মামুনুর রশীদ নোমানী : বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালের এক কর্মচারীর মোবাইলে গতকাল বুধবার করোনা পজেটিভ মর্মে রিপোর্ট ম্যাসেজ আকারে আসে। এর পরে তিনি সদর হাসপাতালে রাত ৮টায় এসে আইসোলেশন ইউনিটে যান রাত ১১ টায়। অন্ধকার ভুতুরে পরিবেশে রাত কাটান দু তলা বিল্ডিংয়ের একজন বাসিন্দা হিসেবে। হাসপাতালের কেউ খোজ নেন নি। দু একজনে মোবাইলে কথা বলেছেন। সেই রাত থেকে না খেয়ে আজ বেলা একটা পর্যন্ত ছিলেন। এ প্রতিবেদককে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বলেন দাদা আমাকে বাচাঁন আমি এ রকম থাকলে মরে যাবো।
গত বৃহস্পতিবার করোনা উপসর্গ থাকায় নমুনা দেয়া হয়। গতকাল মোবাইলে করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসার পরে সদর হাসপাতালে আসেন। সকালে কর্তৃপক্ষ বলছেন রিপোর্ট নেগেটিভ।
হাসপাতালের সাবেক ডায়রিয়া ওয়ার্ডকে এখন বানানো হয়েছে করোনা ইউনিট। দুতলা বিশিষ্ট এ করোনা ওয়ার্ডে গতকাল রাত থেকে আজ বেলা দুটা পর্যন্ত একাই ছিলেন। কোন নার্স কিংবা কোন ডাক্তার বা কোন কেউ তার খোজ না নেয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন ঐ ভুক্তভোগী। তিনি কান্না করে বলেন, আমার কি দোষ। আমাকে এখানে ভর্তি দিয়ে গেটে তালা দিয়ে দিয়েছে। কেউ খোজ খবর নেয়নি। আমি না খেয়ে আছি।আমাকে বাচাঁন। আমি এভাবে থাকলে মরে যাবো।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের মেট্রোন রওশন জানান,আমরা কি করবো। খোজ খবর নিবো। গতকাল বুধবার ভর্তি হয়েছে আর এখন বলেন খোজ নিবো এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমাদের কোন সরঞ্জাম নেই তা দিয়ে রোগীর সেবা করবো। তিনি বলেন আমাদের পিপিই,মাস্ক,গ্লাভস দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই আমরা ইচ্ছা থাকা সত্তেও করোনা পজেটিভ রোগীদের সেবা দিতে পারছিনা।
এব্যাপারে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ দেলোয়ার জানান,আখিনুরের রিপোর্ট নেগেটিভ। ওকে ছাড়পত্র দিচ্ছি। ভুলক্রমে পজেটিভ এসেছে। আখিনুর বাসায় থাকবে।
গতকাল থেকে তার কোন খোজ খবর না রাখার বিষয়ে তিনি বলেন কিযে বলবো কেউ খোজ নেয়নি? তিনি এ প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন করে বলেন এটা দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বরিশালের সিভিল সার্জন মনোয়ার হোসেন বলেন,আপনাদের কেন বলবে। আমাদের বলবে। যখন বলা হলো রোগীর থেকে আমরা অনেক দুরে থেকে কথা বলতেছি তখন তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন আখিনুরের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি কি করা যায়।
আখিনুর এ রিপোর্ট লেখার সময় বিকেল তিনটায় জানান,দাদা আমি বাসায় এসেছি। সদর হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে যে, তুমি নাপা,তোমার কাছে থাকা এন্টিবায়োটিক, গ্যাষের ঔষধ খাবা এবং গরম পানি খাবা। তারা আরো বলেছে আমরা না বলা পর্যন্ত বাসায় থাকবা। আখিনুর জানান,আমি কি বিপাকে পড়েছি তা বলে বুজাতে পারবোনা। আমি একরাতে যে ভোগান্তির শিকার হয়েছি তা জিবনে কখনো ভুলতে পারবোনা। বিদ্যুৎ নেই,খাবার নেই,পানি নেই,কেউ কোথাও নেই শুধু ঐ বিল্ডিংয়ে আমি একা। বাতাস আর বাতাস। গতকাল রাতে আম্ফানের প্রভাবের কারনে বিদ্যুৎ ছিলনা কোথাও।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আলোর কোন ব্যবস্থা করেনি।
আখিনুর বলেন,আমি এখনো জানিনা আমার করোনা পজেটিভ না নেগেটিভ। ম্যাসেজে এসেছে পজেটিভ আর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে নেগেটিভ। আমার সাথে কেউ কথা না বলে আমার এক আত্মিয়র কাছে তারা বলছে ওকে বাসায় যেতে বলো।
রিপোর্ট ভুল। ঔষধ যা ক্রয় করেছে তা খাইতে বলিও। বর্তমানে আমার গলায় ব্যথা করে এবং আমার সর্দি আছে।