রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



বুর্জ খলিফায় ফ্ল্যাটসহ দুবাইয়ে আরাভের যত সম্পদ
প্রকাশ: ১৭ মার্চ, ২০২৩, ৮:২৮ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

বুর্জ খলিফায় ফ্ল্যাটসহ দুবাইয়ে আরাভের যত সম্পদ

পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম বিলাসবহুল শহর দুবাইয়ে অঢেল সম্পদের মালিক। বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫ তলায় কিনেছেন ফ্ল্যাট। এছাড়া আরও ৪-৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। বানিয়েছেন একটি সুইমিংপুল, বাগানসহ বড় ডুপ্লেক্স বাড়িও।

এছাড়া ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামে স্বর্ণের দোকানের লোগো তৈরিতেই খরচ হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। দোকানটিতে রেকর্ড পরিমাণ স্বর্ণের মজুত করেছেন আরাভ। ঘোষণা দিয়েছেন পুরোনো সব ব্যবসায়ীর চেয়ে কম দামে স্বর্ণ বিক্রির।

হয়েছেন দুবাইয়ের একটি গোল্ড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। যুক্তরাষ্ট্রে ‘আরাভ জুয়েলার্স’-এর আরও একটি ব্রাঞ্চ উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছেন।

দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫ তলায় কিনেছেন ফ্ল্যাট। বিলাসবহুল শহর দুবাইয়ে আরও ৪-৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। বানিয়েছেন একটি সুইমিংপুল, বাগানসহ বড় ডুপ্লেক্স বাড়িও।

অথচ শূন্য হাতে ঢাকায় এসেছিলেন ফেরিওয়ালা বাবার সন্তান আরাভ। খুন করে দেশ ত্যাগের পর ছিলেন ভারতের বস্তিতে। আর এখন হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গিয়েছেন। অথচ এই সম্পদের উৎস সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছু জানাতে পারেননি তিনি। তবে ফেসবুকে এক লাইভে এসে জানিয়েছেন, তার এসব কর্মকাণ্ডে পুলিশের সর্বোচ্চ এক কর্মকর্তার সহযোগিতার অভিযোগ সত্য নয়।

বুধবার ‘আরাভ জুয়েলার্স’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ দেশের অনেক তারকা উপস্থিত ছিলেন। তদন্তের স্বার্থে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাকিবসহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে যখন বিতর্ক চলছে, তখন আরাভ খান ফেসবুকে এক লাইভে হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকার দাবি করেছেন। এ অবস্থায় ডিবি জানিয়েছে, ইন্টারপোলের মাধ্যমে আরাভকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে সমালোচনার মধ্যে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন আয়োজনে অংশ নেওয়ায় এবং অতিথি হয়ে বাসায় যাওয়ায় সাকিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আরাভ।

তবে সাকিব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার সকালে দেশে ফিরেছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আরাভ ঘোষণা দিয়েছেন ৬৪ জেলায় একটি করে মসজিদ নির্মাণের। এ নিয়ে তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। এলাকায় সোহাগ মোল্লা হিসাবে পরিচিত আরাভ দিনমজুরের ছেলে হয়েও কীভাবে এত টাকার মালিক বনে গেলেন, এ নিয়ে আলোচনা এখন সবার মুখে।

কোটালীপাড়া থানা জানিয়েছে, আরাভের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত থানায় ৯টি ওয়ারেন্ট এসেছে। তবে এতদিন এলাকায় তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আরাভ একজন পুলিশ ইনস্পেকটর হত্যা মামলার চাজশিটভুক্ত আসামি। দুঃখজনক যে মিডিয়ার মাধ্যমে সাকিবসহ অন্য তারকারা এটা জেনেও সেখানে হাজির হয়েছিলেন। আমরা অবগত করার পরও তারা দুবাই গিয়ে আরাভ খানের স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। এটা তারা কেন করেছেন, আমরা জানি না। তবে আমরা আমাদের মতো করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার আইনগত ব্যবস্থা নেব।

প্রতিনিধি জানান, কোটালীপাড়ায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ আশুতিয়া গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার রহমান মোল্লার ছেলে। মতিয়ার একসময় বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায় ফেরি করে সিলভারের হাঁড়িপাতিল বিক্রি করতেন। এখানেই ১৯৮৮ সালে সোহাগের জন্ম হয়।

২০০৫ সালে চিতলমারী সদরের একটি বিদ্যালয় থেকে সোহাগ এসএসসি পাশ করেন। দারিদ্র্যের কারণে এরপর আর তার লেখাপড়া হয়নি। চিতলমারী থেকে ২০০৮ সালে ভাগ্যের অন্বেষণে তিনি ঢাকা চলে যান। ঢাকা গিয়ে নাম পরিবর্তন করে হয়ে যান মোল্লা আপন। প্রবেশ করেন অপরাধজগতে।

