কোভিড-১৯ এর প্রতিটি মাইলফলক স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বিশ্ব কি পরিমাণ মানুষকে হারিয়েছে এবং কি পরিমাণ দুর্ভোগ সহ্য করছে। গত বুধবারই মহামারিতে মৃতের সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অধিক সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং সবচেয়ে বিপজ্জনক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে এমনটা ঘটছে। বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া এই স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে লড়ছে। অন্যদিকে বৃটেন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় যেসব করোনা নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে তার মধ্যে বেশির ভাগই এই ভ্যারিয়েন্ট। অনেক স্থানে টিকা দেয়ার চেয়ে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে এই সঙ্কট শেষ হয়ে যাওয়া এখনও অনেক দূরে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক সম্পাদকীয়তে এ কথা বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, করোনা ভাইরাসে যে পরিমাণ মানুষ বিশ্বে মারা গেছেন তার মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরও বেশি তিনটি দেশের- যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল এবং ভারতের। অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন বেশি মানুষ। মোট মৃতের মধ্যে শতকরা ১৫ ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের। তবে ব্যাপকভাবে টিকা দেয়ার ফলে বর্তমানে এই সংখ্যা কমে এসেছে। কিন্তু যেসব দেশে টিকা নিতে অনীহা আছে অথবা টিকা বিতরণ সীমিত, সেখানে নতুন ঢেউয়ের হুমকি দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে প্রতিদিনের সংক্রমণের দিক দিয়ে ভারতের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইন্দোনেশিয়া। সেখানে বিশেষ করে এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বেডের সংকুলান দিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হিমশিম খাচ্ছে। রয়েছে অক্সিজেনের অপর্যাপ্ত সরবরাহ। হাসপাতালের বিপুল পরিমাণ স্টাফ টিকা নেয়া সত্ত্বেও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অথবা মারা যাচ্ছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, টিকার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। ইসরাইলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মে মাসে বলেছিল যেকোনো করোনা ভাইরাসের স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে শতকরা ৯৫ ভাগ কার্যকর ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা। কিন্তু গত সপ্তাহে তারা বলেছে, সব রকম স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার কার্যকারিতা কমে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬৪ ভাগে।
গত মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনে তৈরি সিনোভ্যাক টিকাকে জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এর পর থেকেই সিঙ্গাপুরে এই টিকা বেসরকারি উদ্যোগে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকারিতা কম বলে টিকাদান কর্মসূচিতে কর্তৃপক্ষ এই টিকা ব্যবহার করছে না। অন্যদিকে এই টিকার দুটি ডোজই হংকংয়ে বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে দক্ষিণ কোরিয়াতে সামাজিক দূরত্বের আইন কঠোর করা হয়েছে। অন্যদিকে টোকিওতে নতুন করে দেয়া হয়েছে জরুরি অবস্থা, যেখানে এ মাসের শেষের দিকে দর্শকশূন্য অবস্থায় হওয়ার কথা রয়েছে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস। কিন্তু নতুন ভ্যারিয়েন্ট যখন ছড়িয়ে পড়ছে, তখন সরকার অপরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে বিধিনিষেধ পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে।
এখন এই মহামারির বিরুদ্ধে মূল চাবিকাঠি হলো টিকাদান। বাড়াতে হবে টিকার উৎপাদন। আরও সমতার ভিত্তিতে করতে হবে বিতরণ। সামলাতে হবে টিকা নিয়ে সংশয়।