দক্ষিণাঞ্চলে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি :যানজটে নাকাল বরিশাল নগরবাসী
প্রকাশ: ৭ মার্চ, ২০২৩, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
নাজমুল হক সানী :
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর স্বাভাবিক কারণেই বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে যানবাহনের চাপ অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ থেকেই সেতু চালুর আগের চেয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রিপ বেড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু নতুন কোম্পানির বাস। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে ১২ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক বরিশাল সিটি করপোরেশনের ওপর দিয়ে অতিক্রম করেছে। এই সড়কে দূরপাল্লার পরিবহন যেমন চলাচল করে তেমনি শহরের অভ্যন্তরের ক্ষুদ্র পরিবহনগুলোও চলাচল করে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে সড়কটিতে ৪/৫ গুণ গাড়ির চাপ বেড়েছে। অথচ প্রস্থে সংকীর্ণ সড়কটি প্রশস্ত করা হয়নি।সব মিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের এই একমাত্র প্রবেশ পথটিতে এখন যানবাহনের আধিক্য চরমে। এসব যানবাহন নিয়েই শুরু হয়েছে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও অরাজক পরিস্থিতি। একদিকে বাস পার্কিংয়ের জায়গার সীমাবদ্ধতা। অন্যদিকে নিয়ম বর্হির্ভূতভাবে মূল সড়কে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে যাত্রী ওঠানামা করানো। সবমিলিয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এই প্রবেশ পথটিতে যানজট লেগেই রয়েছে। এক কথায় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এই টার্মিনালে চলছে চরম বিশৃঙ্খলা।বরিশাল ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোন পরিবহন যাত্রী বহন করতে পারবে না। বিষয়টি নিয়ে তারা একাধিকবার বাস মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং অনেক গাড়িকে মামলাও দিয়েছেন। এরপরও অনেক পরিবহন এ নিয়ম ভঙ্গ করছেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অপরদিকে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা এমন অবস্থার জন্য ট্রাফিক বিভাগকে দায়ী করে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বহীনতার কারণে এ রকম পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালু হবার পর শুধু নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন শতাধিক বাসের ট্রিপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য জেলা ও উপজেলা থেকে ছেড়ে আসা কয়েকশ’ বাস। এসব বাসের মধ্যে বেশির ভাগই কিছু সময়ের জন্য হলেও নথুল্লাবাদ টার্মিনালের সামনে যাত্রা বিরতি করে। এ বিরতির সময় পাঁচ মিনিট থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর এ সময়ের মধ্যেই বাসে যাত্রী ওঠা-নামা করে থাকেন। টার্মিনাল থেকে যেসব বাস তথা পরিবহন ছেড়ে যাবার জন্য বের হয় তারাও সড়কে অবস্থান করে যাত্রী বহন করছে। এতে করে টার্মিনালে দিন রাত যানজট লেগেই রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নামিদামী কয়েকটি পরিবহন ব্যতিত অধিকাংশ পরিবহনই যাত্রী নিয়ে টার্মিনাল ছাড়ার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও সড়কে অবস্থান করে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করে থাকে। অভিযোগ রয়েছে বাস মালিক সমিতি, শ্রমিক সংগঠন ও ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করেছে পরিবহনগুলো।এ ব্যাপারে বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার বলেন, আমরা কোন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। আমরা এ কাজের সমর্থন করি না। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের কিন্তু তারা বিষয়টি ভালোভাবে দেখভাল করছেন না।
তিনি আরও বলেন, বাস এবং ট্রিপের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। কিন্তু জায়গা তো আর বৃদ্ধি পায়নি। তাই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।বরিশাল নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনালের দুরবস্থা বাসিন্দা গোলাম সরোয়ার বলেন, মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের টেনে-হিচড়ে বাসে তুলে আটকে নিয়ে যায়। এসব করতে গিয়েই শহরের যানজটের কারন হয়ে দাড়ায়। তাছাড়া রুপাতলীতে যেসব ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করেন তারা ব্যস্ত থাকেন মোটরসাইকেল ধরতে। অথচ বাসগুলো যে নিয়ম না মেনে যা খুশি তাই করছে তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, বাস টার্মিনালের ভিতরে সংস্কার কাজ চলায় বাস ভিতরে রাখা যাচ্ছে না। এজন্য সড়কে বাস দাঁড়াচ্ছে। উন্নয়নমূলক কাজে সাম্যক কিছুটা ভোগান্তি পোহাতেতো হবেই। সিটি মেয়র রূপাতলী বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আমরাও তার সিদ্ধান্তে একমত।মহানগর ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তানভীর আরাফাত বলেন, নথুল্লাবাদ ও রূপাতলীর দিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। বাস রাস্তায় দাঁড় করিয়ে যাত্রী বহনের সুযোগ নেই। তারপরও যাত্রীদের স্বার্থে দুই এক মিনিট সুযোগ দেই। কিন্তু সেই সুযোগটি যদি তারা বেশি সময়ের জন্য নিয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বরিশাল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন জানান, নগরীর প্রবেশদ্বার গড়িয়ারপার থেকে দপদপিয়া সেতু পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার মহাসড়ক সম্প্রসারণে ৫২ কোটি টাকার টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। গড়িয়ারপাড়-দপদপিয়া ১২ কিলোমিটার মহাসড়কের কোথাও ২৪ ফিট আবার কোথাও একটু বেশি প্রশস্ত। নতুন প্রকল্পের আওতায় এই মহাসড়ক ৪৮ ফিট থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত করা হবে। মাঝে থাকবে এক মিটার একটি ডিভাইডার। কিছু অংশে ড্রেনও ধরা আছে। এই কাজ সম্পন্ন হলে নগরীর অভ্যন্তরের যানজট স্থায়ীভাবে নিরসন হবে বলে আশা তার।