সোমবার ৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ২৩শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   সোমবার ৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ



মরনব্যাধি করোনার প্রভাব ও নানাবিধ সমস্যার আবর্তে ভোলা সহ উপকূলীয় এলাকায় পানের বাজার হারাচ্ছে
প্রকাশ: ১৭ মে, ২০২০, ৪:২৫ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

মরনব্যাধি করোনার প্রভাব ও নানাবিধ সমস্যার আবর্তে ভোলা সহ উপকূলীয় এলাকায় পানের বাজার হারাচ্ছে

সাব্বির আলম বাবু : মরনব্যাধি করোনার প্রভাবে সরকার ঘোষিত লকডাউন সহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অন্যান্য পেশার মানুষের মতো পানচাষীদের মাঝেও চলছে ক্রান্তিকাল। বাজার মূল্যকমে যাওয়া, পান উৎপাদনের কাঁচামালের উচ্চমূল্য, জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব ইত্যাদি কারনে পানচাষীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। প্রচলিত সেই বিখ্যাত গান- ‘ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা পান খাইয়া যাও’ এরমতো বাঙ্গালীর চিরায়ত আতিথীয়েতার প্রকাশ এখন মলিন হয়ে যাচ্ছে। সুপ্রাচীন আমল থেকে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে পান খাওয়ার আমন্ত্রনের রীতি চলে আসছে। এখন রীতি আছে ঠিকই কিন্তু পান খাওয়ার সামর্থ্য যেন ফুরিয়ে যাচ্ছে সবার। উপকূলীয় শত শত কৃষি পরিবার শুধুমাত্ পানচাষের উপর নির্ভরশীল। বর্ষার মৌসুমে অতিবর্ষন, জলাবদ্ধতায় পানের লতার গোড়া পচে যায় আবার শীতের মৌসুমে শুষ্ক ও ঠান্ডার তীব্রতায় পানপাতা হলদে হয়ে ঝরে পরে। যার কারনে ফলন কমে যায় আর পানচাষীদের ভাগ্যে ঘনিয়ে আাসে নির্মম হতাশা। এর প্রভাব পরেছে উপকূলীয় পানের বড় বড় হাটবাজার গুলোতে। উচ্চমূল্যের কারনে পানের ক্রেতারা দিশেহারা। পানচাষীরা বেশীর ভাগই দরিদ্র ও স্বশিক্ষিত। তারা কৃষিকাজে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এখনও পুরোপুরি জানে না। দেশের অন্যতম প্রধান এই অর্থকরী ফসল পানের উৎপাদনের অন্তরায় হচ্ছে প্রয়োজনীয় উপকরনের ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধি এবং প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনের ফলে বহু পানের বরজ নদী গর্ভে বিলীন হয়। সেই সাথে স্বপ্ন ভেঙ্গে বেকার ও নিঃস্ব হয়ে পরেছে বহু কৃষি পরিবার। বাধ্য হয়ে অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উপকূলীয় এলাকার পান বাজার ভীষন মন্দা। ফলন কমার পাশাপাশি পান উৎপাদনের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সমস্যার সৃস্টি হয়েছে। পাইকারী বাজারে বিগত কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রতি গাদি (৮০ বিড়া) পানের দাম বেড়েছে ১০/১২ হাজার টাকা। যেখানে প্রতি গাদি পান মান ভেদে আগে বিক্রি হতো ১২/১৫ হাজার টাকা বর্তমানে তা ২০/২৫ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খুচরা বাজারেও পানের দাম চড়া। প্রতি বিড়া ভালো মানের পানের দাম ৫০০/৫৫০ টাকা, মাঝারী মানের পানের দাম ৩০০/৩৫০ টাকা, ছোট পান ১৫০/২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হয়েছিল। পানচাষী রাধুচরন মাঝি জানান, তার ৪০০ খান পানের বরজ। এই বরজই তার জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায়। পান চাষের উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও উপকরন না পাওয়ায় তার ফলন কম। