শুক্রবার ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   শুক্রবার ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



বাপ-ব্যাটা মিলে আট কোটি টাকা লুটপাট
প্রকাশ: ৮ অক্টোবর, ২০২২, ১:৪৬ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

বাপ-ব্যাটা মিলে আট কোটি টাকা লুটপাট

হকিকত জাহান হকি

ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে ৮ কোটি টাকা। এই ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছিল না। কোনো জামানত নেওয়া হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। এই জালিয়াতিতে জড়িত দুই প্রতিষ্ঠানের ১১ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউস পিএফআই সিকিউরিটিজের পরিচালক এমএ খালেক ও তাঁর ছেলে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের সাবেক পরিচালক রুবাইয়াত খালেদ মিলে অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনা করেন ২০১৪ সালে। তাঁদের এ পরিকল্পনায় যুক্ত করা হয়েছিল ফারইস্ট ফাইন্যান্সের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল ওহাবকে (প্রয়াত)। আবদুল ওহাব পিএফআই সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও ছিলেন।

অর্থ আত্মসাতে এমএ খালেক ও রুবাইয়াত খালেদ তাঁদের প্রতিষ্ঠান পিএফআই সিকিউরিটিজের ডেকোরেশন কাজের ঠিকাদার মেসার্স চারুশীলকে ব্যবহার করেছে। চারুশীলের মালিক সেলিম আহমেদকে (প্রয়াত) ম্যানেজ করে চারুশীলের নামে ১০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। ঋণ গ্রহণের পরদিনই পিএফআই সিকিউরিটিজের ব্যাংক হিসাবে পুরো টাকা স্থানান্তর করা হয়। এর পর পিএফআই চারুশীলের মালিককে ২ কোটি টাকা প্রদান করলে তিনি ঋণের ২ কোটি টাকা ফারইস্ট ফাইন্যান্সে জমা দিয়েছেন। বাকি ৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়নি। সুদ-আসলে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৬১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। দুদক আইন অনুযায়ী এ টাকা আত্মসাতের পর্যায়ে পড়ে। এ অর্থ আত্মসাতে পিএফআই সিকিউরিটিজ ও ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ১১ জনকে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে দুদক।

ফারইস্ট ফাইন্যান্সের এমডি মোহাম্মদ আলী জারইয়াব সমকালকে বলেন, ১০ কোটি টাকা ঋণ প্রদানে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছিল না। ঋণের বিপরীতে কোনো জামানত দেওয়া হয়নি। ঋণ-সংক্রান্ত যেসব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ভুয়া। কোনো ধরনের জামানত ছাড়া পর্ষদ সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা ঋণ দিতে পারে। অথচ এ ক্ষেত্রে বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এ টাকা আদায়ে নানা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অবশেষে অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয়। এ মামলা বিচারাধীন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এ অর্থ আত্মসাতে মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এমএ খালেক ও তাঁর ছেলে রুবাইয়াত খালেদ। ওই সময় পিএফআই সিকিউরিটিজের চরম আর্থিক দুরবস্থা চলছিল। ব্যবসায়িক কার্যক্রমের রেকর্ড ভালো না থাকায় কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁরা ঋণ পাচ্ছিলেন না। তাঁরা নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন। সিআইডির এক মামলায় বাবা-ছেলে বর্তমানে জেলে আছেন।

দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, ১০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পর ২ কোটি টাকা পরিশোধ করে ঋণটি ব্লক করে সুদ আরোপ প্রক্রিয়া বন্ধের আবেদন জানানো হয়েছিল। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফারইস্ট ফাইন্যান্স সুদ প্রক্রিয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। এই হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে সুদ-আসলে বকেয়া ৮ কোটি ৬১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।

অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনা অনুসন্ধান করছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক আবদুল মাজেদ। চারুশীলের মালিক সেলিম আহমেদ ১০ কোটি টাকা ঋণের জন্য ফারইস্ট ফাইন্যান্সে আবেদন করেছিলেন ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই কোম্পানিকে একটি চেকে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। সেলিম আহমেদ ১০ কোটি টাকা পাওয়ার পরদিন ৫ কোটি করে দুটি চেকে পিএফআই সিকিউরিটিজকে ১০ কোটি টাকা প্রদান করেছিলেন।

