রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



ব্যবসায়ীকে ফাঁসিয়ে ২ কোটি টাকা ঘুস চাইলেন ইউএনও
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৮:৩৮ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

ব্যবসায়ীকে ফাঁসিয়ে ২ কোটি টাকা ঘুস চাইলেন ইউএনও

আকতার ফারুক শাহিন :

ব্যবসায়ীকে ফাঁসিয়ে ২ কোটি টাকা ঘুস দাবির অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড এসেছে । রেকর্ডে শোনা যাচ্ছে ব্যবসায়ী মাইদুল ইসলাম শাওনের কাছে ২ কোটি টাকার চেক চাইছেন ইউএনও মাশফাকুর।

উত্তরে শাওন ১০-১৫ লাখ টাকা দিতে চাইলে নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন তিনি। এ বিষয়ে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শাওন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ৩ সদস্যের কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন। ১২ সেপ্টেম্বর গঠিত কমিটিকে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যের ঘর নির্মাণে দুর্নীতির টাকার ভাগ নিয়ে বিরোধে এসব ঘটেছে। যে কারণে গৃহনির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দ এবং ব্যয়সহ আরও কয়েকটি খাতের ব্যাংক হিসাব বিবরণী চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে ইউএনও মাশফাকুরকে। এসব অভিযোগ অবশ্য স্বীকার করেননি মাশফাকুর। নিুমানের কাজ এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ধামাচাপা দিতে শাওন মিথ্যা রটাচ্ছে বলে দাবি তার।

জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ এবং যুগান্তরকে দেওয়া বক্তব্যে শাওন বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে দরিদ্রদের ২ শতাংশ জমিসহ ঘর করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রাঙ্গাবালীর জন্য বরাদ্দ আসে ১ হাজার ৮৮৫টি ঘর। এর মধ্যে ১ হাজার ৪শর মতো ঘর তৈরির সামগ্রী ও শ্রমিক সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। টিন সরবরাহের দায়িত্ব অবশ্য দেওয়া হয়নি। প্রথম ধাপে ঘরপ্রতি বরাদ্দ আসা ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে টিন বাবদ ৩৫ হাজার টাকা রেখে ১ লাখ ৪০ হাজার করে দেওয়া হয় তাকে। একইভাবে দ্বিতীয় ধাপে বরাদ্দের ২ লাখ টাকার মধ্যে ৪৬ হাজার এবং তৃতীয় ধাপে ঘরপ্রতি বরাদ্দের ২ লাখ ৬৫ হাজারের মধ্যে ৬৭ হাজার করে টাকা নিজের কাছে রেখে দেন ইউএনও। কাজ শুরুর প্রথমে চুক্তি করার প্রয়োজন দেখিয়ে শাওনের স্বাক্ষর সংবলিত ১০০ টাকার ৩টি সাদা স্ট্যাম্প এবং জামানত উল্লেখ করে রূপালী ব্যাংক বাহেরচর শাখার সইসহ একটি ব্ল্যাঙ্ক চেকও নেন তিনি। কাজ শেষে চেক ফেরত চাইলে হারিয়ে গেছে বলে জানান মাশফাকুর। চেক হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে রাঙ্গাবালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পাশাপাশি ব্যাংকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানান শাওন। চলতি বছরের ১২ জুলাই ওই জিডি করার একদিন পর ঢাকার কেরানীগঞ্জ শাখা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে ৪ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার টাকা দাবির বিপরীতে জমা হয় আলোচ্য চেকটি। ক্লিয়ারেন্সের জন্য রূপালী ব্যাংকে এলে পূর্বনির্দেশনা অনুযায়ী তা ফেরত পাঠান ব্যাংক ম্যানেজার ইকবাল মাহমুদ।

ক্লিয়ারেন্সের জন্য ব্যাংকে আসা চেকের বিষয়ে বাইরের কারও কিছু জানার কথা না থাকলেও রহস্যজনকভাবে খবর পৌঁছে যায় ইউএনও মাশফাকুরের কাছে। তিনি ব্যাংক ম্যানেজারকে ফোন করে প্রতিবেদনে ইনসাফিশিয়েন্ট ব্যালান্স লেখার জন্য চাপ দেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে ইনসাফিশিয়েন্ট ব্যালান্স লেখার জন্য চাপ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন ইকবাল। ৪ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করে ওই চেকটি জমা দেয় কেরানীগঞ্জের মৃধা স্টিল নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক বাবুল মৃধার বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়। পরে তিনি শাওন এন্টারপ্রাইজের নামে একটি উকিল নোটিশ পাঠান। বিষয়টি জানাজানি হলে খোঁজখবর নিতে শুরু করে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তারা মৃধা স্টিলের মালিক বাবুল মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রাথমিক পর্যায়ে টিন সরবরাহ বাবদ শাওনের কাছে টাকা পাবে দাবি করলেও প্রায় ৫ কোটি টাকা পাওনা বিষয়ে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি বাবুল। পণ্য সরবরাহের বিপরীতে পূর্ববর্তী লেনদেন কিংবা শাওনের সঙ্গে যোগাযোগেরও কোনো প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন তিনি।

