ক্রীড়া ডেস্ক : ১৫ বছর পর্যন্ত মূল পর্বে জিততে না পারার আক্ষেপ ঘুচেছে আগেই। হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে ২৪ অক্টোবর নেদারল্যান্ডকে ৯ রানে হারিয়ে দীর্ঘদিন পর বিশ্বকাপের মাঠে জয়ের আনন্দ করে বিজয়ীর বেশে হাসিমুখে হোটেলে ফিরেছে সাকিবের দল।
সে জয়ে প্রত্যাশার বেলুন ফুলে উঠেছিল। কারো কারো মনে হয়েছিল শুধু নেদারল্যান্ডসের মত ‘চুনোপুটি’ নয়, এবার ‘রাঘব-বোয়াল’ শিকার করবে সাকিবের দল। কিন্তু গত ২৭ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে রেকর্ড ১০৪ রানের পরাজয়ে সে প্রত্যাশার বেলুন ফুটো হয়ে গেছে।
আশার বদলে নিরাশা এসে ভর করেছিল। প্রত্যাশার বদলে সংশয়, সন্দেহের বীজ হয়েছিল অঙ্কুরিত। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জয় নিয়েই দেখা দিয়েছিল রাজ্যের সংশয়। এর মধ্যে ক্রেইগ আরভিনের দল পাকিস্তানীদের হারিয়ে দেয়ায়
মাঠের লড়াই শুরুর আগের হিসেব নিকেশটা বরং জিম্বাবুয়ের পাল্লাই ভারি হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সব সংশয়, সন্দেহ দুর করে আজ জিম্বাবুইয়ানদেরকে ৩ রানে হারিয়ে এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে সাকিবের দল।
মাঝে সলতে হয়ে ওঠা আশার প্রদীপখানি এখন আবার জ্বলতে শুরু করেছে। অন্যরকম চিন্তাও ডালপালা গজাতে শুরু করেছে। তাহলো, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে পারেনি পাকিস্তান। হেরেছে। আর সেই জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ।
তার মানে পাকিস্তানের সাথেও জিতবে বাংলাদেশ! এভাবেই চিন্তা করছেন। টাইগার সমর্থকদের একটা অংশ সত্যিই বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, শাহিন শাহ আফ্রিদি আর হারিস রউফদের হারিয়ে দেয়ার কথাই ভাবছেন।
সেটা যে আকাশকুসুম কল্পনা হবে, তা নয়। পাকিস্তানকে হারানো অসম্ভব নয়। ক্রিকেটে বিশেষ করে টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে অসম্ভব আর অবিশ্বাস্য বলে কিছু নেই। যে কোনোদিন যে কোন ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যে কোন দল যে কাউকে হারিয়ে দিতে পারে।
এবারের বিশ্বকাপে অনেক অঘটন ঘটেছে। শক্তিতে পিছিয়ে থাকা বেশ কটি দল তাদের চেয়ে শ্রেয়তর প্রতিপক্ষ মাঠে ভাল খেলে হারিয়ে দিয়েছে। প্রথম পর্বে আয়ারল্যান্ড আর নামিবিয়ার কাছে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের হার, মূল পর্বে আয়ারল্যান্ডের কাছে ইংল্যান্ডের পরাজয়, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের হারের ঘটনা কিন্তু ঘটেছে। কাজেই ৬ অক্টোবর অ্যাডিলেডের মাঠে বাংলাদেশও পাকিস্তানকে হারিয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারাতে পারবে কি পারবে না, তা সময়ই বলে দেবে।
তবে যে যাই বলুন আর ভাবুন না কেন, বাস্তবসম্মত কথা হলো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাাংলাদেশের যা শক্তি, সামর্থ্য তা দিয়ে নেদারল্যান্ডস আর জিম্বাবুয়ের বাইরে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা আর পাকিস্তানকে হারানো বেশ কঠিন। কাজেই আসল সত্য হলো বাংলাদেশ অতীতে যাদের বিপক্ষে বেশী জিতেছে, যে দল দুটির বিপক্ষে সাফল্য বেশি, ঠিক তাদের সঙ্গেই বিশ্বকাপের মূল পর্বে এসে জিতেছে এবার।
অন্যদিকে এ বছর জুলাই-আগস্টে জিম্বাবুয়ের মাটিতে তাদের সাথে সর্বশেষ সিরিজে ১-২ ব্যবধানে সিরিজ হারলেও, দেশটির বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বরারবরই টাইগারদের রেকর্ড উজ্জ্বল। সাফল্যের পাল্লা ভারি। ১৯ বারের ১২টিতে জয় ছিল বাংলাদেশের। আর জিম্বাবুয়ের জিতেছিল ৭টিতে। আজকের ৩ রানের জয়সহ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০ বারের মোকাবিলায় ১৩ নম্বর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রেও আগের ধারাই অব্যাহত থাকলো।
মানে গত একবছর টাইগারদের পারফরমেন্স যতই অনুজ্জ্বল থাকুক, আর পরিণতি যত খারাপই হোক না কেন, নেদারল্যান্ডস আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইতিহাস, পরিসংখ্যানের আলোকেই ফেবারিট ছিল বাংলাদেশ। আর ডাচ ও জিম্বাবুইয়ানরা ছিল ‘আন্ডারডগ।’
শেষ পর্যন্ত দুই আন্ডারডগের বিপক্ষে ঠিকই জয় ধরা দিল বাংলাদেশের। আর ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ঘটেছে করুণ পরিনতি। এখন দেখা যাক, সব হিসেবে এগিয়ে থাকা ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে কী করে বাংলাদেশ?