সাব্বির আলম বাবুঃ
নদী ও সাগরের লবনাক্ততা এবং বিরুপ জলবায়ু সহিষ্ঞু ঐতিহ্যবাহী গোলপাতা গাছ দেশের উপকূলীয় এলাকার প্রাকৃতিক শোভাবর্ধনের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য ও নদী ভাঙ্গনরোধে ভূমিকা রাখে।কিন্তু কিছু গাছ পাচারকারী ও অসাধু বনকর্মীদের যোগসাজসে বনাঞ্চলের অন্যান্য গাছের সঙ্গে গোলপাতাও অবাধে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব হারানোর সাথে সাথে অতি প্রয়োজনীয় বিরুপ জলবায়ু সহিষ্ঞু বৃক্ষ হারাচ্ছে। দেশের দক্ষিনাঞ্চল সহ উপকূলীয় এলাকার দরকারী এই গোলপাতা গাছ প্রয়োজনীয় রক্ষনাবেক্ষন,খাল সহ অন্যান্য জলাশয় ভরাট, চাষাবাদের অভাব, গাছ পাচারকারীদের দৌরাত্ম ইত্যাদি নানাবিধ কারনে বিলুপ্ত হচ্ছে। দেশের সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলের খাল-বিল-নদীর তীরে এক সময় প্রচুর গোলপাতা গাছের শোভাবর্ধনকারী,নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যেত। কালের পরিক্রমায় সেগুলো এখন আর পরিলক্ষিত হয়না। তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়,গাছের নাম গোলপাতা হলেও এটির আকার-আকৃতি অনেকটা নারিকেল গাছের মতো। উচ্চতা প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুটের বেশী। সাধারনত স্বল্প লবনাক্ত পলি যুক্ত এগুলো ভালো জন্মায়। উপকূলীয় জনপদের সবখানেই এমন কি রাখাইন উপজাতি, নিম্নবিত্ত পরিবারের ঘরের ছাউনি হিসাবে গোলপাতার ব্যবহার সমাদৃত ছিল। এছাড়াও গোলপাতা গাছের রস দিয়ে সুস্বাদু খাওয়ার গুড় উৎপাদিত হয়,উপকূলীয় উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন গোলপাতার রস দিয়ে চোলাই মদ তৈরী করে তাদের নানাবিধ সংসকৃতি ও উৎসবে ব্যবহার করে, গাছের নিম্নাংশ দিয়ে নিউজপ্রিন্ট,হার্ডবোর্ড,আয়োডিন যুক্ত লবন উৎপাদন করা যায়। গোলপাতা গাছ চাষাবাদ কম খরচে অত্যন্ত লাভজনক,সহজসাধ্য,এটি ভাইরাস জনিত রোগ থেকে মুক্ত তাছাড়া এটি চাষে সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয়না,তেমন একটা পরিচর্যাও লাগেনা। গোলপাতার বীজ সংগ্রহ করে নিচু জমিতে পুতে রাখলে তার থেকে চারা গজায়। কিন্তু বনবিভাগ নতুন করে গোলপাতা গাছ আবাদ বা চাষের কোন উদ্যেগ আজও নেয়নি। উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার জমি অনাবাদী না রেখে দেশের প্রয়োজনীয় গুড়ের চাহিদা মেটানো, নিউজপ্রিন্ট,হার্ডবোর্ড তৈরী সর্বোপরি নদীভাঙ্গনরোধ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গোলপাতা সংরক্ষন এবং চাষাবাদ করা বিরাট সহায়ক হবে বলে বিজ্ঞ মহল মনে করেন।