মামলার এজাহার সূত্রে জানাযায়, মহেশখালীর কুতুবজোমের তাজিয়াকাটার মৃত দুদু মিয়ার ছেলে এবাদুল হক ২০২১ সালের ৫ জুন চকরিয়ার শাহারবিল এলাকার মৃত হাবিবুর রহমান ওরফে হাইব্যা চোরার ছেলে নবী হোসেন চৌধুরী ওরফে নইব্যা চোরা তার ভাই লেদু মিয়াসহ ৯ জনকে মহেষ চুরির অভিযোগে আসামি করে মহেশখালী থানায় (৬/২০২১) মামলা করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, এবাদুল হকের পরিবারে ১৮টি মহিষ রয়েছে। তা তাজিয়াকাটায় খামারে রাখা হয়। ২০২১ সালের ৪ জুন ভোররাত ২টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত তার খামার হতে চারটি মহিষ ইঞ্জিন বোটে তুলে নদীপথে এলাকা ত্যাগ করে। তাদের পেছনে বোট নিয়ে এসে দেখতে পান চোরচক্র চকরিয়ার চোরারফাড়ি ঘাটে বোট নোঙর করে মহিষগুলো নিয়ে পাড়ায় ঢুকে পড়ে। একপর্যায়ে তারা মহিষগুলো একটি বাড়িতে ঢুকিয়ে ফেলে। এবাদুল নদীরঘাট হতে তাদের পেছন পেছন গিয়ে সকল দৃশ্য কৌশলে ভিডিও ধারণ করে। পরে স্থানীয় লোকজনকে ভিডিও দেখিয়ে বাড়িটি নবী হোসেন ওরফে নইব্যা চোরার বলে সনাক্ত করার পর চোরদের তথ্য সংগ্রহ করে মামলা করেন। সেই মামলায় কারান্তরীণ আসামি বোট চালক আবুল হাশেম নামে একজন ঘটনায় নবী হোসেন ওরফে নইব্যা চোরার সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ দেন। তখনই উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেন নবী হোসেন। সেই জামিনের সময় শেষ হলে বিগত ১৩ ডিসেম্বর নিম্ম আদালতে জামিনের আবেদন করেন মামলার প্রধান আসামি নবী হোসেন।
সূত্র আরও জানান, ১৫ ডিসেম্বর সেই আবেদন শুনানি করা হয়। জামিন প্রার্থী আসামির পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবীর আবেদনে রাষ্ট্রপক্ষের এপিপি জামিনের বিরোধীতা করেন। হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ, মামলার মূলনথি ও অন্যান্য কাগজাত পর্যালোচনা করে জামিন প্রার্থী আসামির বিরুদ্ধে আঘাত, আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণপূর্বক রাত্রিবেলায় সংগোপনে অনধিকার প্রবেশ করতো বলে মহিষ চুরির অভিযোগ রয়েছে।
ইতিমধ্যে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় পুলিশ রিপোর্ট দাখিল হয়েছে। মামলায় ইতিপূর্বে অপর আসামি আবুল হাশেম অত্র (নইব্যা চোরা) আসামিকে ঘটনায় জড়িত স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। অত্র আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সুনির্দিষ্ট হয়। অধিকন্তু আসামিকে সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের মিস মামলায় আগাম জামিন প্রদানে সম্মত নন উল্লেখে অত্র’ আদালতে আত্মসমর্পন করার নির্দেশনা দেন। এ পর্যায়ে আসামি জামিন পেলে বিচার কার্য ব্যাহত হতে পারে মর্মে আদালতের প্রতীয়মান হয়। সার্বিক পর্যালোচনায় আসামি নবী হোসাইন চৌধুরী ওরফে নইব্যা চোরার জামিনের আবেদন না-মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হলো।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, নবী হোছাইন চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতার তকমায় চলেন। তার বিরুদ্ধে গরু চুরির মামলাও রয়েছে। এলাকায় তাকে ‘নইব্যা চোরা’ হিসেবে সম্বোধন করেন লোকজন। চকরিয়া, লামা, আলীকদম, লোহাগড়া, সাতকানিয়া, পেকুয়া, বাঁশখালী, কক্সবাজারের অন্যসব উপজেলার আতঙ্ক ‘নইব্যা চোরা’র চক্র। কক্সবাজারসহ আশপাশের তিনজেলা দাপিয়ে বেড়ান তার চক্র, এমনটি অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। তার চক্রের সদস্যরা প্রায় প্রতিরাতে কোনো না কোনো এলাকা হতে গরু-মহিষ চুরি করে চকরিয়ার সাহারবিল এলাকার নবী হোসেনের ‘ডেরায়’ এনে মজুদ করেন। বছর দুয়েক আগে গরু চুরি করে কক্সবাজার হতে চকরিয়া ফেরার পথে মহাসড়কের খুটাখালী এলাকায় দুই যুবক গণপিটুনিতে মারা যান। তারা দুজনই নবী হোসেন গ্রুপের সদস্য ও এদের একজন নবী হোসেনের নিকটাত্মীয় বলে সে সময় পরিচয় প্রকাশ পায়।
আবার নবী হোসেন চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য মো. জাফর আলমের নিকটাত্মীয় বলে পরিচিতি রয়েছে। ফলে তার এত অপকর্ম জানার পরও কেউ তার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটিও করতে পারেনি। এবং এখনো পারেন না। এ সবের পরও গত ইউপি নির্বাচনে এমপি জাফরের আশীর্বাদে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরই মাঝে মহেশখালী হতে বেশ কিছু মহিষ চুরি করে আনে তার চক্র। সেই ঘটনায় মামলা করেন চুরি যাওয়া মহিষের মালিল মহেশখালীর বাসিন্দা। এরপর তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালতের জামিনের মেয়াদ শেষ হলে তিনি নিম্ম আদালতে হাজির হয়ে জামিন চান। কিন্তু বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
এসব বিষয়ে কথা বলতে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য মো. জাফর আলমের মুঠোফোনে কল করা হয়। কিন্তু তার ব্যবহৃত মোবাইলটি সুইস অপ থাকায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।