বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী হওয়ার অন্যতম মাধ্যম হাঁসের খামার
প্রকাশ: ৬ জুলাই, ২০২০, ৪:০১ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
সাব্বির আলম বাবুঃ
বিশ্বব্যাপী প্রানঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রকোপের ক্ষতিকর প্রভাবের মতো বাংলাদেশেও এর ছোঁয়া লেগেছে। দেশজুড়ে গার্মেন্টস ও বেসরকারী সংস্থাগুলো গণহারে কর্মী-শ্রমিক ছাঁটাইয়ে বেকার যুবকদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কর্মসংস্থান না থাকায় তারা নিজের ও পরিবারের খরচ চালাতে হিমসিম খাচ্ছে। তাদের মাঝে হতাশা-বিষন্নতা ডুবে কেউ মাদকাসক্ত হচ্ছে আবার কেউ বিপথগামী হওয়ার দিকে এগুচ্ছে। এসকল বেকার যুবকদের নিজেদের কর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য হাঁসের খামার হতে পারে আশার আলো। আমাদের দেশের আবহাওয়া হাঁস পালনের জন্য উপযোগী বিধায় দিন দিন এ ব্যবসায় আগ্রহী হচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যুবকরা। সাধারনত প্রাকৃতিক ভাবে আমাদের দেশে প্রচুর নদী-নালা-খাল-বিল-পুকুর সহ অনেক জলাশয় রয়েছে। এগুলো হাঁস চড়ে বেড়ানো জন্য প্রয়োজনীয়। তাছাড়া প্রাকৃতিক এরকম সুযোগ সুবিধা পাওয়ায় হাঁস পালনে খরচও কম। অপর দিকে হাঁস পালন করলে সমন্বিত চাষও করা যায়। যেমন- কোন পুকুর বা জলাশয়ে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করলে সেই পুকুরের পানির উপর মাচার মাধ্যমে ঘর তৈরী করে হাঁস পালন করলে মাছ চাষের জন্য বাড়তি সার ও খাদ্য দিতে হয় না এবং হাঁসের বিচরন ও পুকুরে সাঁতার কাটার ফলে মাছের পর্যাপ্ত ব্যায়াম হয় ফলে মাছ তারাতারি বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া হাঁসের তুলনামুলক রোগবালাইও কম। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশী মুরগী যেখানে বছরে গড়ে ৫৫-৬০ টি ডিম দেয় সেখানে দেশী হাঁস বছরে গড়ে ৯০-৯৫ টি ডিম দেয় এবং জাত হিসাবে সেই ডিমের আকার-আকৃতিও ছোট বড় হয়ে থাকে। দেশী হাঁস ছাড়াও বিভিন্ন উন্নত জাতের হাঁস বছরে ২৫০-৩০০ টি ডিম দিয়ে থাকে। খামারী আবু সিকদার জানান, হাঁস বিভিন্ন পদ্ধতিতে পালন করা যায় যেমন- মুক্ত জলাশয়ে অথবা নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ অবস্থায়। পরিকল্পিতভাবে এ সকল পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হয়। হাঁস খামারী ইউনুস জানান, হাঁস পালনে প্রথমে জায়গা ও জলাশয় নির্বাচন করে উন্নত জাতের হাঁস সংগ্রহ করতে হবে। যেমন- খাকি ক্যাম্পবেল, ইন্ডিয়া রানার, নাগেশ্বরী ইত্যাদি। এসকল জাতের হাঁস ৪/৫ মাস বয়স থেকেই একটানা দেড়/দুই বছর বয়স পর্যন্ত ডিম দেয়। ভালো ও বিশ্বস্ত খামারী থেকে উন্নত জাতের হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। আরেক খামারী নুরনবী জানান, আবদ্ধ স্থানে হাঁসের খামার তৈরীতে প্রথমে নির্দিষ্ট পুকুরের উপর অথবা পাড়ে ঘর তৈরী করতে হবে। ঘর তৈরীতে বাঁশ-বেত-টিন, রশি, খড়-ছন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। ঘরটি হতে হবে খোলামেলা যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। পাশাপাশি ইঁদুর-বিড়াল-সাপ থেকে মুক্ত রাখার জন্য জালের বেড়া দিতে হবে। প্রজননের জন্য ৭/৮ টি স্ত্রী হাঁসের সঙ্গে একটি পুরুষ হাঁস রাখতে হবে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মাছ চাষের সাথে সমন্বিত ভাবে হাঁস পালন করলে চাষী বা খামারীরা বেশী লাভবান হয়। তাছাড়া হাঁস নিজেই খাল-বিল-নদী-নালা-পুকুরে চড়ে বেড়িয়ে খাবার সংগ্রহ করে খায়। বাজারেও হাঁসের জন্য তৈরী খাবার পাওয়া যায়। হাঁস সাধারনত ভুসি, খৈল, কুড়া, কেঁচো, ভাত, চাল, ছোট শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি খাবার খেতে পছন্দ করে। সাধারনত ৩৫-৪০ শতাংশ জমির একটি জলাশয়ে ১৫০-২০০ টি হাঁসের খামার তৈরীতে খরচ পরে ৫০-৫৫ হাজার টাকা। সঠিক পরিচর্যা আর যত্ন নিলে বছরে প্রয় লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। এভাবেই করনা ভাইরাসের প্রকোপকে জয় করে দেশের বিপুল পরিমান বেকার যুবকগন হাঁসের খামার তৈরীর মাধ্যমে নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তরিত হয়ে বেকারের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। দেশের বোঝা না হয়ে উন্নয়নের হাতিয়ার হবে।