স্টাফ রিপোর্টার,
দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের চাপ। মহাসড়কে স্বল্প ও উচ্চ গতির যানবাহন চলাচলে সমন্বয়হীনতা ও থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যানবাহনের কারণে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
নানা উদ্যোগের পরও মহাসড়ক থেকে সরানো যাচ্ছে না এসব অবৈধ যানবাহন। নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি এ অঞ্চলের যানবাহনের বেপরোয়া গতি ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল। সেক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে হাইওয়ে পুলিশের নামমাত্র দায়িত্ব পালন নিয়ে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোটা বরিশাল বিভাগে হাইওয়ে থানা পুলিশের বিস্তার ও সক্ষমতা কম থাকায় মহাসড়কের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। কারণ হাইওয়ে পুলিশ বর্তমানে বিভাগের এক হাজার কিলোমিটার জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়কের মধ্যে মাত্র অর্ধশত কিলোমিটারের মতো সড়কের দেখভাল করে। তাই অবৈধ যানবাহন ও দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়েতে পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর দাবি করেছেন পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের।
অভিযোগ থাকলেও এ ব্যাপারে বরিশালের হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কিছুই বলেননি। তবে অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সক্ষমতা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ২০২০-২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বরিশাল সড়ক জোনের আওতায় দুটি সার্কেল রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও ভোলা সড়ক বিভাগের সমন্বয়ে বরিশাল সড়ক সার্কেল এবং পটুয়াখালী ও বরগুনা সড়ক বিভাগের সমন্বয়ে পটুয়াখালী সড়ক সার্কেল।
বরিশাল জোনের আওতায় জেলা মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে। যার আওতাধীন মোট মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১৬০৩ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার। এরমধ্যে বরগুনা ও পিরোজপুর ব্যতীত চার জেলায় মোট জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে ১২৭ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার। এছাড়া ছয় জেলায় আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে ২৯০ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং জেলা মহাসড়ক রয়েছে ১১৮৫ দশমিক ৯১ কিলোমিটার।
এরমধ্য মাদারীপুর জোনের আওতায় গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা থেকে বাবুগঞ্জের রাকুদিয়ার নতুনহাট পর্যন্ত (প্রায় ৩৩ কিলোমিটার) মহাসড়কের দেখভাল করে গৌরনদী হাইওয়ে থানা। বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার ওসি শেখ মো. বেলাল হোসেন বলেন, পরের অংশে স্ব স্ব থানা পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। তবে পিরোজপুর জেলার মহাসড়কের কিছু অংশ কাটাখালী হাইওয়ে পুলিশ দেখভাল করেন।
বাগেরহাটের কাটাখালী হাইওয়ে পুলিশের ওসি মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা পিরোজপুর জেলার মধ্যে আনুমানিক আট কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক দেখভাল করি, বাকিটা জেলার স্ব-স্ব থানা পুলিশ দেখভাল করেন। সে হিসেবে জেলা মহাসড়কের হাজার কিলোমিটার পথ বাদ দিয়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক মিলিয়ে ১২ ভাগের একভাগ পথের দেখভাল করে হাইওয়ে পুলিশ।
বরিশালের ছয় জেলার মধ্যে থাকা একটি সিটি কর্পোরেশন, ২৬টি পৌরসভা ও ৪২টি উপজেলার বিভিন্ন সড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও রেঞ্জ পুলিশের আওতাধীন ছয় জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। আর এ কাজের সঙ্গে স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রে থাকা বিভিন্ন ক্যাটাগরির মহাসড়কেও কার্যক্রম পরিচালনা করছে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা।
উভয় ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্তমান জনবল দিয়ে সিটি কর্পোরেশন, পৌরশহর, উপজেলা সদরগুলোর ট্রাফিক ব্যবস্থা দেখভাল করতেই হিমশিম খেতে হয়। সেখানে মহাসড়কের দেখভাল করাটা অনেকটাই কঠিন হয়ে পরেছে। তারপরেও সমন্বয় করে মহাসড়কে নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে তা অপ্রতুল হওয়ায় অবৈধ যানবাহন রোধ, গতি নিয়ন্ত্রণে শতভাগ কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জনবল সংকটের মধ্যেই গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশের আওতাধীন এলাকার মধ্যে তিনটি স্থানেই নিয়মিত চেকপোস্ট বসাচ্ছেন রেঞ্জ পুলিশের আওতাধীন ট্রাফিক বিভাগ। ফলে শুধু দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে যাওয়া ছাড়া বাকিটা অলস সময় কাটাতে হচ্ছে গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশকে। যে কারণে রেঞ্জ পুলিশের আওতাধীন ট্রাফিক বিভাগকে অন্যত্র কাজে লাগানোর দাবি উঠেছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শেখ মো. সেলিম বলেন, দিনে দিনে বরিশালে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে, তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। এখন বরিশাল শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন পয়েন্টে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করতে হচ্ছে। তার ওপর গোটা মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যদিয়ে যাওয়া জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়কের দায়িত্বও আমাদের পালন করতে হচ্ছে। জনবল সংকটের মধ্যে বর্তমানে ট্রাফিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখাটাই আমাদের সদস্যদের জন্য কষ্টকর হয়ে পরেছে।
হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর জোনে সদ্য যোগদানকৃত পুলিশ সুপার মো. মাহাবুবুল আলম বলেন, গোটা দেশের সঙ্গে বরিশাল অঞ্চলেও দ্রুত হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। আমরা আশা করছি, এতে করে মহাসড়কে চলাচলকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি সার্বিক বিষয়ে নজরদারি বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়টি আমাদের কারও হাতে নেই। তবে এটি রোধে প্রতিনিয়ত আমরা সুবিধাভোগীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা ও সেমিনার করছি। প্রয়োজনে মহাসড়কে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সচেতনতামূলক প্রচারণার কার্যক্রম বাড়ানো হবে।
সংশ্লিষ্ট নির্ভারযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, খুব শিগগিরই হাইওয়ে পুলিশে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। যেখানে হাইওয়ে অঞ্চল বা রিজিওনের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি থানা, যানবাহন ও সদস্যের সংখ্যা বাড়ানো হবে। প্রস্তাবে থাকা নতুন ৭২ থানার মধ্যে বরিশাল বিভাগে রয়েছে নয়টি। যার মধ্যে পটুয়াখালীর পায়রা, লেবুখালী ও কুয়াকাটা, ঝালকাঠির গাবখান ও দপদপিয়া, পিরোজপুর সদর, বরগুনার আমতলী, ভোলার বাংলাবাজার ও চরফ্যাশনে হাইওয়ে থানা করার পরিকল্পনা রয়েছে।