সেটা হয়তো অনেকেই জানেন না।
যত দেশেই যাই না কেন, মন পড়ে থাকে নিজ দেশে। সুযোগ পেলেই ছুটে যেতে ইচ্ছা করে কক্সবাজার। সৈকতজুড়ে ছুটে বেড়ানো, নীল জলে ডুব দিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠা- এ আর কোথাও পাইনি।