বাঁকা মেরুদণ্ড নিয়ে বরিশাল নগরীর কাউনিয়া জানকি সিংহ সড়কের পাশে ছোট্ট-ভাঙাচোরা একটি দোকানে চা বিক্রি করে দিন পার করেন মো. রিপন হোসেন (২৬)। অর্থের অভাবে দীর্ঘদিন তার চিকিৎসা বন্ধ। মুখবুজে কষ্টসহ্য করে নিজের কোমলমতি কন্যার জন্য আরও কিছুটা দিন বাঁচার আকুতি রিপনের।
ছোট্ট ও ভাঙাচোরা দোকানে চা বানাতে বানাতে কথা বলেন রিপন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আল্লাহ মোরে এমন একটা মানুষের লগে দেহা করাইয়া দিত, যার উছিলায় মোর কোমর আবার আগের মতো সোজা হইয়া যাইতো। কষ্ট আর সহ্য হয় না। সংসারে ছোট্ট একটা মাইয়া থুইয়া মুই কই যামু। এই চিন্তা কইরা মরতেও পারি না। একটা বৌ আছে ওরে কোনো কিছু দিয়া যাইতে পারলাম না। আর এ জীবনে পারমু কিনা জানি না।’
এ সময় রিপন কেঁদে কেঁদে জানান, ঢাকা পিজি হাসপাতাল, বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখিয়েছেন তিনি। কিন্তু অর্থের অভাবে কোথাও পূর্ণ চিকিৎসা করাতে পারেননি। বরং সব স্থানেই হয়েছেন লাঞ্ছিত। যেখানেই গেছেন সেখানেই টাকা নিয়ে দেখা করতে বলেন তাকে। সবশেষে অভিমানে আর কোথাও চিকিৎসা দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
এ সময় নিজের কোমলমতি শিশু ছুমাইয়ার কথা মনে করে রিপন বলেন, ‘এবার ঈদে সবার বাবা নতুন জামা কিন্না দেছে। মুই মোর মাইয়ারে কিছুই দিতে পারি নাই। ক্যামনে দিমু? টাকা কামানোর লইগ্যা যে কামকাইজ করা লাগে, কিছুই করতে পারি না। হারা দিন দোহানে বইয়া দুইশ টাহাও কামাইতে পারি না। গরিবের লইগ্যা এই পৃথিবীডা জাহান্নাম! শেষ বারের লইগ্যা যদি কেউ সাহায্য করতে, হেলে আরও একবার সুস্থ্য হওয়া চেষ্টা করাতাম মাইয়াডর লইগ্যা।’
বরিশাল নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জানকি সিংহ সড়কের একটি বাসায় ২ হাজার টাকায় ভাড়ায় স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে বসবাস করেন রিপন। স্থায়ী ঠিকানা বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশায়। সেখানে ৮০ বছরের বৃদ্ধ বাবা মো. জয়নাল খান এবং মা রূপবান বিবি ভাঙাচোরা একটি ঘরে বসবাস করেন।
তিনি জানান, ২০১২ সালে বাতজ্বরে প্রথম অসুস্থ হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা করিয়ে কিছু দিন সুস্থ ছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালে আবারও বাতজ্বরে তার মেরুদণ্ড ধীরে ধীরে বাঁকা হয়ে যায়। সেই বাঁকা মেরুদণ্ড নিয়েই এখন মুমূর্ষ অবস্থায় জীবনের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন রিপন।
নগরীর জানকি সিংহ সড়কের বাসিন্দারা জানায়, রিপনের পরিবারের অর্থ যোগান দেওয়ার মতো কেউ নেই। স্থানীয়দের সহযোগিতায় সড়কের পাশে একটি চায়ের দোকান নিয়ে বসেছেন। স্ত্রী মোসা. নাসিমা আক্তার অন্যের বাসায় রান্না ও ঘর পরিষ্কার করে যে টাকা পান তা দিয়ে মেয়ে ছুমাইয়া আক্তারকে কাউনিয়া দর্গাবাড়ি মাদ্রাসার নার্সারিতে পড়াচ্ছেন। অনেক কষ্টে কোনো রকমে দিন পার করছে প্রতিবন্ধী রিপনের পরিবার। তবে সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে রিপন উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হতে পারবেন। পরিবারটি একটু স্বচ্ছলতার দেখা পাবে বলে আশা করেন স্থানীয়রা।