অর্থ আত্মসাতে তিন প্রতিষ্ঠানের ওই সময়কার শীর্ষ কর্মকর্তাদের যোগসাজশ খুবই স্পষ্ট। ঋণের গ্যারান্টি পত্রে সাক্ষী ছিলেন পিএফআই সিকিউরিটিজের এমডি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, চারুশীলের সেলিম আহমেদের মৃত্যুর পর ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ঋণের দায় কৌশলে সেলিম আহমেদের স্ত্রী নিগার সুলতানার ওপর চাপানো হয়। নিগার সুলতানার সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করে ঋণটি তাঁর নামে স্থানান্তর করা হয়। একই সঙ্গে পরিশোধের জন্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ২০টি কিস্তি করে দেওয়া হয়। ওই কিস্তি পরিশোধের জন্য পিএফআই সিকিউরিটিজের এমডি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও ডিএমডি মুশফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিটি ৪২ লাখ টাকার ২০টি ভুয়া চেক নিগার সুলতানাকে প্রদান করেছিলেন। চেকগুলোতে কোনো তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। পরে নিগার সুলতানা চেকগুলো ব্যাংকে জমা দিলে সেগুলো ভুয়া (আনঅথরাইজড) বলে প্রমাণিত হয়। এ ছাড়া চেকগুলোর বিপরীতে পিএফআই সিকিউরিটিজের ব্যাংক হিসাবে টাকা ছিল না।

ঋণ দেওয়ার সময় শান্তনু সাহা ফারইস্ট ফাইন্যান্সের এমডি ছিলেন। এ ঘটনার দায় শান্তনু সাহার ওপরেও বর্তায়। বর্তমানে তিনি পলাতক এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধস নামার কারণে পিএফআই সিকিউরিটিজের শেয়ার ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। তখন বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে তাঁরা দেনাদার হয়ে যান। ঋণ পরিশোধ করার মতো অবস্থা তাঁদের ছিল না। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপির তালিকায় তাঁদের নাম আসে। এতে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার মতো অবস্থা তাঁদের ছিল না। অবশেষে ফারইস্ট ফাইন্যান্স থেকে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। চারুশীলের সেলিম আহমেদ মারা গেলে তাঁর স্ত্রী নিগার সুলতানার নামে ঋণের সুদ বন্ধ রাখার জন্য ফারইস্ট ফাইন্যান্সে একটি আবেদন করেন পিএফআই সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান এমএ ওয়াহাব ও পরিচালক এমএ খালেক। দুদক অনুসন্ধানকালে জানতে পারে, নিগার সুলতানা এ আবেদনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। প্রভাব খাটিয়ে ওই ৮ কোটি টাকা ঋণের সুদ আরোপ বন্ধ করা হয়েছিল।

দুদকের অনুসন্ধানে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ১১ জনকে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন- পিএফআই সিকিউরিটিজের বিকল্প পরিচালক এমএ খালেক, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের পরিচালক রুবাইয়াত খালেদ, পিএফআই সিকিউরিটিজের এমডি কাজী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, পিএফআই সিকিউরিটিজের উপমহাব্যবস্থাপক ও কোম্পানি সচিব মো. মুসফিকুর রহমান, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের এমডি শান্তনু সাহা, ডিএমডি ও চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মো. হাফিজুর রহমান, এসএভিপি ও হেড অব ফিন্যান্স (এইআর) মো. আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র ম্যানেজার মনোরঞ্জন চক্রবর্তী, ক্রেডিট ইনচার্জ মোহাম্মদ রফিকুল আলম, সিনিয়র ম্যানেজার মো. রেজাউল করিম এবং এসএভিপি ও কোম্পানি সচিব শেখ খালেদ জহির।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া