একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করি,সাগরকন্যা কুয়াকাটার পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা করি,, এই প্রতিপাদ্য নিয়ে সূর্য উদয় এবং সূর্য অস্তের বেলাভূমি সাগরকন্যা কুয়কাটা সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ রক্ষায় বেলা’র উদ্যোগে সকাল ১০ টায় মানববন্ধনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। এ সময় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, লিংকন বায়েন,বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক,বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা),নাসির উদ্দিন বিপ্লব, কুয়াকাটা প্রেসক্লাব, রুমান ইমতিয়াজ তুষার,প্রেসিডেন্ট ট্যুর অপারেটরস্ এসোসিয়েশন অব (টোয়াক) অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আনোয়ার হোসেন আনু সহ স্থানীয় গনোমাধ্যম কর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
বাংলাদেশের দক্ষিন অঞ্চলে কুয়াকাটার জীববৈচিত্র্য ও বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা: সৌন্দর্যের ধারয় রয়েছে সমুদ্র সংলগ্ন ঝাউ বাগান,লেম্বুর বন, ইকোপার্ক এবং গঙ্গামতির সংরক্ষিত বনাঞ্চলে, যেখানে দেখা মেলে কাঠবিড়ালী, শুকর, শিয়াল, বানর, বনমোরগ-মুরগী সহ নানা প্রজাতির পাখি। শীতকালে বিভিন্ন অতিথি পাখির অবাধ বিচরণক্ষেত্র এই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূর্ব দিকে গঙ্গামতির জঙ্গল ছাড়িয়ে আরও সামনে গেলে দেখা মেলবে ক্রাব আইল্যান্ড বা কাকড়ার দ্বীপ এ জায়গায় আছে লাল কাকড়ার বসবাস। নির্জনতা পেলে সমুদ্র সৈকত লাল করে বেড়ায় কাকড়ার দল কুয়াকাটা সৈকতে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় লাল কাকড়া ও কচ্ছপের অবাধ বিচরনে অভয়াশ্রম বানিয়েছে ওয়ার্ল্ড ফিস বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর। এতে সহযোগীতা করছে কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন, কুয়াকাটা টুরিস্ট পুলিশ ও ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) । সৈকতের কাউয়ারচর জোনের ঝাউবন এলাকায় ৩শ ফুট বাঁশের বেড়া দিয়ে। উপপ্রবহীন অভয়াশ্রম নির্মান করা হয়।
অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকের ব্যবহার যা দিন দিন বেড়েই চলছে। সস্তা ও সহজলভ্য এই প্লাস্টিকের ব্যবহার শুধু আমাদের দেশেই নয়, বরং সাড়া বিশ্বের জন্য একটি মারাত্বক হুমকীর কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। বিশ্বে প্রতিবছর ৩০০ মিলিয়ন মেট্রিকটনেরও বেশী প্লাষ্টিক পন্য উৎপাদিত হয় এবং মোট উৎপাদিত প্লাষ্টিক বর্জ্যের প্রায় অর্ধেকই একক ব্যবহৃত প্লাষ্টিক বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক প্রতি বছর প্রায় ৮ মিলিয়ন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে গিয়ে মিশে এবং সাগরে বিদ্যমান যায় ৮০% ক্ষুদ্রকনা।
ইউএইপি, ২০১৮ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৭৩,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য দেশের বৃহৎ ৩ টি নদীর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশে যা মূলত পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের ঝুঁকির প্রধান কারণ। পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুসারে, শুধুমাত্র একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক মূলত ৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে পৃথিবীতে অবস্থান করে এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন ১৭০০ প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয় যার অর্ধেক পরিমাণ বর্জ্য পুনরায় ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করা হলেও বাকি অর্ধেক প্লাস্টিক স্তুপাকারে উন্মুক্তভাবে পরিত্যাক্ত হয়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে প্লাষ্টিকের ব্যবহার ছিল ৫৪৫৩০০ টন এবং পুর্নব্যবহারের পর প্লাষ্টিকের বর্জ্য ছিল প্রায় ৫০২১৩ টন, যার অর্থ দেশে ব্যবহৃত মোট প্লাষ্টিকের মাত্র ৯.২ শতাংশ পুনব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে একবার ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রির মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিকের ব্যাগ, লাঞ্চ বক্স, পলিস্টেরন জাতীয় ব্যাগ, কাটাচামচ,কফির কাপ, বোতল, প্লেট, কাপ, ট্রে ইত্যাদি যা কোনভাবেই পুনরায় ব্যবহার যোগ্য নয় এবং যা পচনশীল নয়। প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করেই দেশে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫,০০০টি প্লাস্টিক কারখানা প্রায় ২৫০০ ধরনের প্লাস্টিক পন্য তৈরি করে। প্লাষ্টিক বর্জ্য পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে যার ফলে মানুষসহ উদ্ভিদ, জলজ প্রাণী এবং প্রানীকূল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পাহাড়, বনত সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি স্থানে প্লাষ্টিকের দূষণ আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের অবাব চালাচল এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সাধারণ মানুষের উদাসীনতার কারণে এসব স্থানগুলো এখন হুমকীর মুখে।
প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে বেলার কাক্রমঃ
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ১০টি সমমনা বেসরকারি সংস্থা দেশে ক্ষতিকর প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে পলিথিন/প্লাস্টিক ব্যাগের উপর বিদ্যমান আইনি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ও এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধের দাবিতে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে একটি জনস্বার্থমূলক মামলা (নং ১৪৯৪১/২০১৯) দায়ের করে। মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে গত ০৬ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ পলিথিন/প্লাস্টিক ব্যাগের উপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা কার্যকর এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ধায়া ৬ক বিধান অনুযায়ী এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও আইনী কার্যকারিতাবিহীন ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। জারিকৃত এ রুলে আগামী ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ সালের মধ্যে দেশে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে এবং এসবের নিরাপদ বিকল্প চালু করার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন আদালত। একইসাথে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় মহামান্য আদালত দেশব্যাপী নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ, কারখানা বন্ধ এবং যন্ত্রপাতি জব্দ করণের মাধ্যমে পলিথিন/প্লাস্টিক ব্যাগের উপর বিদ্যমান আইনী নিষেধাজ্ঞা পূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে বিবাদীগণকে নির্দেশ প্রদান করেন। সেইসাথে আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের সকল হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরায় এক বার ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিকপণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ ও সকল উপকূলীয় অঞ্চলে পলিথিন/প্লাস্টিকের ব্যাগ বহন, বিনা, ব্যবহার, বিপণন নিষিদ্ধ করতে নির্দেশ প্রদান করেন মহামান্য আদালত।
প্লাস্টিক পন্য ব্যবহার বন্ধে করনীয়: প্লাস্টিক বা পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ২০১০ সালে সরকার “পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন প্রনয়ন করে।