রক্তাক্ত সাংবাদিকতা : খুনীদের হাত থেকে বেচেঁ যাওয়া এক সাংবাদিকের নাম নোমানী
প্রকাশ: ২৬ জুন, ২০২২, ১২:২৮ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
*কবর উচ্ছেদ ও কালিমা লেখা তোরন উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জন্যই খুনের পরিকল্পনা .
* খুনের পরিকল্পনাকারীদের সাথে হাত মিলায় জাল টাকা ব্যবসায়ী ও গরু -ছাগল চোর চক্র.
*কারা এই হামলাকারী?
* হামলার বিচার দাবীতে দেশ -বিদেশে প্রতিবাদ -মানববন্ধন.
রাজাপুর থেকে ফিরে নাজমুল হক /নাঈম:
পেশাগত কাজ করতে গিয়ে প্রায় সন্ত্রাসীদের মারধরের শিকার এমনকি খুনের শিকার হচ্ছে সাংবাদিকরা। সাংবাদিক সুরক্ষায় দেশে বিশেষ কোনো আইন নেই। সাংবাদিক সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের এখন আর কোন বিকল্প নাই।
গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য, হাসপাতাল ,মামলার কপি ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৩ জুন ‘২২ তারিখ বিকেলে ঝালকাঠী জেলার রাজাপুর উপজেলার চল্লিশকাহনিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে বরিশাল ফিরছিল দৈনিক শাহনামার প্রধান বার্তা সম্পাদক, বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের যুগ্ন সম্পাদক, বরিশাল অনলাইন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানী। তার মাকে স্থানীয় বাজার থেকে খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করে দিয়ে জাহিদের দোকানে গিয়ে বসেন নোমানী। চায়ের অর্ডার দেন তিনি। ড়ড়ঃ০ড়মমকাপে চুমুক দেয়ার আগেই দেলোয়ার ,আলম, ফজলে হক,কালু মোল্লা,হোসেন আলী,ফেরদৌস,আমিনুল ও দুলালের নেতৃত্বে একদল খুনী চক্র চাইনিজ কুড়ালসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে সাংবাদিক নোমানীর উপর হামলা করে। নোমানীর মাথায় চাইনিজ কুড়াল দিয়ে খুন করার জন্য কুপিয়েছে খুনিরা।
চল্লিশকাহনিয়া হাজি বাড়ি মসজিদের অবৈধ কমিটি ও উল্লেখিত চক্রটি মসজিদ সংলগ্ন কালেমায়ে তাইয়েবা,আল্লাহু ও মুহাম্মদ লেখা একটি গেট ও অর্ধশত বছরের একটি কবরস্থান উচ্ছেদের জন্য দেলোয়ার ,আলম, ফজলে হক,কালু মোল্লা,হোসেন আলী,ফেরদৌস,আমিনুল ও দুলালসহ চক্রটি কাজ করছিল। এই খুনি চক্রটি প্রশাসনের নিকট আবেদন করে কবর উচ্ছেদ ও কালেমায়ে তাইয়েবা,আল্লাহু ও মুহাম্মদ লেখা একটি গেট ও অর্ধশত বছরের একটি কবরস্থান উচ্ছেদের পরিকল্পনা করে।
ছবি : সংগ্রহিত
এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ৩০ মার্চ ২২ তারিখ স্থানীয় নীরিহ সাধারন মানুষ ও মুসুল্লীরা সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ করেন ।
ক্যাপশন : ৩০ মার্চ ২০২২ তারিখ চল্লিশকাহনিয়া হাজি বাড়ি মসজিদের দক্ষিন পাশে কবর উচ্ছেদ ও কালিমা লেখা গেট উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের চিত্র। ছবি :রহিম রেজা।
এই সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভের সংবাদ ৩১ মার্চ ‘২২ তারিখ প্রকাশ করেন সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানীর সম্পাদিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বরিশাল খবরে।
ক্যাপশন: বরিশাল খবরে প্রকাশিত সংবাদ ।
সংবাদটি প্রচারের পরই খুনি চক্র এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সাংবাদিক নোমানীকে খুন করারজন্য দফায় দফায় মিটিং করে ।
বরিশাল খবরে সংবাদ প্রকাশের পর ঐ খুনি চক্রটি কালেমায়ে তাইয়েবা,আল্লাহু ও মুহাম্মদ লেখা গেট ও অর্ধশত বছরের কবরস্থান উচ্ছেদের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে সাংবাদিক নোমানীকে খুন করার মিশনে নেমে পড়ে।
ক্যাপশন : মৃত ভেবে অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
তারই ধারাবাহিকতায় ৩ জুন ‘২২ তারিখ সাংবাদিক নোমানীকে খুন করার জন্যই চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়েছে নোমানীকে। এ সময় বাজারে থাকা তার মা ও বোন নোমানীকে বাচাঁতে এলে তাদেরকেও মারপিট ও কোপানো হয়। সাংবাদিক নোমানীর মাতা এতে গুরুতর আহত হয় এবং তাকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে ফেলা হয়। সাংবাদিক নোমানীর মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে খুনি চক্র উল্লাস করে চলে যায়।