শাওনের অভিযোগ, পুরো বিষয়টিই আসলে ইউএনও’র ষড়যন্ত্রের অংশ। বাবুল মৃধার সঙ্গে তার কোনো ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল না। কেন ইউএনও এটা করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘর তৈরি প্রশ্নে বেশ কিছু জটিলতা করেন ইউএনও। ৫৫টির মতো ঘর তিনি তৈরি করেননি। অথচ এসব ঘর তৈরির টাকা তুলে নেন সরকারি হিসাব থেকে। ঘরপ্রতি ৩৫, ৪৬ এবং ৬৭ হাজার টাকা করে নিজের কাছে রাখার পর এর মধ্যে কিছু টাকা দিয়ে টিন কিনে বাকিটা নিয়ে নেন তিনি। যারা ঘর পাবে তাদের ২ শতাংশ করে জমির মালিকানা দেওয়ার রেজিস্ট্রি বাবদ প্রায় ২০ লাখ টাকাও আত্মসাৎ করেন। যেসব ঘর তৈরি হয়েছে তার মধ্যে মেঝে ঢালাই না করা, নিুমানের টিন এবং দরজা-জানালায় নিুমানের সামগ্রী ব্যবহার করেন। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ উঠলে জেলা প্রশাসনের তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলে। এরপর তাকে বলা হয় ত্রুটি দূর করতে। ত্রুটি দূর করতে গিয়ে বেশ কিছু বাড়তি টাকা খরচ হয় তার। নিজের অংশ থেকে বাড়তি খরচ হওয়া সেই টাকা তিনি আমার কাছে দাবি করেন। দিতে অস্বীকৃতি জানালে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন। পরে এভাবে চেক জমা দিয়ে বিপদে ফেলেন। আমি যখন তার কাছে সাহায্য চাই তখন তিনি আমার কাছে ২ কোটি টাকা চান।’

শাওনের এসব বক্তব্যের প্রমাণ মেলে পটুয়াখালী প্রশাসন থেকে ইউএনও মাশফাকুরকে দেওয়া দুটি চিঠিতে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ওবায়দুর রহমানের দেওয়া চিঠিতে ৫৫টি ঘরের নির্মাণ বাবদ ১ কোটি ৪২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা আছে কিনা তা জানাতে বলা হয় মাশফাকুরকে। একইদিনে পাঠানো আরেকটি চিঠিতে ঘর পাওয়া লোকজনের নামে বরাদ্দকৃত জমির কবুলিয়াত (দলিল রেজিস্ট্রি) সম্পন্ন প্রশ্নে বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যাংক বিবরণীও চাওয়া হয়। এছাড়া রাঙ্গাবালী উপজেলায় নির্মিত সরকারি বরাদ্দের ঘর নির্মাণে ত্রুটি কিংবা অনিয়ম হয়েছে কিনা তা পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলা হয় সিনিয়র সহকারী সচিব মো. কামরুল হাসানকে। ব্যবসায়ী শাওনের করা অভিযোগ তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) প্রধান করে গঠন করা হয় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, ‘ঘর তৈরি প্রশ্নে বরাদ্দের বড় একটি অংশ যে আত্মসাৎ হয়েছে সেটা পরিষ্কার। যে কারণে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে পদোন্নতি পাওয়ার পরও রাঙ্গাবালী থেকে অবমুক্ত হতে পারছেন না মাশফাকুর। তাছাড়া ঘর তৈরি না করেও টাকা উত্তোলন এবং তদন্ত শুরু হওয়ার পর পুনরায় ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টারও প্রমাণ মিলেছে।’ জানতে চাইলে মাশফাকুর বলেন, ‘মান্তাদের ৩০টি ঘর দিয়েছিলাম। পরে ডিসি স্যার বলেছেন, আলাদা করে ঘর দেওয়া যাবে না। ওই ৩০ ঘর বাবদ ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা শাওনের কাছে ফেরত চাওয়া হয়েছে। সে ৩০ লাখ টাকা দিয়েছে। এছাড়া ৮শ ঘরের কবুলিয়ত হয়েছে। ওই ৩০ লাখসহ কবুলিয়াতের বাকি টাকা ব্যাংকে আছে। শাওন কাজে গাফিলতি করেছে। ক্ষতিপূরণ চাওয়ায় মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে। চেকের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তাছাড়া কিসের অডিও রেকর্ড রয়েছে? আমার কাছে না জানিয়ে কিছু রেকর্ড করা হলে তা বেআইনি। আমি কেন ২ কোটি টাকা চাইব? তদন্তেই সব বেরিয়ে আসবে। সব ধরনের হিসাব সংরক্ষিত আছে। কোনো অনিয়ম হয়নি।’

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘তদন্ত কমিটি কাজ করছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া