ঢাকায় পুলিশ হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের কারণে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। এরপর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে সোহাগ মোল্লা ওরফে মোল্লা আপন, ওরফে রবিউল ইসলাম রবি, ওরফে শেখ হৃদি, ওরফে আরাভ খান ভারতের কলকাতায় পালিয়ে যান। সেখান থেকে আরাভ খান চলে যান দুবাইয়ে।

আরাভ খানের দুবাইয়ে এই স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের খবর জানাজানি হলে এলাকায় আলোচনার ঝড় ওঠে। সবার মুখে মুখে একই প্রশ্ন-সোহাগ মোল্লা কীভাবে রাতারাতি এত টাকার মালিক বনে গেলেন? সরেজমিনে কথা হয় সোহাগের চাচাতো ভাই ফেরদৌস মোল্লার সঙ্গে। তিনিও সোহাগ ওরফে আরাভ খান অল্পদিনে এত টাকার মালিক হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। কয়েকদিন আগে সোহাগ তার দুই বোন ও মা-বাবাকে দুবাই নিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন চাচাতো ভাই ফেরদৌস।

হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজাহারুল আলম পান্না বলেন, সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান একই ব্যক্তি। আমার গ্রামেই তার বাড়ি। সে একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। গত পাঁচ-সাত বছর সে এলাকায় আসে না। হঠাৎ সে কীভাবে এত টাকার মালিক হলো, এটা আমাদের বোধগম্য নয়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র ও আরাভের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, পরিদর্শক হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ৮নং আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডধারী। আছে কানাডিয়ান পাসপোর্ট। ২০২০ সালে রবিউল ভারতের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নং ইউ ৪৯৮৫৩৮৯।

ওই বছরের ২৮ জুলাই কলকাতা থেকে ইস্যু করা পাসপোর্টে রবিউলের নাম আরাভ খান হিসাবে উল্লেখ করা হয়। তার বাবার নাম জাকির খান এবং মা রেহানা বিবি খান বলে উল্লেখ করা হয়। পাসপোর্টের মেয়াদ ২০৩০ সালের ২৭ জুলাই শেষ হবে। আরব আমিরাত সরকার ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর তাকে রেসিডেন্ট পারমিট দেয়। আগামী বছরের ৩০ অক্টোবর এই পারমিটের মেয়াদ শেষ হবে।

জানা গেছে, ভারতে গিয়ে পশ্চিম বঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগোনা জেলার উদয় সংঘ ক্লাবের পাশে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন আরাভ। খুনের মামলায় আসামি হওয়ার পর পালিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ওঠেন কর্তাবাদ এলাকার নরেন্দ্রপুর বস্তিতে। অথচ এখন দুবাইয়ে বিলাসী জীবনযাপন করছেন তিনি। বস্তির জাকির হোসেনের বাড়িতে অবস্থান ছিল তার। অভিযোগ রয়েছে, জাকির ও তার স্ত্রী রেহানা বিবির সঙ্গে সখ্য গড়ে তাদের বাবা-মা বানিয়ে নিজের ও স্ত্রীর ভারতীয় পাসপোর্ট বানান আরাভ। তবে রেহানা বিবির দাবি, আধার কার্ড দিলেও পাসপোর্ট তৈরির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আমাদের পুলিশের একজন মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন পরিদর্শক মামুন। তাকে শুধু হত্যাই করেনি, তার লাশ যেন না পাওয়া যায়, সেজন্য কালীগঞ্জের জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল। এ ঘটনার পর মামলা হয়, যার তদন্ত করেছে ডিবি। হত্যা মামলায় আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম পালিয়ে গেলেও নকল একজন আসামি জেলখানায় দেয় সে।

পরে ডিবির তদন্তে নকল আসামির ঘটনা সামনে আসে। এর মধ্যে মূল আসামি দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকানের মালিক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ভারতে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই যায়। তার বিরুদ্ধে ১২টি ওয়ারেন্ট রয়েছে। আরাভ খানই যে রবিউল, ডিবি কখন নিশ্চিত হয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন কোনো মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়, তখন সব আসামি কে কোথায় আছে, তা খোঁজখবর নেওয়া হয়।

আরাভ খানের বিভিন্ন ছবি প্রকাশ হয় এবং সাকিব আল হাসান টেলিভিশন ও ফেসবুকে ওই স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলেন। সবকিছু মিলেই আমরা তথ্য পাই আরাভ খানই পুলিশ খুনের মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। খুনের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ধারণ করেন রবিউল ইসলাম।

ক্রিকেটার সাকিব অথবা অন্য যারা গিয়েছেন দুবাইয়ে, ডিবি কারও সঙ্গে কথা বলেছেন কি না-এমন প্রশ্নের উত্তরে হারুন অর রশীদ বলেন, সাকিবসহ অন্যদেরও জানানো হয়েছে। জানানোর পরও তারা কেন পুলিশ খুনের মামলার আসামির ডাকে দুবাই গেলেন, এটা আমি জানি না।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া