শুক্রবার কুয়াকাটায় গিয়ে দেখা যায়, মিশ্রিপাড়ায় রাখাইনদের দোকানপাট সব বন্ধ রয়েছে। মাঝেমধ্যে দু-একজন রাখাইন নারী দোকানের ‘ঝাঁপ’ ফাঁক করে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছেন। ক্রেতার আশায় আছেন তাঁরা।
রাখাইন মার্কেটের এক দোকানি লাউচিং রাখাইন (৪৫)। তাঁর একটি তাঁতও রয়েছে। এক বছর ধরে তাঁতের কাজ বন্ধ। তিনি বলেন, তাঁর স্বামী নেই। বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে সংসার। পর্যটকদের উপস্থিতি যত বেশি হতো, ততই তাঁদের বেচাবিক্রি বেশি হতো। নিজের হাতে তাঁতে বুনে কাপড় দোকানে বিক্রি করতেন। এনজিও থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তাঁতের কাজ করতেন। ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু এখন দোকানে মালামাল থাকলেও বিক্রি হচ্ছে না। একদিকে ঋণ, অপরদিকে রোজগার নেই।
রাখাইনদের তৈরি পণ্য বিক্রির জন্য কুয়াকাটা সৈকতসংলগ্ন রাখাইন মহিলা মার্কেটটি বন্ধ অবস্থায় দেখা গেছে। ওই মার্কেটের অপর দোকানি লুমা রাখাইন (৬৫) জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মার্কেটে ১৪টি স্টল রাখাইন নারীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাখাইন নারীদের হস্তচালিত তাঁতের কাপড়, চাদর, লুঙ্গি, জামাসহ নানা ধরনের পণ্য এই মার্কেটে বিক্রি হতো। এখন পর্যটক নেই। মার্কেটের দোকান বন্ধ। বেকার হয়ে অভাব-অনটনে দিন কাটছে রাখাইনদের।
মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধবিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মং লাচিং (৪৫) বলেন, ‘করোনার শুরু থেকেই আমাদের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। মূলত আমরা তাঁতশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। পর্যটক না আসায় আমাদের হাতে তৈরি পণ্যের চাহিদাও নেই। তাঁতগুলো বন্ধ। কেউ আমাদের খোঁজখবর নেয় না।’
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটার সঙ্গে রাখাইনদের ইতিহাস-ঐতিহ্য জড়িত। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে রাখাইনদের রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে কিছু সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁদের আরও সহযোগিতা দরকার।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, কুয়াকাটার রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখানকার রাখাইন পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।