বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : হেলমেট পরে হলে ঢুকে ছাত্রলীগের ২ নেতাকে কুপিয়ে জখম
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ৩:৫২ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
মামুনুর রশীদ নোমানী :
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, আহতদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সুস্থ হলে আরও ভালোভাবে মূল ঘটনা জানতে পারবো।
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হেলমেট পরে একদল যুবক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলে ঢুকে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার ভোরে হলটির ৪০১৮ নম্বর কক্ষের এ ঘটনায় আহত দুজনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাত ও জিএম ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী। তাদের গড়া নিজেদের গ্রুপে কিছু কর্মীও আছেন। তবে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাতকে রুম থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে হাতুড়ি পেটা এবং জিএম ফাহাদের হাত ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি দুজনকেই কুপিয়ে জখম করা হয়।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, আহতদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সুস্থ হলে আরও ভালো ভাবে মূল ঘটনা জানতে পারবো।
তিনি বলেন, হামলাকারী কারা সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেননি আহতরা। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের প্রভোস্ট আবু জাফর বলেন, ম্যাথম্যাটিক্স ডিপার্টমেন্টের মাস্টার্সের ছাত্র সিফাত ও লোকপ্রশাসন ডিপার্টমেন্টের মাস্টার্সের ছাত্র ফাহাদের ওপর অতর্কিত হামলা হয়েছে।
তিনি জানান, তারা গুরুত্বর আহত হয়েছেন। হামলাকারীদের চিহ্নিত করা যায়নি। পুরো বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখছে।
প্রত্যক্ষদর্শী হলের আবাসিক ছাত্র জিয়া বলেন, ফজরের আযানের পর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হঠাৎ করে ১০-১৫ জন হেলমেট পরা অবস্থায় হলে প্রবেশ করে। এরপর তারা সব রুম বাইরে থেকে আটকে দিয়ে ওই দুজনের ওপর হামলা চালায়।
আহত জিএম ফাহাদ বলেন, হামলাকারীরা হেলমেটধারী ছিল। তবুও তাদের শনাক্ত করতে পেরেছি। হামলাকারী আলীম সালেহী, অমিত হাসান রক্তিম, রিয়াজ মোল্লা, সৈয়দ জিসান আহম্মেদ ও বাকিকে চিনেছি। এরা আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।
হামলার অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা রিয়াজ মোল্লা বলেন, সিফাতের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ। তারা সিফাতের অপকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তাকে প্রতিহত করেছে বলে আমার ধারণা।
তিনি বলেন, এ ছাড়া সিফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকায় জমি দখল থেকে শুরু নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। বহু মানুষ তার ওপর ক্ষিপ্ত। এখন মূলত কারা তার ওপর হামলা করেছে সেটা বলতে পারবো না।
হামলার বিষয়ে আহত সিফাত বলেন, ভোর রাত সাড়ে ৫টার দিকে হেলমেট ও মুখোশ পরে ১০-১৫ জনের একটি দল তার কক্ষে প্রবেশ করে। তাদের সবার হাতে ছিল রামদা, বগি দাসহ দেশীয় ধারালো অস্ত্র, হকিস্টিক, জিআই পাইপ ও রড। তারা কক্ষে প্রবেশ করে আমাদের তিনজনকে এলোপাতাড়িভাবে পিটিয়ে-কুপিয়ে আহত করে ফেলে রেখে গেছে।”
হামলার কারণ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই জানিয়ে ছাত্রলীগের সক্রিয় এই কর্মী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। তবে তিনি ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্বের পদ প্রত্যাশী।
হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে চিনতে পেরেছেন দাবি করে সিফাত অভিযোগ করেন, রিয়াজ মোল্লার নেতৃত্বে হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বহিরাগতরাও ছিলো।
তিনি আরও বলেন, হামলায় তার দুই পা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত-জখম হয়েছে। হাতের তিনটি আঙ্গুল পিটিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে। হামলাকারীরা তার দুই পায়ের রগ কাটারও চেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ সিফাতের।
ওই হলের আবাসিক ছাত্র জিয়া বলেন, সাড়ে ৫টার দিকে ফজরের আযানের পর হঠাৎ করে ১০-১৫ জন হেলমেট পরিহিত অবস্থায় হলে প্রবেশ করে। তারা সব কক্ষ বাইরে থেকে আটকে দেয়।
“পরে তারা সিফাতকে কক্ষ থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে পিটিয়ে ও কুপিয়ে এবং জিএম ফাহাদের হাত ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি তাকে কুপিয়ে জখম করে চলে যায়।”
এদিকে হামলার সঙ্গে জড়িত নন দাবি করে রিয়াজ মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, “সিফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় জমি দখল থেকে শুরু নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। বহু মানুষ তার ওপর ক্ষিপ্ত। এখন কারা তার ওপর হামলা করেছে সেটা বলতে পারবো না।”
বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই মশিউর রহমান বলেন, “কারা হামলা করেছে এখনও নিশ্চিত নই। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চাওয়া হয়েছে। ফুটেজ পেলে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হবে।”
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আহত সিফাতের শরীরে ফোলা জখম রয়েছে এবং ফাহাদের শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখমের চিহ্ন পাওয়াসহ তার হাতও ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে।