ক্ষমতাধর সন্ত্রাসী ও অসাধু শ্রমিক চক্রের নানান কিসিমের ধান্ধায় কাবু শিল্প মালিকরা
শান্ত পরিবেশ না থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীও আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে
শিল্পবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে; শিল্প পুলিশ’র দাবি মালিক ও শ্রমিক নেতাদের
মেট্রোপলিটন পুলিশেরও শিল্প পুলিশের পক্ষে মতামত
শিল্প পুলিশের প্রস্তাবনার ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে
ডেস্ক রিপোর্ট :বরিশালে বিসিক নগরীতে চুরি-ডাকাতি ও সন্ত্রাসীদের হামলা-মামলার কারনে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে এখানকার শিল্প পরিবেশে। এরবাইরেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে ক্ষমতাধর চক্রের নানান কিসিমের ধান্ধা কাবু করে ফেলছে শিল্প মালিকদের। কেউ কেউ আবার শ্রমিক মুখোশের আড়ালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঢুকে মাদকসহ অবৈধ ব্যবসা করায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে অনেক মালিক ও শ্রমিকদের।
বরিশাল থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন অনেকে শিল্প মালিকরা তাই শিল্পবান্ধব পরিবেশ ও ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বরিশালে শিল্প পুলিশের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিসিক কর্মকর্তা,শিল্প মালিক ও সচেতন মহল। যদিও পুলিশ ও র্যাবের সময় উপযোগী পদক্ষেপে চলমান উত্তাপ শিল্প এলাকা এখন অনেকটা ঠান্ডা রয়েছে।
চলমান পদ্মা সেতু নির্মান,সড়ক উন্নয়ন এবং পায়ড়া বন্ধরের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বরিশালে শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়তে শুরু করেছে। তাই বিশেষ নিরাপত্তার জন্য এখানে শিল্প পুলিশ’র ইউনিট চালু করা উচিৎ বলে মত প্রকাশ করেছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাহাবুদ্দিন খান (বিপিএম)।
এদিকে বরিশাল ডিআইজি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন ও দক্ষিাণাঞ্চলের শিল্পায়নের গুরুত্ব বিবেচনা করে শিল্প পুলিশ জোন চালু করার প্রস্তাবনার ফাইল পুলিশ সদর-দপ্তর থেকে স্বরষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত বরিশাল বিসিক শিল্প এলাকাসহ নগরী ও আশপাশ এলাকায় প্রায় ২শত ছোট বড় উৎপাদনমূখী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে অপসোনিন ফার্মা,ফরচুন সু কোম্পানি,এ্যংকর সিমেন্ট ফ্যাক্টরী,রেফকো ফার্মাসহ অন্তত ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান’র উৎপাদন , পন্য রপ্তানি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারায় আশার আলো জেগেছে সাধারণ মানুষ’র হৃদয়ে। বিশেষ করে এ অঞ্চলে কম মূল্যে শ্রমবাজার, পদ্মা সেতু,পায়ড়া বন্দর , ভোলার গ্যাস , সড়ক ও সেতু উন্নয়ন নৌ-পথে কম ভাড়ায় পন্য পরিবহন’র সুবিধা থাকায় শিল্প মালিকরা এ অঞ্চলকে ব্যবসায়িক জোন হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, এসব গুরুত্বপূর্ণ সুবিধার কারনে বিদেশি বিনিয়োগকারীও বরিশাল এসে ব্যবসা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
গত ১০বছর আগেও ধান চাষ ও নদী-খালে মাছ ধরা ছাড়া উল্লেখ করার মতো কোন পেশা এখানে ছিলো না। শিল্প প্রতিষ্ঠান বলতে শুধুমাত্র অপসোনিন,রেফকো ও ইন্দো-বাংলা ফার্মা ছিলো। বর্তমানে ফরচুন সুজ কোম্পানি বরিশাল বিসিকে ব্যবসা শুরু করায় নতুন মাত্র যোগ হয়েছে শিল্প পরিবেশে। হাজার হাজার বেকার জনগোষ্ঠি কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে। এর দেখাদেখি অনেকেই ছোট বড় ব্যবসা করার স্বপ্ন বাস্থবায়নে নেমে পড়েছেন।
চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, বিসিকি’র শিল্প উন্নয়ন খবর মিডিয়ায় জানতে পেরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ইউরোপ থেকে এখানে সরেজমিনে এসে ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে একদিকবার। পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে তারা ব্যবসা করবেন বলে জানিয়েছেন একাদিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক। কিন্তু এখানকার রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে প্রায় ক্ষমতাধর সন্ত্রাসীরা এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে নানান কিসিমের ধান্ধা করে বেড়াচ্ছে। চাঁদা না পেলে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোস তৈরি করার ষড়যন্ত্র পর্যন্ত করছে এরা। চুরি ডাকাতি তো লেগেই থাকে বিসিক নগরীতে।
সম্প্রতি বিসিকের রাস্তা-ড্রেন ও নিরাপত্তা সীমানা প্রাচীর নির্মানে প্রায় শত কোটি টাকার চলমান কাজ নিয়ে বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়ে শিল্প মালিকরা। এলাকার নিরীহ মানুষকে ভূল বুঝিয়ে শিল্প মালিকদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও সন্ত্রাসীদের মহড়া তো চলতেই থাকে।
নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে শিল্প কলকারখানায়। চলমান এ সংকট উত্তরনে এবং ব্যবসার ভবিষ্যতে পরিবেশে শৃংখলা ধরে রাখতে শিল্প পুলিশের দাবি তুলেছেন বরিশাল বিসিক নগরীর উপ-মহাব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ বলেন বিসিকে বর্তমানে ১৭৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। চুরি ডাকাতির কারনে এদের নিরাপত্তা দেওয়া যাচ্ছে না। শিল্পকে উপযুক্ত পরিবেশ দিতে না পারলে সম্ভাবনাময় বরিশালে কলকারখানা গড়ে উঠবে না। একইসাথে শ্রমিকদের অনিয়মিত বেতন-ভাতা, শ্রমিকদের সঙ্গে স্টাফদের দুর্ব্যবহার, অনিরাপদ কর্মপরিবেশ, তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন ও তুচ্ছ কারণে শিল্প এলাকা অনেক সময় অশান্ত হয়। শিল্প পুলিশ থাকলে কৌশলে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমস্যা নিষ্পত্তি করা হয়। শিল্প পুলিশ কারখানা এলাকায় কমিউনিটি পুলিশিং’র মাধ্যমেও নানা সমস্যা সমাধান করে থাকে। বিদেশিদের পাশাপাশি ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের নিরাপত্তায় তারা ভূমিকা রাখেন তারা।
ফরচুন সু কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানান,শিল্প পুলিশের দাবিতে ডিআইজি ও শিল্প মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেছি। বরিশালে ব্যবসার পরিবেশ ফেরানো ও আমাদের নিরাপত্তায় জন্য শিল্প পুলিশ জরুরী হয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হলে বরিশাল মেট্রো পুলিশ ও র্যাবের সহায়তায় পরিবেশ শান্ত করা হয়। আর কোম্পানির ভেতরে কোন অবৈধ ব্যবসা চলছে কিনা তা আইনি জটিলতার কারনে অনেক সময় ব্যবস্থা নিতে পারছে না প্রশাসন। তবে শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভেতরে অবৈধ ব্যবসা হচ্ছে কিনা বা কোন কারনে ষড়যন্ত্র ও অসন্তেষ যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে শিল্প পুলিশ। তাই এখানে শিল্প পুলিশ থাকা উচিৎ বলে মত দিয়েছেন সচেতন মহল।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাহাবুদ্দিন খান বলেন, বরিশালে বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। যেহেতু পদ্মা সেতু,পায়ড়া বন্দর ও এ অঞ্চলের রাস্থাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে,সেহেতু এখানে বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। তাদের নিরাপত্তার জন্য শিল্প পুলিশ প্রয়োজন আছে। কারন তারা স্পেশাল ভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করবে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রের শিল্প পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গুরুত্ব বিবেচনা করে বরিশালে শিল্প পুলিশের ইউনিট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রস্তাবনার ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিল্প পুলিশের প্রধান ডিআইজি মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, বরিশালে শিল্প পুলিশের ইউনিট গঠনের বিষয়ে আমাদের নজর আছে। আমরাও চাচ্ছি সেখানে শিল্প পুলিশ দেওয়া হোক। তবে শিল্প ও কলকারখানার মালিকদের জোরালো দাবি থাকলে এবং মিডিয়াতে এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হলে আমাদের জন্য সহজ হবে।