স্টাফ রিপোর্টার ॥ একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ড করে শিরোনাম হচ্ছে বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান সুজন। আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, ফেরিঘাট, খেয়াঘাট, বাস স্ট্যান্ড, অবৈধ ড্রেজারসহ বিভিন্ন স্থানসহ সব কিছু থেকে চাঁদাবাজি তার পেশায় পরিণত হয়েছে।রেনু পোনা আটকে বিপুল পরিমান অর্থ আয় করেছে অবৈধভাবে। চাঁদাবাজী, বরিশালের সাবেক জেলা প্রশাসককে হুমকিসহ নানান অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়।
দীর্ঘদিন যাবৎ গাঢাকা দিয়ে পালিয়ে ফের প্রকাশ্যে এসে আবারো শুরু হয় সুজনের চাঁদাবাজী।
১৫ মে ছাত্রলীগ কর্মী রাহাত সুজনের নিকট পাওনা টাকা চাইতে গেলে সুজনবাহিনী রাহাতের ওপর হামলা করে। হাতুড়ি দিয়ে সুজন রাহাতকে পিটায় এতে রাহাতের মাথা ফেটে রক্ষক্ষরন শুরু হয়। স্থানীয় লোকজন রাহাতকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাহাতকে ঢাকার রেফার করে শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসকরা। রাহাত এখন জিবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে।
নামধারী বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতা সুজন চাঁদাবাজি আর রেনুপোনা আটকে টাকা কামাই করে অল্পদিনে হয়ে যান কোটিপতি।
জিরো থেকে হিরো হওয়া এই ছাত্রলীগ নেতার হাতে গোটা পুর্বাঞ্চলীয় লোকজন জিম্মী। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে দেয়া হয়
হাতুড়ি পেটা।
বরিশালের পূর্বাঞ্চল থেকে পাচার হয় চিংড়ি’র রেনু সেখানে বড় ভাগা নেন আশিকুর রহমান সুজন। যেখানে সরকারের নিষেধাজ্ঞা সেই কাজের প্রধান সহযোগী তিনি। আশে ইলিশের বাচ্চা(চাপিলা) সেখানে হানা দিয়ে বিটমানি চালু করেন সুজন। প্রতি ট্রাক থেকে তাকে দিতে হবে টাকা। তার সহযোগী নিয়োগ করেন সর্বত্র। সহযোগীদের মাধ্যমে এবং সুজন সরাসরি চাঁদাবাজী করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে । বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সামনে কাচকি মাছের ট্রাক থামায় সুজনের সহযোগী রথি ও সুজন। ট্রাক থামিয়ে চাঁদা আদায়কালে ট্রাক ড্রাইভারের সাথে বাকবিতান্ডা বেজে যায় তাদের সাথে। তখনই বন্দর থানা পুলিশ দুজনকে আটক করে । মামলা নেয় বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তবে পর্দার আড়ালে থেকে যায় সুজন।
নেহালগঞ্জ ফেরিঘাট দখল আর সেই ঘাট থেকে কোটি টাকার রেনু পোনা আটকে লাখ লাখ টাকা আদায়ের মূল হোতা আশিকুর রহমান সুজন।
সুজন খুব ধুর্ত টাইপের লোক। কোন অনুষ্ঠান আসলেই বরিশাল নগরীতে তার বড় বড় সাইজের বড় বড় পোষ্টারের ভিড়ে অন্যদের পোষ্টার হারিয়ে যায়। কিন্তু তার হাত থেকে রক্ষা পায় না বরিশালের পূর্বাঞ্চলের কোন কিছু। অবৈধ জাটকা ইলিশ পাচার থেকে শুরু করে দালালী, ইটের ভাটায় হানাসহ নানাবিধ স্থান থেকে মাসোয়ারা আসে সুজনের জন্য।
বন্দর থানা এলাকার রাজনৈতিক নেতারা মনে করেন, সুজনের মত নেতার কারনেই আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সুজন। উপজেলার পূর্বাঞ্চলে বাহিনী গড়ে তুলে ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, ফেরিঘাট, খেয়াঘাট, বাস স্ট্যান্ড, অবৈধ ড্রেজার সব কিছু থেকে চাঁদাবাজি তার পেশায় পরিণত হয়েছে। পুলিশ জানায়, লাহারহাট এলাকা থেকে ট্রাকে কাচকি মাছ নিয়ে যাওয়ার সময় দিনারের পুল এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান সুজন তার অনুসারি কর্মী রাসেল আকনসহ ৭/৮ জন মিলে ট্রাক থামিয়ে সাহেবেরহাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী রিয়াজকে মারধর করে ২০ হাজার টাকা ও ২টি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। এসময় রিয়াজকে তারা হুমকি দিয়ে বলে, এই এলাকা দিয়ে মাছের গাড়ি যেতে হলে প্রতি রাতে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এভাবে হাজারো ঘটনার জন্ম দিয়েছে সুজন।
বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ড আর ডজনখানেক মামলা নিয়ে গাঢাকা দেয় সুজন। সম্প্রতি আবার প্রকাশ্যে এসে শুরু করে তার পুর্বের চাঁদাবাজীসহ অপরাধ মুলক কর্মকান্ড।
সর্বশেষ ১৫ মে সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়ার মোল্লাবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আশিকুর রহমান সুজন তার সহযোগীদের নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী রাহাতকে হাতুড়ি পিটা দিয়ে গুরুতর আহত করে। গুরুতর হওয়ায় রাহাতকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।অবস্থার আরো অবনতি হলে রাহাতকে ১৫ মে রাতেই ঢাকায় রেফার করা হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য।
এদিকে রাতেই বন্দর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রাহাতের বাবা খবির ডাক্তার ছাত্রলীগ নেতা সুজনসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন । সেই মামলায় সুজনের দু অনুসারী রবিন ও মেহেদীকে গ্রেপ্তার করে।
এ ব্যাপারে বন্দর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, রাতে রাহাতের ওপর হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। এবং রাহাতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে সুজনসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই মামলায় সুজনের ২ অনুসারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
বন্দর থানা পুলিশের একটি সুত্র জানায়,সরকারি দল আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে সুজন চাঁদাবাজী এবং বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে। পুলিশ সুজনের অপকর্ম ও চাঁদাবাজী বন্ধের জন্য তৎপর রয়েছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান সুজন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রাহাতের সঙ্গে ভোলার তুহিনের লেনদেন আছে। রাহাতের কাছে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা পায় তুহিন। তুহিন ও তার ছোটভাই ছাত্রলীগের শুভ এ বিষয়ে আমাকে অবহিত করে। এরপর রাহাত ক্ষিপ্ত হয়ে ফেসবুকে নানা পোস্ট দিতে থাকেন। রাহাতকে ফেসবুকে মিথ্যাচার করতে নিষেধ করা হয়েছিল, কিন্তু শোনেনি। না শোনার কারনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদ থেকেই মারামারির ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থরে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হঠাৎ করে সুজন কোমড় থেকে হাতুড়ি বের করে রাহাতের মাথার ওপর বাড়ি মারতে শুরু করেন। ফলে ঘটনাস্থলেই শুয়ে পরেন রাহাত।
ঘটনার পরই লোকজন উত্তেজিত হয়ে সুজনকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে তাকে যুবলীগের এক নেতা অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত করে বরিশালে নিয়ে আসেন।
এদিকে বন্দর থানা পুলিশ সুজনসহ মামলায় যাদের দায়ী করে আসামী করা হয়েছে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।