মোঃ নুরুজ্জামান, বাউফল প্রতিনিধিঃ ফুলে-ফুলে ভরে গিয়ে তরমুজ গাছে ফল পড়বে আসা চাষিদের । আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে আবাদও। সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে বাম্পার ফলনের। তবে সার-ওষুধের দাম বৃদ্ধি আর ফাল্গুনেও ঘনকুয়াশায় চিন্তিত রাঙ্গাবালীর কাউখালীর চর সহ পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীর চরঈশান, বাসুদেবপাশা, চরকচ্ছবিয়া, চরওয়াডেল, রায়সাহেবের চর, চরশৌলাসহ বিভিন্ন চরের বাঙ্গি, ক্ষীরা ও তরমুজ চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন রবি ফসলের সঙ্গে চলতি মৌসুমে ৫০ হেক্টরে ক্ষীরা, ৪০ হেক্টরে বাঙ্গি ও ৩০০ হেক্টরে তরমুজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। তবে তরমুজে এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে ৫শ’ হেক্টরেরও ওপরে। আগেরবার আবহাওয়া অনুকলে না থাকায় লাভের মুখ দেখেননি তরমুজ চাষিরা তবে এবছর ফল আসছে না তাই চাষিরা চিন্তিত । পাশের উপজেলা রাঙ্গাবালী সহ গলাচিপার চরকাজল ও ভোলা জেলার চরফ্যাশনের নুরাবাদ থেকে এসেও কয়েক চাষি এবছর উপজেলার বিভিন্ন চরে বাঙ্গি, ক্ষীরা ও চরমুজের চাষ করছেন।
তেঁতুলিয়ার বুক চিরে জেগেওঠা চরকচ্ছবিয়ায় তরমুজ চাষের দীর্ঘ ১৫-১৬ বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাচ্ছেন পাশের গলাচিপা উপজেলার চরকাজলের চাষি । প্রায় ২৫ একর জমি লীজ নিয়ে সামান্য ক্ষীরা, শসাসহ সিনজেনটার ড্রাগন ও সুপ্রিম সীডসের হীরা জাতের তরমুজের চাষ করেছেন তিনি। অতিজোয়ার, লবন পানির হানা আর একই জমিতে বারবার কীটনাশক ও সার-ওষুধ ব্যাবহারের কারণে নিজ এলাকায় আগেরমতো এখন আর তরমুজের ভাল ফলন না মেলায় চরকাজল থেকে এসে এই চরে তরমুজ চাষের কারণ উল্লেখ করেন তিনি। চাষির কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন স্থানীয় বিভিন্ন চরের তরমুজ চাষিরা।
স্থানীয় রাঙ্গাবালী কাউখালির চাষিরা বন্দর থেকে বীজ সংগ্রহ করে একই চরে কয়েক একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন ভুয়ের আওলা গ্রামের মোঃ মিজানুর রহমান । বৃস্টি কারনে দেঁড়ি হওয়ায় চাষে কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও ইতোমধ্যে তরমুজ গাছ বেড়ে ফুলে-ফুলে ভরে উঠবে বলে আশায় চাষি । ড্রাগন জাতের ১০০ গ্রামের প্যাকেট বীজ ২ হাজার ২শ’ ৩০ টাকা নির্ধারিত মুল্যের বীজ সংগ্রহে ২ হাজার ৮শ’ টাকা । বাজারে হীরা জাতের তরমুজের ১০০ গ্রাম ওজনের বীজ কিনেছেন আড়াই হাজার টাকায়। বীজ সংগ্রহে আগের মতো সিন্ডিকেটের কারসাজি না থাকলেও এখন বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে জানান চাষিরা। বিভিন্ন চরে এবার তরমুজের চাষ বেড়েছে উল্লেখ করে আরো জানান, বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ৮শ’ ৫০ টাকা মুল্যে ইউরিয়া সার পাওয়া গেলেও ড্যাব সার কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ১শ’ টাকা মুল্যে।
একই চরে পাশের গ্রামের তরমুজচাষি জানান, ধান চাষে এখন আর লাভের মুখ দেখা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তণের কারণে দিন দিন কৃষিতে বিপদ-আপদ বাড়ছে। ফাল্গুনেও ঘনকুয়াশা থাকে। তবে এ বছর গাছের লক্ষ্মন ভাল। রোগবালাই আর আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে চাষিরা বাম্পার ফলন পাবেন বলেও জানান তিনি। পাশের ভোলা থেকে আসা চরএলাকায় তরমুজ চাষিরা জানান, তরমুজের প্রতি মাদায় ১২ গ্রাম এমওপি, ৫-৭ গ্রাম ইউরিয়া, ১শ’ ৭০ গ্রাম টিএসপি, ১৫ গ্রাম ড্যাবসহ গ্রোজিন, সিনজেনটার ক্যারাটে, ম্যাগমা, থিউবিট, ভর্টিমেঘ ও স্কোরের মতো কীটনাশক ব্যাবহার করতে হয়েছে। আর চাষের খরচসহ এসব মিলে মাদা প্রতি ইতিমধ্যে প্রায় ৫০-৬০ টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। চাষের শুরুতে ড্যাব সারের বস্তা ১৩শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা ছিল। মাঝে এই দাম ৯শ’ থেকে ১ হাজারে নামলেও এখন বস্তাপ্রতি ১ হাজার ১শ’ টাকা রাখা হচ্ছে। তবে খরচ যাই হোক রোগবালাই আর অতিজোয়ার কিংবা শীলা-বৃষ্টির মতো বৈরী আবহাওয়া না হলে তরমুজের বাম্পার ফলনের আশা করছেন এসব চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা জানান, ‘লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবছর তরমুজের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। অফিসের লোকজন নিয়মিত মাঠে ছুটে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এ সময়ের কুয়াশায় তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে চাষিরা বাঙ্গি, ক্ষীরা ও তরমুজের বাম্পার ফলন পাবেন।’