মারুফ সরকার, স্টাফ রির্পোটার:
মিজানুর রহমান মিজান, যাকে সবাই চেনে কসম মিজান নামে। সরকারের বিভিন্ন আউটসোর্সিং প্রকল্পের অঘোষিত নিয়ন্ত্রণকারী তিনি। আউটসোর্সিং প্রকল্পের টেন্ডার মানেই মিজান সিন্ডিকেটে আবদ্ধ। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে নিজেকে সক্রিয় রাখলেও সরকারি টেন্ডারে তার একক আধিপত্য। আউটসোর্সিং প্রকল্পের কাজ মানেই তার হাতের ইশারা-ইচ্ছে করলে করেন, আবার কাজ না পেলে বন্ধ করে দেন। অথচ তিনি সরকারবিরোধী একজন প্রভাবশালী নেতার ডানহাত।
এক লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ২০০৪ সালে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলায় কসম মিজান অনেক দিন কারাবন্দি ছিলেন। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তিনি একটি বেসরকারি সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহায়ক এবং তার বাবা মোতাহার হাওলাদার সিকিউরিটি গার্ড হিসাবে ২০১০ সাল পর্যন্ত চাকরি করেন। তারপর মিজান চাকরি ছেড়ে স্টেট সার্ভিসেস লিমিটেড এবং একুশে সিকিউরিটি সার্ভিসেস নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এরপর দেশের বিভিন্ন জেলার যুব ছেলেমেয়েদের সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে রাতারাতি শত কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বনে যান। ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাদের বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ও প্রাণনাশের হুমকি দেন।
সম্প্রতি কসম মিজান যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ‘দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা (৩য় পর্যায়)’ প্রকল্প, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় কারাগার ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প টেন্ডারে বিভিন্ন দুর্নীতি ও ঘুসবাণিজ্য করে কাজ হাতিয়ে নেন। এসব প্রতিষ্ঠানের এনওএ দেখিয়ে বিভিন্ন জেলার সহজ-সরল ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে আউটসোর্সিং চাকরিকে সরকারি চাকরি বলে জনপ্রতি ৩-৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এবং এনওএ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের চাহিদাকৃত জনবলের থেকে পাঁচগুণ জনবলের কাছ থেকে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এ কসম মিজান। তারা প্রতিষ্ঠান স্টেট সার্ভিসেস লি. এবং স্ত্রীর প্রতিষ্ঠান একুশে সিকিউরিটি সার্ভিসেসের নামে কয়েকটি দুর্নীতির মামলা চলছে। বর্তমানে ‘দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা (৩য় পর্যায়)’ প্রকল্পে দুর্নীতির দায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কসম মিজান ও তার স্ত্রীর প্রতিষ্ঠানকে কেন কালো তালিকাভুক্ত করছে না সেই মর্মে উচ্চ আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রুল জারি করেন।
বর্তমানে কসম মিজানের প্রতারণার সহযোগী হিসাবে রয়েছেন আরেক প্রতারক কিছুদিন আগে প্রতারণা মামলায় সিআইডির হাতে গ্রেফতার এবং দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা দালাল মামুন। তাকে কারাগার থেকে কসম মিজান জামিনে বের করে আনেন। বর্তমানে তার মাধ্যমেই সরকারি চাকরির নামে প্রতারণা করে বিভিন্ন জেলার ছেলেমেয়ের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কসম মিজান।
আউটসোর্সিংয়ের প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার রফিক শিকদার বলেন, স্টেট সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান মিজান একজন ভয়ংকর প্রতারক। তিনি বর্তমান সরকারের সব আউটসোর্সিং টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ করেন আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায়। কসম মিজানের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই। কেউ কথা বললেই তার পেছনে গুন্ডা বাহিনী লাগিয়ে দেন। আমরা তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েও কিছু করতে পারিনি।
এ সেক্টরের ব্যবসায়ী ফ্রন্টলাইন সার্ভিসের মালিক এইচ আলী বলেন, সরকারের আউটসোর্সিং প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করতে কসম মিজান সিন্ডিকেট নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করছেন বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকা একাধিক চিহ্নিত অপরাধী। এসব প্রতারকের জন্য এ সেক্টরের ব্যবসা হুমকির মধ্যে রয়েছে।
ভুক্তভোগী ময়মনসিংহের কেয়া পারভিন বলেন, চাকরির কথা বলে আমার কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা নিয়েছে। সেই টাকার জন্য আমি বিনা দোষে জেল খেটেছি। নওগাঁর পলাশ বলেন, প্রতারক কসম মিজান মহিলা অধিদপ্তরে কাজের কথা বলে ৩২ লাখ টাকা নিয়েছেন। বরিশালের আবদুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট হাসপাতালে চাকরির কথা বলে ১৬ লাখ টাকা নিয়েছেন আমার কাছ থেকে। এ রকম শত শত ভুক্তভোগীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে দিব্যি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এই কসম মিজান।
অভিযোগের বিষয়ে মিজানুর রহমান ওরফে কসম মিজানকে ফোন করলে তিনি বলেন, দেখুন, আমি সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কাজ করি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এসব অভিযোগ মিথ্যা। কেয়া পারভিন জেল খেটেছেন নিজের জন্যই।