ঢাকাটাইমস :
বরগুনার শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘদিন পুলিশ নজদারিতে রাখে মিন্নিকে। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই বরগুনা পুলিশ লাইনসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর পর মাঝে জামিনেও ছিলেন তিনি। পরে সেই জামিন বাতিল করা হয়। সেসময়ে বরগুনা জেলা কারাগারে ছিলেন মিন্নি। এরপর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
কারাগারে কেমন আছেন তিনি? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, কারাগারে তিনি ভালো আছেন। তবে বাবার দাবি, ভালো নেই মিন্নি। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন জানান, তার মেয়ের (মিন্নি) শরীরে নানা ধরনের অসুখ বাসা বেঁধেছে। মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করলেও করোনার কারণে উচ্চ আদালতের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মামলাটির কার্যক্রমও বন্ধ ছিল।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা শহরের সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। পরবর্তীতে তিনিই হয়ে যান মামলার অন্যতম আসামি। কারণ তার পরিকল্পনাতেই প্রেমিক নয়ন বন্ড হত্যা করেছিলেন রিফাতকে। পরে ওই বছরের ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন নয়ন বন্ড।
রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে করা মামলায় ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আদালতের আদেশের পর বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মিন্নিকে নেওয়া হয় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে। সেখানে কনডেম সেলে অবস্থান করছেন তিনি।
নিম্ন আদালতের দেওয়া মিন্নির মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে তার পরিবার। করোনার কারণে দীর্ঘদিন উচ্চ আদালত বন্ধ থাকায় আপিল শুনানি হয়নি। পরে করোনা পরিস্থিতি স্বভাবিক হয়ে এলে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এখন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আপিলের শুনানি হবে বলে আশা করছেন তার বাবা।
কারাগারের একটি সূত্র জানায়, কারাগারের কনডেম সেলে সুস্থ আছেন মিন্নি। কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা সাধারণত কনডেম সেলে একা থাকেন। কিন্তু কাশিমপুর মহিলা কারাগারে অতিরিক্ত কয়েদি থাকায় একটি কনডেম সেলে তিনজনকে রাখা হচ্ছে।
কারাসূত্রটি জানায়, প্রতি সপ্তাহে পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ আছে। মিন্নি পরিবারের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে টেলিফোনে কথা বলেন।
মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কারাগারে মিন্নি ভালো নেই। সেখানে খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না। সব সময় অসুস্থ থাকে। তার শরীরে নানা অসুখ বাসা বেঁধেছে। অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে মিন্নি। কারাগারের খাবার, পানি, আবহওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না সে। ফলে কারাগারে তার খুব কষ্ট হচ্ছে।’
মোজাম্মেল বলেন, ‘নিম্ন আদালত মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার তিন থেকে চারদিনের মধ্যেই আমরা আপিল করেছি। করোনার কারণে দীর্ঘদিন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার পর আদালত খুলেছে। হয়তো এখন একটি সিদ্ধান্ত হবে।’
এ ব্যাপারে কাশিমপুর মহিলা কারাগারের জেলার ফারহানা আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কারাগারে মিন্নি ভালো আছে। তার দাঁতের সমস্যা ছিল। সেটার চিকিৎসা করানো হয়েছে। ফলে এখন তার কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।’
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে মিন্নি ছাড়াও অন্য যাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, মো. রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় ও মো. হাসান। খালাস পেয়েছেন মো. মুসা, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর ও কামরুল হাসান সাইমুন।