ক্যাপশন :হামলাকারী দুলাল,আমিনুল,ফজলে হক সহ অন্যান্যদের একাংশ।
ঘরটার পর পরই স্থানীয় লোকজন সাংবাদিক নোমানীকে প্রথমে রাজাপুর তারপরে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। করা হয় অপারেশন। হামলার পর অজ্ঞান হয়ে পড়েন নোমানী। বার বার জ্ঞান ফিরে পান আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
চিকিৎসকদের সফল অপারেশন ও দ্রুত চিকিৎসায় জ্ঞান ফিরে নোমানীর।
রক্তাক্ত নোমানী, রক্তাক্ত সাংবাদিকতা. ছবি :সায়েম আকন
রাত দশটার দিকে সংবাদ ছড়িয়ে পরে সাংবাদিক নোমানীর মৃত্যু হয়েছে ।শত শত লোকজন ভিড় করে হাসপাতালে।
আল্লাহর রহমত, মানুষের ভালোবাসা ও দোয়ায় তিনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। যারা সাংবাদিক নোমানীকে দেখেছেন তারাই কেঁদেছেন রক্ত আর আঘাতের ভয়াবহতা দেখে। আঘাতের ভয়াবহতা দেখেই লোকজন মনে করেছিল নোমানী আর নেই এই পৃথিবীতে।
ক্যাপসন : রাজাপুর হাসপাতালে প্রাথমিক ভাবে রক্তঝড়া ছবিটি ক্যামেরায় ধারন করেছেন সাংবাদিক সায়েম আকন।
নোমানীকে ৩ জুন শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৭ জুন শেরেবাংলা থেকে ছাড়পত্র নিয়ে তাকে তার স্বজনরা ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। নোমানী বর্তমানে সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ এস এম নজরুল ইসলাম ও নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ডাঃ মুহিনুজ্জামান মুহিনের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার মাথার আঘাত স্থানে দশটি সেলাই রয়েছে। ইনফেকসন হওয়ার কারনে এখনো ক্ষতস্থানে নিয়মিত ড্রেসিং করাতে হয় ।
ক্যাপসশন : হাসপাতাল থেকে বাসায় আসার পরে অসুস্থ হয়ে পরেন নোমানী ।
এদিকে সাংবাদিক নোমানী জাল টাকার একটি চক্রের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে তথ্য সংগ্রহ করে আসছিলেন। জাল টাকা ব্যবসায়ীরা টের পেয়ে যায়। তারাও খুনি চক্রের সাথে হাত মিলায়। এছাড়া স্থানীয় ছাগল চোর, গরু চোর চক্রটিও খুনি চক্রের সাথে যোগ দেয়।
সাংবাদিক নোমানী এলাকায় বিদ্যুত,বেড়িবাধঁ সহ এলাকার উন্নয়ন ও আইনশৃংখলার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। তার উদ্যোগে একাধিকবার রাজাপুর থানা পুলিশকে নিয়ে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও রাতে পাহারা দেয়ার জন্য মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছেন। এছাড়া এলাকায় একটি পাঠাগার করেছেন স্থাপন।
এসব সহ্য হয়নি খুনিচক্রদের। এছাড়া চল্লিশকাহনিয়া মানব কল্যান সমিতির লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের সংবাদ প্রকাশ, ছাগল ও গরু চোর, জাল টাকা ব্যবসায়ী,কালেমায়ে তাইয়েবা,আল্লাহু ও মুহাম্মদ লেখা গেট ও অর্ধশত বছরের কবরস্থান উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ছিলেন সব সময় সোচ্চার। সত্য লিখনী, সত্য সংবাদ প্রকাশই কাল হয়ে দাড়ায় সাংবাদিক নোমানীর।
নোমানীকে খুনের জন্য হামলার ঘটনায় নোমানীর বোন লিপি রাজাপুর থানায় নামধারী ৮জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামীরা নোমানীকে কুপিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। আসামী দুলালের স্ত্রী মিথ্যা, বানোয়াট ও অসত্য অভিযোগ এনে নোমানীর পরিবারের তিনজন ও হামলার পরে নোমানীকে হাসপাতালে দেখতে আসা দুজন এবং ঘটনা স্থলে না থাকা ৩জনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি কাউন্টার মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে আসামী যারা বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিন নেননি এবং যারা নিয়েছেন তারা নোমানীর বাড়িতে গিয়ে নোমানীর মাকে বাড়ি ঘর জ্বালি দেয়ার হুমকি দিয়েছে। হুমকির পরে প্রশাসনকে জানানো হয়। হুমকির ঘটনায় নোমানীর মাতা রাজাপুর থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেছেন।
