শুক্রবার ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   শুক্রবার ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



প্যাকেট মশলার কারনে হারিয়ে যাচ্ছে শিল-পাটা : নেই আগের মত চাহিদা
প্রকাশ: ৮ জুলাই, ২০২১, ৩:৫৮ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

প্যাকেট মশলার কারনে হারিয়ে যাচ্ছে শিল-পাটা : নেই আগের মত চাহিদা

মামুনুর রশীদ নোমানী,নলছিটি থেকে ফিরে :

টুকটুক শব্দ। কারিগর শিল – পাটা তৈরীতে ব্যস্ত। আগের মত নেই চাহিদা। তবে গ্রামের লোকজনের কাছে এখনো শিল – পাটার কদর রয়েছে ফলে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রির ফলে এখনো হারিয়ে যায়নি। হারিয়ে যাওয়ার পথে এ শিল্পটি।

হলুদ বাটো মেন্দি বাটো/বাটো ফুলের মউ,/বিয়ের সাঁজন সাঁজবে কন্যা/গড়ন গাড়ন গোল…। এখন আর বিয়ে বাড়িতে দু‘তিন দিন আগে থেকে হলুদ-মেন্দি বাটা হয়না। কারণ আধুনিকতার যুগে বর্তমানে বাজারে সুদৃশ্য প্যাকেটে হলুদ কিংবা মেহদী বাটা পাওয়া যাচ্ছে। হয়তো আর কিছুদিন পর হলুদের স্প্রে পাওয়া যাবে। কেবল শহরে নয় গ্রাম-গঞ্জেও পৌঁছে গেছে সব ধরণের মসলাজাতীয় প্যাকেট। তাই সময় ও কালের প্রবাহে আটোপৌর বাঙালীর সমাজ ব্যবস্থার পারিবারিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিল-পাটার ব্যবহার।

কালের আর্বতে প্রায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে শহর-বন্দর ও গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিল-পাটা। অথচ একটা সময় ছিলো যখন রন্ধন কাজে শিলপাটা ছাড়া চুলায় হাঁড়ি ওঠতো না। ভোজনরশিক বাঙালীর খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির প্রয়োজনে মসল্লা অপরিহার্য উপকরণ। আর সেই মসল্লা তৈরি করার সহজ ও সুবিধাজনক প্রক্রিয়াটি ছিলো শিল-পাটা। শিল-পাটায় বাটা মসল্লায় রান্না করা মাছ-মাংশ ও তরকারী আজও রসনা বিলাস। প্রতিটি ঘরের গৃহিনীদের শিল-পাটায় মসল্লা বাটা ছিলো নিত্যদিনের কাজ। রান্নার আগেই গৃহিণীরা শিল-পাটা নিয়ে মসল্লা বাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েতেন। কিন্তু হালে কালেভদ্রে চোখে পড়েনা।
তবে গ্রাম-বাংলায় এখনও অনেক ভোজনবিলাসী পরিবার যারা শিল-পাটায় বাটা মসল্লা ছাড়া রান্না খেতে পছন্দ করেন না। চিরায়ত গ্রাম বাংলায় শিল-পাটা নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা কল্পকাহিনী। গ্রামীণ সংস্কৃতির গীত-গানেও রয়েছে শিল-পাটায় মসল্লা বাটার অনেক গীত-সংগীত।

তৈরি মসল্লা বাজারে সহজলভ্যতা ও বাণিজ্যিকভাবে প্রচলন হওয়ায় পাথরের শিল-পাটায় মসল্লা পিষার গুরুত্ব একেবারেই হ্রাস পেয়েছে। গৃহিণীরাও পরিশ্রম থেকে রেহাই পেতে প্যাকেটজাত মসল্লার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

অনেক প্রবীণ সু-গৃহিণীরা জানান,যুগ যুগ ধরে গ্রামাঞ্চলের মানুষ শিল-পাটায় বিভিন্ন ধরণের খাদ্য তৈরির কাজে ব্যবহার করে আসছে। শিল-পাটায় পিষা কাঁচামরিচ ও শুটকি মাছ ও কালজিরার ভর্তার স্বাদ আজও অতুলনীয়। সময়ের প্রবাহে পাড়া-মহল্লার প্রতিটি দোকানে মরিচ, হলুদ ও ধনিয়াসহ নানা মসল্লায় প্যাকেটজাত মসল্লায় বাজার সয়লাব হয়ে আছে। হাত বাড়ালেই মসল্লা পাওয়া যাচ্ছে।

