বরিশাল সিটি নির্বাচন :সাদিকের পাশে নেই হাসানাত অনুসারীরা
প্রকাশ: ৯ মে, ২০২৩, ১২:১৫ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অসীম দেওয়ান। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর স্ত্রী শাহান আরা আবদুল্লাহর (প্রয়াত) ফুফাতো ভাই। তাঁর বাড়ি নগরের কাউনিয়ায় হাসানাতের শ্বশুরবাড়ির অদূরে। হাসানাত বলয়ের লোক হিসেবেই তিনি ২০১১ সালে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন বলে জানা গেছে। সেই অসীম এখন আওয়ামী লীগে হাসানাত পরিবারবিরোধী গ্রুপে নেতৃত্বদানকারীদের একজন।
৯০-এর দশকে দাপুটে ছাত্রলীগ নেতা বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মো. জসিমউদ্দিন ছিলেন হাসানাত আবদুল্লাহর খুবই কাছের লোক। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর হাসানাত আবদুল্লাহ চিফ হুইপ থাকাকালীন নগরের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ছিলেন জসিমউদ্দিন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতাসীন হলে তাঁকে ৮ থেকে ১০ বছর বরিশালের বাইরে থাকতে হয়েছে। সেই জসিম এখন হাসানাত পরিবারবিরোধীদের কাতারে।
শুধু জসীম ও অসীম নন, অন্তত অর্ধডজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাসানাত পরিবারবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা রয়েছেন এই পক্ষে। তাঁরা এতদিন মহানগর-সদর আসনের এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এখন হাসানাতের ভাই মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের ‘নতুন বরিশাল’ গড়ার পক্ষে অবসস্থান নিয়েছেন। হাসানাতের শ্যালক মফিজুল ইসলাম কামালও রয়েছেন তাঁদের সঙ্গে।
জানা গেছে, তাঁদের সবার অভিযোগের আঙুল হাসানাতের বড় ছেলে সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর দিকে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ– সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র হওয়ার পরই নিজের বলয় তৈরি করতে মেধাবী ও সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় নেতাকর্মীদের দল থেকে তাড়িয়েছেন। কৌশল হিসেবে নানাভাবে অপমান-অপদস্থ করেছেন, এমনকি অনেকের গায়ে হাত দিয়েছেন। অনেকের বাড়িতে সিটি করপোরেশনের বুলডোজারের আঘাত করেছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসানাত আবদুল্লাহ সবকিছু জানলেও ছেলেকে মৌন সমর্থন দিয়েছেন। বিএম কলেজের সাবেক ভিপি ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মঈন তুষার বলেন, সাদিক তাঁর বাবার অনুসারীদেরও ছাড় দেননি।
হাসানাত পরিবারের প্রতি বিরাগভাজন হওয়ার কারণ জানতে চাইলে অসীম দেওয়ান বলেন, ‘সাদিক আবদুল্লাহ আমেরিকা থেকে বরিশালে এসে রাজনীতি শুরু করলে তাঁর সঙ্গেই ছিলাম। তিনি আমার আত্মীয়। ধীরে ধীরে অসাংগঠনিক কাজসহ নানা বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে আমার প্রতি হিংস্র হয়ে ওঠেন সাদিক। দফায় দফায় বাসায় হামলা ও গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে টিকতে না পেরে ২০১৪ সালের শেষ দিকে বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় চলে যাই। গত ৯ বছরে পালিয়ে দু-একবার বরিশালে এলেও কাউনিয়ায় নিজের বাসায় যেতে পারিনি।’
২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতাসীন হলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বরিশাল ত্যাগ করেন তখনকার ছাত্রলীগ নেতা জসিমউদ্দিন। সাবেক মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি শওকত হোসেন হিরন (প্রয়াত) মেয়র থাকাকালীন (২০০৮-১৩) তিনি বরিশালে ফেরেন। গুঞ্জন রয়েছে, হিরনের সহযোগিতায় বরিশালে ফেরেন তিনি। এ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি হাসানাত পরিবার। হিরনের মৃত্যুর পর (২০১৪) মহানগর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ সাদিকের হাতে ফিরলে তিনি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। তবে এ বিষয়ে জসিমউদ্দিন জানান, সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য তিনি বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। পারিবারিক প্রয়োজনেই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তিনি এখন নৌকার প্রার্থীর পক্ষে রয়েছেন।
সাদিকের রোষানল থেকে রক্ষা পাননি তার মামা জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল। পারিবারিক বিরোধের জেরে দক্ষিণ চকবাজারে কামালের নির্মাণাধীন বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের কাজ সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয়। দফায় দফায় ভাঙচুর করা হয় ভবনটি। মেয়র হওয়ার পরই মামাকে অপসারণ করে বরিশাল ক্লাবের সভাপতি হন। অথচ ২০১৮ সালে সাদিকের নির্বাচনে গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দায়িত্বে ছিলেন কামাল।
ভাগনের এ আচরণ প্রসঙ্গে কামাল বলেন, ‘ব্যক্তিগত আক্রোশে আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ভবনটি ভাঙা হয়। মেয়র বরিশাল ক্লাবের সভাপতি হয়েছেন অবৈধভাবে। কারণ সদস্যপদ ১০ বছর না হলে কেউ সভাপতি হওয়ার বিধান নেই। সাদিক এই নিয়ম ভেঙেছেন।’
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা সাগরদীতে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিমউদ্দিনের নির্মাণাধীন ভবনটি নকশাবহির্ভূত অভিযোগ তুলে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জসিমেরও অভিযোগ, শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পর তিনি সাদিকের অনুগত হননি। তাই তাঁর ভবনটি ভেঙে দেওয়া হয়।
গত রমজানের শেষ দিকে একদিন ইফতারের আগ মুহূর্তে নতুন বাজার এলাকায় জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান হাওলাদারের ভবনের সামনে বুলডোজার পাঠানো হয় ভাঙার জন্য। এক সময় হাসানাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন শাহজাহান ও স্থানীয় জনগণের প্রতিরোধের মুখে ফিরে যান সিটি করপোরেশনের লোকজন। জানা গেছে, থ্রি-হুইলার যানবহনের নিয়ন্ত্রণ পেতে টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সংগঠক শাহজাহানের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন মেয়র সাদিক। সেই শাহজাহান এখন খোকন আবদুল্লাহর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য। সাদিকের আনুগত্য না মানলে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও তাঁর রোষানলে পড়তেন বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ।