স্টাফ রিপোর্টার : বরিশালে মানববন্ধন করেছে এ্যাংকর সিমেন্টের ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকরা। ৭ জুন’২০ তারিখ রোববার বেলা ১২টার দিকে নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়।
অলিম্পিক সিমেন্ট লিমিটেডের এ্যাংকর সিমেন্ট ফ্যাক্টরী,রহমান ট্রেডার্স,অলিম্পিক ফাইবারের ২৪২ জন শ্রমিক কে ঈদ বোনাস ,এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন ভাতা,গ্রাচুইটিসহ লেবার আইনে প্রাপ্ত অন্যান্য সুযোগ সুবিধা না দিয়ে ছাঁটাই করা হয়েছে। হঠাৎ করে ছাঁটাইয়ের সংবাদ শুনে এ্যাংকর সিমেন্টসহ গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকরা হতাশ হয়ে পড়েন। তারা বিভিন্ন স্থানে ধর্না ধরেও কোন সুফল না পেয়ে আজ ৭ জুন মানববন্ধন করেন শ্রমিকরা।
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, ‘করোনা দুর্যোগে অলিম্পিক সিমেন্ট লিমিটেডের এ্যাংকর সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাশে না দাঁড়িয়ে বরং শ্রমিক ছাঁটাই করেছে যা অত্যান্ত দুঃখজনক। অবিলম্বে প্রতিষ্ঠানটির সকল শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের পুনঃবহালের দাবি জানান তারা।
নভেল করোনা ভাইরাসের কারনে সৃষ্ট দুর্যোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর
শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন শ্রমিক ছাঁটাই করলে একদিকে যেমন তাদের জীবনধারণ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে তেমনি স্বাভাবিক সময়ে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে পড়বে, যা পরবর্তিতে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এমতাবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শিল্পকারখানার মালিকদের শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও যথোপযুক্ত কার্যক্রম প্রদানের জন্য বিনীত অনুরোধ করা হয়। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নির্দেশ অমান্য করে অলিম্পিক সিমেন্ট লিমিটেড ২৪২জন শ্রমিককে এপ্রিল,মে,জুন ও ঈদ বোনাসসহ অন্যান্য পাওনাদী পরিশোধ না করে পাইকারি হারে শ্রমিক ছাঁটাই করছে যা শ্রম আইনের সম্পর্ন পরিপন্থী বলে জানান ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা শ্রম দিয়ে মালিকদের যেমন কোটিপতি বানিয়ে দেন, তেমনি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকেও চাঙ্গা করেন। সব অর্জনের মূল নায়ক শ্রমিক। কিন্তু একজন সিমেন্ট ফ্যাক্টরির মালিক এতদিন হাজার হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। অথচ ২/৩ মাস বিনা কাজে তাদের শ্রমিকের বেতন দিতে পারে না এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। দেশের বিত্তবানরা যখন অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তখন এ্যাংকর সিমেন্ট মালিক শ্রমিকদের ছাটাই করছে। তাদের উচিত তাদের শ্রমিকের পাশে দাঁড়ানো।
ছাটাই না করে নিয়মিত বেতন দিয়ে শ্রমিকের পাশে থাকলে একদিকে যেমন মানবতা জাগ্রত হবে, অন্যদিকে শ্রমিকরা তাদের মালিককে প্রভু মেনে নিবে। এতে পরবর্তীকালে শ্রমিকদের কাজে উৎসাহ বাড়বে। মনোযোগের সঙ্গে কর্মে যোগদান করবে। করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিক ছাটাই না করে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করার আহবান জানানো হয় মানববন্ধনে।
ছাঁটাইকৃত শ্রমিকরা ছাড়াও মানববন্ধনে বাংলাদেশ সমাজ তান্ত্রিক দল বাসদের সদস্য সচিব ডাক্তার মনীষা চক্রবর্তীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ ড. উত্তম কুমার দাস বলেন, ‘‘শ্রম আইনের ১২ ধারায় লে-অফের কতগুলো শর্ত আছে৷ তারমধ্যে দুটি শর্ত হলো: মহামারি এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া৷ সরকার কিন্তু করোনাকে বাংলাদেশে এখনো মাহামারি ঘোষণা করেনি৷ আর সরকারতো প্রণোদনার মাধ্যমে শ্রমিকদের তিনমাসের বেতন দিয়েছে৷ আসলে মালিকরা পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন৷ এটা অসৎ উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে৷ আর বেতন ভাতা না দিয়ে লে-অফ করা বেআইনি৷’’
বেতন না দেয়া এবং শ্রমিক ছাঁটাইকে শুধু বেআইনি নয়, অমানবিক বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘কারখানা ভূমিকম্প বা আগুন লেগে ধংস হয়ে গেলে বন্ধ করা যায়৷ সেরকমতো কিছু হয়নি৷ মালিকরা এতদিন ব্যবসা করেছেন তারা কয়েক মাসতো চালিয়ে যেতে পারেন৷ প্রণোদনার টাকা পাইপলাইনে আছে৷ অতিরিক্ত শ্রমিক হলে নিয়ম মেনে তাদের পাওনা ও ক্ষতিপূরণ দিয়ে ছাঁটাই করা যায়৷ কিন্তু সেরকমতো কিছু হয়নি৷ আর শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এবং বেনিফিট দেয়া হচ্ছে না৷ এটাতো অন্যায়৷
এ ব্যাপারে ডাক্তার মনীষা চক্রবর্তী শ্রমিকদের ছাঁটাই প্রসঙ্গে বলেন,শ্রমিক ছাটাই মানবতাবিরোধী। এই করোনা মহামারি দুর্যোগে এ্যাংকর সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ শ্রমিক ছাঁটাই করেছে তা অগ্রহযোগ্য ও দুঃখজনক। শ্রমিকরাও মানুষ তাদের পরিবার পরিজন রয়েছে। তাদের পাওনানাদি না দিয়ে ছাঁটাই অন্যায়। আমি আশা করবো অনতিবিলম্ভে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে পুনঃতাদের বহাল করা হোক।
এব্যাপারে অলিম্পিক সিমেন্ট লিমিটেডের সি ই ও শাহিদ উদ্দিনের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য গ্রহন সম্ভব হয়নি।