বঙ্গোপসাগরের নোনাপানিতে বিলীনের পথে বরগুনার টেংরাগিরি বন। গত কয়েক দশকে বনের প্রায় দুই হাজার একর ভূমি সাগরে হারিয়ে গেছে। সেইসঙ্গে হারিয়ে গেছে লাখ লাখ গাছ। এতে শতকোটি টাকার বেশি মূল্যের রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সাগরের ঢেউ ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে বনটির অস্তিত্ব থাকবে কিনা- তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
পটুয়াখালী বন বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯৬০ সালের দিকে টেংরাগিরিকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়। এ বন স্থানীয়ভাবে ‘ফাতরার বন’ হিসেবেও পরিচিত। তখন বনের আয়তন ছিল ১৩ হাজার ৬৪৭ দশমিক ৩ একর। বনের পূর্বদিকে রয়েছে কুয়াকাটা, মহিপুর ও আন্ধারমানিক খাল। পশ্চিমে লালদিয়া, কুমির মারা, পায়রা ও বিষখালীর মোহনা। উত্তরে সোনাকাটা, নিশান বাড়িয়া ও সখিনা খাল। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। টেংরাগিরির শ্বাসমূলীয় বন (ম্যানগ্রোভ) পর্যকটদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গাছ নিধন ও সাগরে বনের একাংশ হারিয়ে যাওয়ায় পর্যটকদের যাতায়াত আগের চেয়ে কমেছে।
উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে বনের মূল্যবান গেওয়া, কেওড়া, করমচা, ধুন্দল, হেতাল, রেইনট্রিসহ বহু প্রজাতির গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। ঢেউ গাছের গোড়ার মাটি সরিয়ে নিলে সেগুলো পড়ে যায় এবং সাগরে ভেসে যায়। এভাবে বছরে কোটি টাকা মূল্যের গাছ হারিয়ে যায় বঙ্গোপসাগরে। আবার জোয়ারের পানিতে যে বালু আসে, তা বনের ভেতরে জমে গাছের শ্বাসমূল নষ্ট করে। এতে অনেক গাছ মরে যায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, সাগরের তীর ঘেঁষে ১৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বনের হাজার হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মাটিতে পড়ে আছে। ভাটার সময় গাছগুলো দেখা গেলেও জোয়ারের পর আর সেগুলো দেখা যায় না। এভাবেই দিনের পর দিন টেংরাগিরির গাছ হারিয়ে যাচ্ছে সাগরে। সৈকত থেকে প্রায় ৫০০ মিটার পর্যন্ত গাছের গোড়ার মাটি সরে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা আছমত আলী জানান, ‘সাগরের দুই মাইলের মইধ্যে বাগান আছিল। হেই বাগান সাগরে লইয়া গ্যাছে। ভাঙতে ভাঙতে বাগান এহন শ্যাষ অইয়া যাওন ধরছে।’
প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর বনদস্যুদের উৎপাতেও বনটির কাহিল দশা। ২০০৭ সালে সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে বনটি প্রায় লন্ডভন্ড হয়ে যায়। কয়েক লাখ গাছ দুমড়েমুচড়ে যায়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ২০০৯ সালে আবার আঘাত হানে আইলা। এ ঘূর্ণিঝড়ও বনের ব্যাপক ক্ষতি করে। এ ছাড়া আছে বনদস্যুদের উৎপাত। স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একদল বনদস্যু দিনে-রাতে বনের গাছ কেটে নদীপথে পাচার করছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের একটি সিন্ডিকেট এ গাছ চুরির সঙ্গে জড়িত।
পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সাগরের ভাঙনের হাত থেকে বন রক্ষার জন্য নতুন করে ঝাউ এবং অন্যান্য প্রজাতির গাছ ঘন করে লাগানো হবে, যাতে সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়লেও মাটির ক্ষয় কম হয়।