স্থানীয় একাধিক লোকজন জানিয়েছেন, সাংবাদিক নোমানী সব সময়ই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন এবং সত্য সংবাদ প্রকাশ করেছেন এজন্য তাকে খুন করার জন্যই কুপিয়েছে খুনি চক্রটি।এদের পিছনে রয়েছে গডফাদার। এসব গডফাদারদের দৃশ্য কোন আয়ের উৎস না থাকলেও তারা কোটি কোটি টাকার মালিক। দুদকের দৃষ্টি আকর্ষন করে এলাকাবাসী বলেন দুদক কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান করলেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে।
ক্যাপশন: হামলাকারীদের একাংশ।
এসব অবৈধ কালোটাকা মালিকদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক নোমানী সোচ্চার হওয়ার কারনেও ঐ খুনি চক্র দিয়ে নোমানীকে খুন করার প্লান করা হতে পারে।
রাজাপুরের স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা হয়।সমকাল প্রতিনিধি রহিম রেজা বলেন, গনমাধ্যমের উপর হামলার প্রধান কারণ হচ্ছে যে সমস্ত ব্যক্তি অবৈধভাবে কাজ করে। এসব অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলে সন্ত্রাসী ও খুনি চক্ররা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সংবাদ প্রকাশের পর তারা সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়। তারপর মারধর ও হত্যা পর্যন্ত করে থাকে। রহিম রেজা বলেন ,সাংবাদিকতা দিন দিন ঝুঁকির মুখে পড়ছে। সাংবাদিকদের ঝুকিঁ কমানোর জন্য সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এবং সাংবাদিকের যে সংগঠনগুলো আছে তাদের সাংবাদিকদের অধিকার আদায় জন্য ও সাংবাদিক রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংবাদিক সায়েম বলেন, “সাংবাদিকদের উপর বিভিন্ন সময় হামলার ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ সময়ই এসব হামলার সাথে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকে। ফলে এসব ঘটনার বিচার হয় না বললেই চলে। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিই সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনাকে উস্কে দিচ্ছে।”
“প্রত্যেকটি ঘটনার যথাযথ বিচার হলে অনাকাঙ্খিত ঘটনা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তবে সবচেয়ে বড় কাজটি হবে সমাজ মানসিকতায় পরিবর্তন আনা। কারণ সাংবাদিকের উপর সহিংস হয়ে প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করা যায় না। গণমাধ্যম সমাজের আয়না স্বরুপ, এর কর্মীদের উপর হামলা না করে প্রভাবশালীরা নিজেদের সংশোধন করলেই বৃহত্তর সমাজ উপকৃত হবে।
সাংবাদিক সায়েম আরো বলেন, কেউ ভাল কাজ করলে গণমাধ্যমে তা ইতিবাচকভাবেই আসে, আর খারাপ কাজ করে ইতিবাচক কাভারেজ প্রত্যাশা করা যায় না। আর সেটিকে পেশিশক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা বর্বরতার শামিল।
সমাজ সেবক ও উন্নয়ন কর্মী আলমগীর শরীফ বলেন, সাংবাদিকদের কাজ সমাজের সঠিক চিত্র জাতির সামনে তুলে ধরা। তাই সাংবাদিকদের সমাজের দর্পণ বলা হয়। নির্যাতিত মানুষ শেষ আশ্রয়স্থল হিসাবে সাংবাদিকদের দারস্থ হয়। আর সাংবাদিকরা জাতির সামনে তুলে ধরে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সুখ, দুঃখ, হাসি কান্না, সাফল্য ব্যর্থতার কথা।
সাংবাদিক নোমানী সব সময়ই সত্য সংবাদ প্রকাশে কারো সাথে আপোষ করেন নি । চল্লিশকাহনিয়া হাজি বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন কালেমায়ে তাইয়েবা,আল্লাহু ও মুহাম্মদ লেখা গেট ও অর্ধশত বছরের কবরস্থান উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছেন । এই সংবাদের কারনেই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফিরে এসেছেন মৃত্যুর মুখ থেকে।
তিনি বলেন, একটি স্বাধীন দেশে একজন মানুষ তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হবে তা মেনে নেয়া যায়না। আমরা সাংবাদিক নোমানীর ওপর ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার চাই।
স্থানীয় একাধিক সাংবাদিক,সমাজকর্মী,উন্নয়ন কর্মী বলেছেন সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানী একজন সৎ সাহসী সাংবাদিক।তিনি অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন নি কখনো। মানুষের বিপদে আপদে পাশে থেকে সাহায্য সহযোগীতা করাই তার কাজ। তার ওপর হামলা দুঃখ জনক ।তারা বলেন, সংবাদ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই সাংবাদিকের কাজ। সে সংবাদে যাদের আঁতে ঘা লাগে তারাই সাংবাদিক নির্যাতন করে। তবে সাংবাদিক নির্যাতনের তালিকায় সাধারণত আমজনতা থাকে না। খুঁটির জোর থাকলেই সাংবাদিক হয়রানি ও নির্যাতন করা যায়। এই খুঁটি হতে পারে রাজনৈতিক প্রভাব, লোকবলের দাপট ,কালো টাকা ইত্যাদি।
এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বরিশাল প্রকাশক ও সম্পাদক পরিষদের সভাপতি কাজী আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাংবাদিকতা যে কঠিন, সেই কঠিনেরে ভালোবেসে টিকে থাকা যে আরও কঠিন।
এসব হামলা-মামলা-নির্যাতন-হত্যা সাংবাদিকতা পেশাকে দিনকে দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের ফোর্থ স্টেট বা চতুর্থ স্তম্ভ। আমরা তথ্যপ্রযুক্তি যুগের বিশ্ব নাগরিক। গণমাধ্যম কর্মীদের নির্যাতন করে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা যাবে না। তথ্যের অবাধ প্রবাহ না হলে সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও খর্ব হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা-মামলা-নির্যাতন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার খোয়াবনামা রচনা হতে পারে, কিন্তু তার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কাজেই সাংবাদিক নোমানীর ওপর ন্যক্কারজনক নির্যাতনের বিচার করে সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পক্ষে দাঁড়াতে হবে আমাদের। নির্যাতনকারীদের জন্য কোনো দায়মুক্তি নয়।
সাংবাদিক নোমানীর ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বরিশাল প্রকাশক ও সম্পাদক পরিষদের সাধারন সম্পাদক কাজী মিরাজ মাহমুদ বলেন, হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর বিচারের দাবী জানাই প্রশাসনের প্রতি। আশা করি প্রশাসন আমাদের অনুরোধে সাড়া দিবেন। পাশাপাশি গডফাদারদের ব্যাপারে তদন্ত করা হোক। কারা হামলার নির্দেশ দিয়েছিলো। তাও জানা জরুরী।
হামলার ব্যাপারে সাংবাদিক নোমানী বলেন,৩ জুন বাড়ি থেকে বরিশাল ফেরার পথে দেলোয়ার ,আলম, ফজলে হক,কালু মোল্লা,হোসেন আলী,ফেরদৌস,আমিনুল ও দুলালসহ ২০ /২৫ জনের একটি দল কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমার ওপর হামলা করে। হামলার সময় তারা বলতে ছিল কবর ও গেটের সংবাদ কেন করেছো তোকে আজ মেরেই ফেলবো। রস কমিয়ে দিব। তোকে জবাই করে ফেলবো। নোমানী পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন প্রশাসনের তৎপরতার কারনে খুনিচক্রটি নোমানীর বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিতে বা অন্য কোন অঘটন ঘটাতে পারেনি।
হামলার একটি ভিডিও এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে তাতে দেখা গেছে হামলাকারীদের এবং তাদের উগ্রতা। ভিডিওতে দেখা যায় নোমানী রক্তাক্ত অবস্থায় ছবি তুলতেছেন।
এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন,ঘটনার তদন্ত চলছে। বিষয়টিতে প্রশাসন সোচ্চার রয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনা পর্যালোচনা করে সাংবাদিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদন তৈরি করে দেশি-বিদেশি একাধিক সংস্থা বা সংগঠন ।চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে অন্তত ১১৮ জন সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন। এছাড়াও গত ৩ মাসে ৩ জন গণমাধ্যমকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে সংগঠনটি।আর্টিকেল নাইন্টিনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সল সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানান।
এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিষ্ট সিপেজে সাংবাদিক নোমানীর ওপর হামলার ঘটনায় দায়ীদের বিচার দাবী করেন। তারা নোমানীর ওপর হামলার ঘটনায় মর্মাহত।
হামলাকারী আলম,দুলাল, দেলোয়ারসহ অন্যান্যদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে সাংবাদিক নোমানীর ওপর হামলার ঘটনায় গনমাধ্যমের বিভিন্ন সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ঢাকা,বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, বিক্ষোভ করে এবং বিবৃতি দিয়ে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
ক্যাপশন: বরিশালে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধনের চিত্র :ছবি সুভাষ দাস।