পদ্মা সেতুর প্রভাব নৌরুটে পড়লেও তা নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন বরিশালের নৌযান মালিকরা। উল্টো তাদের দাবি স্বল্পখরচে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের বিলাসবহুল লঞ্চগুলোতে যাত্রীরা ফিরে আসতে শুরু করেছে।
অতীতে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের নৌযান ব্যবসায়ীরা তাদের কাক্সিক্ষত জাহাজ নির্মাণের জন্য বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনার ওপর নির্ভর ছিলেন। এখন বরিশালেই জাহাজ নির্মাণ শিল্পে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। গত এক দশকে কীর্তনখোলা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে প্রায় ১০/১২টি ডকইয়ার্ড। এসব ডকইয়ার্ডে নির্মাণ করা হচ্ছে ছোট-বড় লঞ্চ, যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী জাহাজ। ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে চলাচলকারী অধিকাংশ বিলাসবহুল নৌযান তৈরি হয়েছে এসব ডকইয়ার্ডে। দেশী-বিদেশী প্রযুক্তির মিশ্রণে স্থানীয় শ্রমিকরাই নির্মাণ করছেন এসব জলযান। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে আশা জাগাচ্ছে লঞ্চ ও পণ্যবাহী জাহাজ নির্মাণ শিল্প। এখানে গড়ে ওঠা ডকইয়ার্ডগুলো স্থানীয় বেকারত্ব দূর করতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বছরে প্রায় তিন হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হচ্ছে ডকইয়ার্ডগুলোতে। শুধু তা-ই নয়, স্থানীয় অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করছে এ শিল্প। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, গ্যাস, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত এবং স্বল্প সুদে ঋণ পেলে বরিশালে আন্তর্জাতিকমানের জাহাজ নির্মাণ সম্ভব বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনার আশা জাগিয়েছে বরিশালের জাহাজ নির্মাণ শিল্প।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর বেলতলা খেয়াঘাট এলাকার কীর্তনখোলা তীরবর্তী সুরভী ও সুন্দরবন লঞ্চ কোম্পানির শিপইয়ার্ড প্রায় এক যুগেরও অধিক সময় ধরে লঞ্চ ও পণ্যবাহী কার্গো নির্মাণ করে আসছে। দুটি শিপইয়ার্ডে বছরে প্রায় ২/৪টি চারতলা লঞ্চ তৈরি করা হয়। পাশাপাশি এ্যাডভেঞ্চার কোম্পানির নিজাম শিপইয়ার্ড ও এম খান শিপইয়ার্ড রয়েছে সাবেক দপদপিয়া ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকায়। এছাড়া কেডিসি সংলগ্ন চাঁদমারী এলাকায়ও ছোট-ছোট পণ্যবাহী ট্রলার ও কোস্টার নির্মাণের ডকইয়ার্ড রয়েছে। পাশাপাশি বরিশাল জেলার নিকটবর্তী স্বরূপকাঠী থানায় সন্ধ্যা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে বড় বড় কার্গো নির্মাণের শিপইয়ার্ড।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরই ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটসহ পটুয়াখালী রুটে বৃহৎ ও বিলাসবহুল যাত্রীবাহী নৌযান যোগ হচ্ছে। এসব লঞ্চের অধিকাংশই নির্মিত হয় বরিশাল নগরীর বেলতলা খেয়াঘাট শিপইয়ার্ডে। এর মধ্যে রয়েছে সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানি ও সুরভী লঞ্চের ক্রিসেন্ট নেভিগেশন কোম্পানি। শুধু নতুন লঞ্চ নির্মাণই নয়; বিলাসবহুল লঞ্চগুলো মেরামতের জন্যও এ শিপইয়ার্ডগুলোয় শ্রমিকরা সবসময় ব্যস্ত সময় পার করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কীর্তনখোলা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে জাহাজ নির্মাণ শিল্প। এখানে ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক ছোট-বড় যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান নির্মিত হয়েছে। সম্পূর্ণ বেসরকারী খাতে গড়ে ওঠা এ শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় তিনশ’ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। প্রতি বছর কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয়টি জাহাজ নির্মাণ করা হয় বরিশালে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এ শিল্পে বিদ্যুত ঘাটতিসহ ভ্যাট ও আগাম আয়করের খড়গ রয়েছে। অথচ মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে ভোলায় গ্যাস থাকলেও গ্যাসনির্ভর এ শিল্পে নেই কোন গ্যাস সুবিধা। ফলে প্রতিনিয়ত এসব বিরূপ পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করেই টিকে থাকতে হচ্ছে বরিশালের জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে। ভোলার গ্যাস বরিশালে আসলে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে খরচ অনেক কম হতো।