বরিশালে বাবুগঞ্জ উপজেলায় জেলেদের মাঝে ছাগল ও ঘর বিতরণের আনুষ্ঠানে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন এক ইউপি চেয়ারম্যান।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের হলরুম সংলগ্ন মাঠের আনুষ্ঠানে এ অভিযোগ তুলেছেন।
এ নিয়ে রহমতপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও সিনিয়র উপজেলা মৎস কর্মকর্তা শিমুল রানী পালের সঙ্গে বাক-বিতাণ্ডায় জড়ালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
প্রতক্ষদর্শীরা জানান, দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কয়েকজন নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে ছাগল, ছাগলের খাবার ও ছাগলের জন্য কাঠ-টিন দিয়ে তৈরি ঘর বিতরণ করার আয়োজন করে উপজেলা মৎস অফিস।
এ সময় সিনিয়র উপজেলা মৎস কর্মকর্তা শিমুল রানী পালসহ মৎস অফিস ও জেলেদের উপস্থিতিতে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা। এ সময় সেখানে রহমতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মৃধা মুহাম্মদ আক্তার উজ জামান মিলন, কৃষিকসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চেয়ারম্যান মিলন ছাগলগুলোর আকার এবং দুর্বল কাঠ ও পাতলা টিনের ছাগলের ঘর দেখে মোট ব্যয়ের কথা জানতে চান সিনিয়র উপজেলা মৎস কর্মকর্তা শিমুল রানী পালের কাছে। এ সময় মৎস কর্মকর্তা তার কোনো কথায় উত্তর না দিয়ে জেলেদের সাক্ষর গ্রহণে ব্যস্ত হয়ে পরেন।
এ সময় তিনি বলেন, জেলে প্রতি ২০ হাজার টাকা বরাদ্দে ভ্যাট ট্যাক্সে যদি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকাও কাটা যায়, তারপরও এই ছাগল আর ঘর বানাতে ১০-১১ হাজার টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা না। তাহলে বাকি টাকা কোথায় এমন প্রশ্নে সিনিয়র উপজেলা মৎস কর্মকর্তা শিমুল রানী পাল কোনো উত্তর দিতে পারেনি। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিষয়টি দেখবেন বলে চেয়ারম্যানকে আশ্বস্ত করেন।
চেয়ারম্যান আক্তার উজ জামান মিলন আরও বলেন, সরকার থেকে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হলেও এখানে দুটি ছাগল, ঘর ও খাবারে সব মিলেয়ে খরচা হয়েছে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। ভ্যাট-ট্যাক্সে আর কয়টাকা খরচ হয়েছে। বাকী টাকা তাহলে গেলো কই। আমার কথা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের জন্য যে জিনিসটা দিচ্ছেন সেটা আমরা ভালোভাবে তাদের কাছে যেন পৌঁছে দেই। হাতে টাকা রেখে রোগা আর ছোট ছাগল দেওয়ার কি দরকার ছিলো। আবার যে ছাগলের জন্য ঘর দেওয়া হয়েছে, তা যেমন দুর্বল কাঠের, তেমনি পাতলা টিনের। এতে তো সরকারেরই বদনাম হয়।
উপকারভোগীরা জানান, যেসব ছাগল দেওয়া হয়েছে তারমধ্যে কোনো জোড়া ছাগল ৩ হাজার টাকা, আবার কোনো জোড়া ছাগল ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। আর ছাগলের জন্য যে ঘর দেওয়া হয়েছে তা রেডিমেটের মতো কাঠ দিয়ে তৈরি করা। যেগুলো কিনতে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার বেশি খরচ হবে না। আর খাবারেও হাজার খানেক টাকার বেশি খরচ হয়নি। ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলে তা দিয়ে এর থেকে ভালো মানের ছাগল ও ছাগলের ঘর দেওয়া সম্ভব ছিলো।
ভূক্তভোগীরা আরও বলেন, চেয়ারম্যানের সঙ্গে বাকবিতাণ্ডার পর কয়েকজন সাংবাদিক বিষয়টি জানতে সিনিয়ির মৎস কর্মকর্তা শিমুল রানী পালকে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করতে গেলেই উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে বসে মাত্র ২-৩টি ঘর দিয়ে তিনি দ্রুত চলে যান। পরে দীর্ঘক্ষণ আমরা সেখানে বসে থাকার পর জানতে পারি ছাগলের বাকি ঘরগুলো আমাদের মৎস কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নিতে হবে।
অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমা বলেন, ছাগল ও ঘর বিতরণের আনুষ্ঠানে আমি অতিথি হিসেবে ছিলাম। প্রকল্পটির সঙ্গে আমি ওইভাবে সম্পৃক্তও নই। তারপরও অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।