১৩১ বছর আগে এমন কিছু ঘটেছিল। প্রথম ইনিংস ৭০ রানের কম করেও ম্যাচ জিতেছিল কোনো দল। সে রেকর্ড আর কখনো দেখা যাবে না বলেই মনে হচ্ছিল। ৩৫৯ রানের লক্ষ্যে ২৮৬ রানে ইংল্যান্ড ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর তো অবশ্যই! কিন্তু সব বাস্তবতা উল্টে দিয়ে একাই ম্যাচ জিতিয়ে এনেছেন স্টোকস। দশম উইকেট জুটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তোলার রেকর্ডে অন্য প্রান্তে থাকা লিচের অবদান ১। ‘একাই এক শ’র এর চেয়ে ভালো উদাহরণ কী হতে পারে?
প্যাট কামিন্সকে চার মেরে ইতিহাস রচনা যখন করলেন স্টোকস, অন্য প্রান্ত থেকে ছুটে এসে তাঁর গালে চুমু একে দিলেন লিচ। ক্রিকেট মাঠে বিরল এ উদযাপনকে স্মরণীয় করে রাখলেন স্টোকস নিজেই, ‘আমার জীবনের সেরা চুমু এটি!’ জীবনের সেরা ইনিংস খেলার পর এমন কিছু তাঁর প্রাপ্য বটেই।
ইনিংসটি কেমন ছিল, সে বর্ণনা জানতে চাইলে যেতে হবে অ্যাশেজের উইকিপিডিয়াতে। হেডিংলি টেস্টের ফল আসার সঙ্গে সঙ্গে কোনো এক রসিক ব্যক্তি গিয়ে অ্যাশেজের বর্ণনায় লিখে দিয়েছেন, ‘অ্যাশেজ হলো সে টেস্ট সিরিজ যা অস্ট্রেলিয়া ও বেন স্টোকসের মধ্যে খেলা হয়।’ আসলেই তো তা–ই! আজ ইংল্যান্ড যে এভাবে জিতল তাতে কিছুটা ভাগ্য, কিছু আম্পায়ার জো উইলসনের অবদান হয়তো থাকতে পারে। আর বাদবাকি সবটুকু স্টোকসের অবদান।
জয়ের জন্য শেষ উইকেটে দরকার ৭৩ রান, এমন অবস্থাতেও কীভাবেই না খেললেন! ৪৫ বলে ৭৪ রান। এর মাঝে শুধু ৭টি ছক্কা ও ৪টি চারই নয়, আছে গুরুত্বপূর্ণ সব ডাবলস এবং অতি আবশ্যক ওভারের পঞ্চম বলেই নেওয়া সিঙ্গেল। ম্যাচ শেষে টেল এন্ড নিয়ে এভাবে ব্যাট করার শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাটা স্টোকসই পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘লিচ যখন এল উইকেটে, তখন জানতাম কী করতে হবে। শুধু বলছিলাম পাঁচ আর এক। লিচ এর আগেও করেছে এটা, নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে নেমে ৯২ রান আছে তাঁর। তাই আমি ওকে সাহস দিয়েছি। শেষ দিকে তো আমি তাকাতেই পারছিলাম না।’
স্টোকস নিজে তাকাতে না পারলেও সবাইকে বাধ্য করেছেন টিভি স্ক্রিনের দিকে চোখ রাখতে। লিচ নামার পর ম্যাচটা খুব দ্রুত শেষ হবে, বোঝাই যাচ্ছিল। সেটা দ্রুতই শেষ হয়েছে, শেষের ৭৬ রান মাত্র ১০ ওভারেই নিয়েছেন স্টোকস। দিনের শুরুতে অন্য পরিকল্পনা নিয়ে নামলেও প্রয়োজনের মুহূর্তে সঠিকভাবে গিয়ার বদলে নিয়েছেন স্টোকস, ‘যদি রান তুলতে সারা দিনও লাগত, আমি তা করতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু লিচ নামার পর বুঝলাম, আমাদের দ্রুত শেষ করতে হবে। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলগুলো লিচ খেলেছে। সেভাবে এটা করল, যেটা অসাধারণ।’
লিচ যা করেছেন সেটা অসাধারণ, মানতেই হয়। অমন পরিস্থিতিতে ১৭ বল টিকেছেন। বারবার বাউন্সারেও শিট খেলার প্রলোভন সামলেছেন। কিন্তু স্টোকস যা করলেন তার বর্ণনা তাহলে কীভাবে দেবেন? ভিমানির সুরে তাই প্রশ্ন রাখতেই হচ্ছে, ‘বেন স্টোকস, আপনি কি মানুষ?’