তাছাড়া রয়েছে প্রতিটি এলাকায় হলুদ,মরিচ ও ধনিয়া পিষার হলার মেশিন। তৈরি মসল্লা বাজারে সহজলভ্যতা ও বাণিজ্যিকভাবে মসল্লা ভাঙ্গার হলার মেশিন চালু হওয়ায় পাথরে শিল-পাটায় মসল্লা বাটার গুরুত্ব একেবারেই কমে গেছে।

একসময় দেশের জেলা শহরগুলি ও আশপাশের এলাকায় প্রনিয়ত দেখা মিলতো শিল-পাটা খোদাইকারীর। কাঁধে শিল-পাটা বয়ে নিয়ে খোদাইকারিরা বাড়ির সামনে গিয়ে হেঁকে ওঠতো-“পাটা খোদাইবেন, ডেকছির কান্দা লাগাইবেন” এখন আর সেই হাকডাকের দৃশ্য চোখে পড়েনা। শোনা যায় না বাড়ির আঙ্গিনায় শিল-পাটা খোদাই করার টুকটাক শব্দ।

শিল-পাটার ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় বাধ্য হয়ে অনেক কারিগর পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু অনেক কারিগর উপার্জন কমে যাওয়ার পরেও অনেক বাধা-কষ্ট পেরিয়ে বাপ-দাদার ঐতিহ্য ওই পেশাকে আকঁড়ে ধরে রয়েছে। কাদাচিৎ গ্রামাঞ্চলে তাদের নজরে পড়ে।

দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই শিল-পাটা কিনতে পাওয়া গেলেও বিশেষ করে হার্ডওয়ার সামগ্রী বিক্রি দোকানগুলিতেই শিল-পাটা বিক্রি হয়ে থাকে বেশি।

ব্যবসায়ী সোহেল জানান, দেশে প্রতিটি অঞ্চলে যে হারে আবাসন গড়ে উঠছে সে-হারে রান্না ঘরের একটি অন্যতম মাধ্যম শিল-পাটার চাহিদা বৃদ্ধি পায়নি। আগে যেখানে প্রতিটি দোকানে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩৫টি শিল-পাটা বিক্রি হতো সেখানে এখন লক্ষ্য করা যায় দিনে দু‘একটি বিক্রি হওয়া কষ্টসাধ্য।

তিনি আরও জানান, বাজারে বর্তমানে বড়,মাঝারি ও ছোট আকারের শিল-পাটা পাওয়া যায়। দাম সাড়ে পাচঁ’শ থেকে ছয়‘শত।

বাংলাদেশে অনেক জেলায় শিল-পাটা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য জেলাগুলি হচ্ছে,নলছিটি, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, পঞ্চগড়, কক্সবাজার, নেত্রকোনা।

ভারত থেকে সরাসরি পাথর এনে এসব শিল-পাটা তৈরি করে। তারপর এসব শিল-পাটা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে পাঠায়।
কারখানাগুলিতে শ্রমিকরা কাজ করে ঠিকা হিসেবে অর্থাৎ প্রতি একজোড়া পাটা তৈরি বাবদ মুজুরি পান। প্রতিদিন একজন শ্রমিক কমপক্ষে আট থেকে দশটি পাটা তৈরি করতে পারে। তবে পাটা তৈরি কারখানাগুলিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে।

এক জরিপে দেখা গেছে, শিল-পাটা তৈরির কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা কাজে লাগার দু‘তিন বছরের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অধিকাংশ শ্রমিকরা মাস্কছাড়া শিল-পাটা কাটে। এর ফলে পাথরের কুচি বা ধূলা নাক দিয়ে ফুসফুসে জমা হয়। যক্ষ্মা, ব্রঙ্কাইটিজ ও লিভারের নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
শিল-পাটা তৈরির শ্রমিক জামান বলেন, শিল-পাটার চলন কমে যাচ্ছে বিধায় অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছে। তাছাড়া শিল-পাটা তৈরিতে যে পরিমান পরিশ্রম হয় সেরকম পারিশ্রমিক পাওয়া যায়না।

এদিকে, প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় শিল-পাটার ব্যবহার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। একদিন হয়তো ঐতিহ্যের এই উপকরণটি হারিয়ে যাবে চিরচেনা বাংলার বলয় থেকে।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া