বরিশাল-পটুয়াখালী- বাকেরগঞ্জ- বরগুনা মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
মামুনুর রশীদ নোমানী :
বরিশাল টু পটুয়াখালী ও বাকেরগঞ্জ টু বরগুনা মহাসড়কে চাঁদাবাজি থামছেই না। খোদ পুলিশের বিরুদ্ধেও এই চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যাত্রী ও পণ্যপরিবহনের যানবাহন আটকে বিভিন্ন কায়দায় টাকা আদায় করা হচ্ছে। আগে এলাকা ভিত্তিক রাজনৈতিক নেতা বা মাস্তানরা চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করলেও এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ কখনো সরাসরি আবার কখনো নেপথ্যে থেকে সোর্সদের লেলিয়ে দিয়ে চাঁদা আদায় করছে। এমনিতেই মহাসড়কে পেশাদার ডাকাত, সড়ক দুর্ঘটনা, ছিনতাইকারীর তৎপরতায় তারা আতঙ্কগ্রস্ত, এতে যোগ হয়েছে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির চরম উপদ্রব। মহাসড়কে যাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা তারাই এখন গলার কাঁটা, বরিশাল টু পটুয়াখালী ও বাকেরগঞ্জ টু বরগুনা সড়কে যাত্রীদের ও চালকের এমন অভিযোগের কমতি নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে অনুসন্ধানে সরেজমিনে জানা যায়, কিছু অসাধু ট্রাফিক পুলিশ বছরজুড়েই মহাসড়কে চাঁদা তোলে। ট্রাকে চাঁদাবাজির কারণে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। গোটা দক্ষিণাঞ্চলের পণ্যপরিবহনের জন্য কয়েক হাজার ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রয়েছে। এসব ট্রাক কাভার্ড ভ্যান থেকে মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। শুধু পণ্যপরিবহন সেক্টরই নয় যাত্রীবাহী বাস, লেগুনা, মাহিন্দ্রা, অটোরিকশা, নসিমনসহ অন্যান্য পরিবহন থেকেও তোলা হয় চাঁদা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাসিক চুক্তিতে এসব চাঁদার টাকা পরিশোধ করছে অনেকে। এর বাইরে বিভিন্ন স্পটে যানবাহন আটকিয়েও বিভিন্ন অজুহাতে গাড়ির চালক-সহকারী, যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। নিয়মিত ও চাহিদামতো টাকা না দিলেই নানাভাবে হয়রানি ও মামলার ঘটনা ঘটছে। যেসব পয়েন্টে চাঁদাবাজি হচ্ছে, অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল টু কুয়াকাটা মহাসড়কের বাকেরগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে ও বাকেরগঞ্জ টু বরগুনা আঞ্চলিক সড়কে কুন্ড বাড়ি এলাকায় ছোট-বড় সব ট্রাক ও অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা, নসিমন, মোটরসাইকেল চালক থেকে শুরু করে যাত্রীদের থেকেও চাঁদা নেয়া হচ্ছে। বাকেরগঞ্জ পৌর সভার ৮ নং ওয়ার্ডের মুদি ব্যাবসায়ি আফসু মাঝির পুত্র সজল মাঝি সংবাদ মাধ্যমকে অভিযোগ করে বলেন, আমি বরিশাল থেকে একটি অটো রিকশা ভাড়া করে পিয়াজ নিয়ে কালিগঞ্জ বাজারে যাওয়ার পথে কুন্ড বাড়ি ব্রিজের উপরে পৌঁছালে ট্রাফিক পুলিশ আমাকে পথ রোধ করে ১০০ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমাকে মামলার ভয় দেখায় পরে টাকা দিলে আমাদের ছেড়ে দেয়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুন্ড বাড়ির সামনে চাঁদা আদায়কারী ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের একজন এটিএসআই । এমন বিশৃঙ্খলা নৈরাজ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, বরিশাল জেলা ট্রাফিক পুলিশ। মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও দৃশ্যমান আইনি কোনো নজরদারী চোখে পড়েনি।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে হাইওয়ে পুলিশ ম্যানেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারি বাকেরগঞ্জ কলেজের সামনে মহাসড়কের উপরে অবৈধ থ্রি হুইলার, অটোরিক্সা সিএনজির স্ট্যান্ড তৈরি করেছে স্থানিয় প্রভাবশালী সিন্ডেকেট।
সেখান থেকেও মোটা অংকের টাকা যায় প্রশাসনের পকেটে। প্রশাসনের সহযোগীতায় অবৈধ অটো স্ট্যান্ড মহাসড়কের উপর হওয়ায় প্রায় ঘটছে বড় বড় দুর্ঘটনা। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পৌরসভার নাম ভাঙ্গিয়ে একটি প্রভাবশালী সিন্ডেকেট প্রতিদিন চাঁদাবাজি করে আসছে প্রশাসন ম্যানেজ করে। উল্লেখ্য, স্থানগুলোতে যানবাহনের কাগজপত্র দেখার কথা বলে প্রথমে যানবাহন থামায় তারা। বনিবনা না হলে গাড়ি আটকে রাখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। চাহিদামতো টাকা দিলে গাড়ি ছেরে দেওয়ার এমন অসংখ্য দৃশ্যমান অভিযোগের বাস্তব চিত্র এখন নিত্যদিনের সঙ্গী দাবি এই অঞ্চলের যানবাহন ড্রাইভারদের।
অনেক ভুক্তভোগী যানবাহন ড্রাইভাররা উচ্চকণ্ঠে অভিযোগ তুলে বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ এ পেশায় অভিজ্ঞ, চলন্ত পথে ট্রাফিক পুলিশ হাত ইশারা দিয়ে গাড়ি থামাতে বললে ২০০-৫০০ টাকা দেওয়া ফরজে আইন দাবি করেন। বরিশাল জেলা ট্রাফিক পুলিশের টিআই মোস্তাফিজ জানান, সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহাসড়কে কোথাও চলন্ত যানবাহন আটকে চাঁদাবাজির নিয়ম নেই, যদি সেটি হয়ে থাকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণও করবেন বলেও জানন তিনি।