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অতিবর্ষনে তার বরজের অনেক পানের লতায় জলাবদ্ধতা হয়ে পচে গেছে। এই প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করে তার মতো দরিদ্র চাষীর নতুন করে পানের বরজ বা লতা তৈরী করা সম্ভব না। আরেক পানচাষী জাকির হোসেন জানান, তার ২০০ পানের বরজ। পান চাষের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় উপকরনের দাম দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় তার খুবই সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া কোন এনজিও বা সরকারী প্রতিষ্ঠানের ঋন তিনি পাননি। পানচাষীদের সাথে আলাপকালে আরো জানা যায়, পান চাষের প্রধান উপকরন উঁচু জমি, বাঁশ, নলখাগড়া, সরিষার খৈল, গোবর, তিলের খৈল, সুতা ইত্যাদি। এগুলো বর্তমান বাজারে উচ্চ মূল্যের কারনে ঠিক সময় মতো সংগ্রহ করে পানের পরিচর্যা করতে কৃষকদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। অপর পানচাষী সুবল কর্মকার জানান, সাধারনত পানের তিন প্রকার রোগ যেমন- ছর্মা, কালিয়ারা ও মোদিয়া থেকে তাদের সতর্ক থাকতে হয়। এসব রোগের প্রতিকার ব্যয়বহুল ও কস্টসাধ্য। বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব হয়ে বিভিন্ন খাতে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে নানামূখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এছাড়া কৃষিজাত বিভিন্ন আধুনিক উপকরনাদিও কৃষকদের কল্যানে সুলভ মূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু অতিব দুঃখের বিষয় পানচাষের উন্নয়নে সরকার উদাসীন। অথচ দেশের অর্থনীতির বড় যোগানের একটা অংশ আসে পানের মাধ্যমে। যার প্রমান মেলে গ্রামাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকার চাষীদের সাথে কথা বলে। দেশে বিভিন্ন জাতের পান চাষ করা হয়। এর মধ্যে বাংলা, মিঠা, সাচি, কার্পুরী, গ্যাচ,নাতিয়াবসুত, মাখি, উজানি, বরিশাল, দেমী, ঝালি ইত্যাদি উল্লেখ যোগ্য। তবে বর্তমানে নানারকম রোগ প্রতিরোধে সক্ষম বারিপান-১,২,৩ তিনটি পানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। পানচাষী রতন মাঝি জানান, পান চাষ করতে একজন চাষীর নুন্যতম ৪০ শতাংশ জমি এবং গড়ে দৈনিক ২/৩ জন শ্রমিক খাটাতে হয়। এ সকল শ্রমিকের দৈনিক মুজুরী জনপ্রতি ৪০০/৫০০ টাকা। পান চাষের সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে একজন কৃষকের মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে। বেশীর ভাগ কৃষক জানান, দেশের দক্ষিনাঞ্চলের পানের ঐতিহ্য এখন ধরে রাখা কঠিন হয়ে পরেছে। রোগ বালাই, বৈরী আবহাওয়া, লতাপচা, পাতাপচা, কাঁচমালের মূল্যবৃদ্ধি, বাজারে কম দাম সর্বোপরি করোনা রোগের প্রাদুর্ভাবের কারনে পানের বাজারে ধ্বস লেগেছে। বর্তমানে পানের আবাদ বাড়লেও কৃষি বিভাগ থেকে কোন ঋন, সার, কীট নাশক ইত্যাদি সুবিধা দেয়া হয় না। এ ধরনের নানা অসুবিধা কাটিয়ে উঠার জন্য সকল পান চাষীদের একটাই দাবী সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলো যেন সহজ শর্তে ঋন প্রদানের মাধ্যমে তাদের ভাগ্য উন্নয়নে এগিয়ে আসে পাশাপাশি আধুনিক কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি দিয়ে তাদের পান চাষে আরো উদ্বুদ্ধ করে পানের অধিক উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে আরো অবদান ও সমৃদ্ধ করতে পারে।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: nomanibsl@gmail.com

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া