ডাক্তারের নাম মুখে নিলেই রোগীদের গুনতে হয় হাজার টাকা। অনেক সময় টাকা খরচ করলেও মেলে না সঠিক চিকিৎসা। এর মধ্যেই স্বস্তির খবর হয়ে এলো মাত্র এক টাকার চিকিৎসা। তাও টাকা হাতে নেন না চিকিৎসক। মাটির ব্যাংকে টাকা ফেলতে হয় রোগীদের।
এভাবেই রাজশাহীতে এক টাকা ভিজিটে রোগী দেখছেন ডা. সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল। বাবার স্বপ্নপূরণে এক টাকা ভিজিটে চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনি। নামমাত্র টাকায় চিকিৎসা পেয়ে প্রশংসায় ভাসছেন এ নারী চিকিৎসক।
সুমাইয়া রাজশাহী নগরীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান সরকারি কলেজের প্রভাষক মীর মোজাম্মেল আলীর মেয়ে। শিক্ষক মোজাম্মেলের এক ছেলে ও তিন মেয়ে। এর মধ্যে তিন মেয়ে চিকিৎসক আর ছেলে প্রকৌশলী। ২০২০ সালে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করেন সুমাইয়া।
জানা গেছে, রাজশাহীর সাহেববাজারে নিজ বাড়ির নিচতলায় চেম্বার করেন সুমাইয়া। সেখানে ৮ জানুয়ারি থেকে এক টাকা ভিজিটে চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনি। এজন্য পোস্টারও ছাপিয়েছেন। পোস্টারের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন ডা. সুমাইয়া। এরপরেই বিভিন্ন মহল থেকে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়।
পোস্টারে সুমাইয়া লিখেন, ‘মাত্র এক টাকা ভিজিটে রোগী দেখা হয়। রোগী দেখবেন ডা. সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল (এম.বি.বিএস)। রোগী দেখার সময় শনি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। সেই পোস্টারে রয়েছে মুঠোফোন নম্বরও।’
বিষয়টি সবাইকে জানাতে পোস্টারের ছবি নিজের ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি। এতে লেখেন ‘আব্বুর জনসেবার ছোট্ট একটা ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা।’ এরপর সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। সুমাইয়ার স্বামী আবদুর রহিম বিশ্বাসও চিকিৎসক। এছাড়া বেসরকারি ক্লিনিকে ১০০ টাকা ভিজিটে রোগী দেখেন তিনি।
চিকিৎসা নেয়া মিলন প্রসাদ সেন বলেন, লোকমুখে শুনে চিকিৎসা নিতে যাই। তিনি অনেক ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। সবাই প্রশংসা করছেন। এতে গরিব মানুষের অনেক উপকার হবে। তিনি আমার কাছে সব কথা শুনলেন। প্রেশার মেপে ওষুধ দিলেন। কথাবার্তা ভালো বলছেন। চিকিৎসা শেষে ভিজিট দিতে চাইলাম। কিন্তু ব্যাংকে ফেলতে বললেন তিনি।
ডা. সুমাইয়া বলেন, বাবার স্বপ্ন পূরণে কাজ করছি। প্রতি রোগীর থেকে এক টাকা ভিজিট নেয়া হচ্ছে। বিনা পয়সায় চিকিৎসা নিতে রোগীরা ইতস্তত বোধ করবেন। তাই এ সামান্য ভিজিট। আমার অন্য দুই বোন এখন গর্ভবতী। সন্তান প্রসবের পর তারাও এ চেম্বারে বসবেন। আমার মতো অন্য দুই বোনও এক টাকায় সেবা দেবেন।
সুমাইয়ার বাবা মীর মোজাম্মেল আলী বলেন, চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল আমার। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। কিন্তু তিন মেয়ে চিকিৎসক হয়েছে। এখন আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিন মেয়ে এক টাকা ভিজিটে রোগী দেখতে রাজি হয়েছে।