বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি : বরগুনার বেতাগীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হিসাব রক্ষক মো: রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগের ঘটনায় স্ব পদে ও কর্মস্থলে বহাল রেখেই তদন্ত করায় এ তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো: বশির মিয়াকে প্রধান করে বরগুনা সিভিল সার্জন সিনিয়র স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অফিসার মো: ফোরকান মিয়া ও মেডিকেল অফিসার অফ সিভিল সার্জন অফিস মো: হাবীবুর রহমানের সনমন্বয়ে ৩ সদস্য বিশিস্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি গত ২৮ জুলাই (রবিবার) সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সে উপস্থিত হয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য শোনেন। কিন্ত হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে যাদের অভিযোগ তদন্তের বিষয় তাদের আগাম জানানো হয়নি।
ফলে সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় অনেকেরই উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়নি ভ’ক্তভোগীদের এমনই অভিযোগ রয়েছে। অথচ হিসাব রক্ষককে ম্যানেজ করে অফিস ফাঁকি দেয়া সদ্য বদলী হওয়া অফিস সহায়ক মো: শহীদুল ইসলাম আগাম জানতে পারে আমতলীতে থেকে এসে তার পক্ষে সাফাই গান। অথচ স্থানীয়রা তখনো জানেন না কিসের তদন্ত। এতে বিরাজ করে হাসপাতালের কর্মচারিদের মাঝে চাপা ক্ষোভ। এ কারনে তদন্ত কমিটির প্রতি ক্ষুব্দ হয়ে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী সঠিক বক্তব্য উপস্থাপন না করে দায় এড়িয়ে গেছেন। তারা অভিযোগ করেন, আগে জানতে পারলে অবশ্যই ভাল হতো। তবুও তদন্ত কমিটির প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সের ক্ষুব্দ একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরও অভিযোগ করেন, রফিকুল ইসলাম ২০১৬ সালে যোগদানের পর থেকে কর্মচারীদের জিম্মী করে স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিয়ে নানা অনিয়ম করে আসছিল কিন্ত তদন্ত কারী কর্মকর্তাদের সদইচ্ছা থাকার পরেও তাকে স্ব পদে ও ওই কর্মস্থল রেখে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা কতটা সম্ভব? তাকে অপসারন কিংবা বদলী করে তদন্ত করা হলে হাসপাতালের অধীনস্থ কর্মচারিরা নির্ভয়ে সকল প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারতো। ফলে তদন্ত কাজের সঠিক উদ্দেশ্যে কতটা ফলপ্রসু হবে তা নিয়ে যথেষ্ঠ সংশয় থেকে যাচ্ছে ভ’ক্তভোগীদের।
এ ছাড়াও নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সের এক কর্মচারি জানান, এমন কোন দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ড নেই যা তিনি করেন নি। তবুও অনেকে সরাসরি অভিযোগ করতে সাহস পায়না। এমনকি হাসপাতালের সরকারি কর্মচারী কোয়াটারে না থাকা সত্বেও তার নামে ভুয়া বরাদ্দ দেখিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ এনে অডিট আপত্তি দিয়ে হয়রানি করে। অন্যান্যদের কাছ থেকেও অডিট আপত্তি নিস্পত্তির নামে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেয়। আনুসাঙ্গিক খরচের ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি ও হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়মূলক কাজের অর্থআত্মসাত সহ হিসাব রক্ষকের সকল দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয় তদন্ত কমিটিকে সরাসরি বলা হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো: বশির মিয়া জানান, পত্রিকায় প্রকাশিত অভিযোগের অনেকটাই সত্যতা মিলেছে। এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেইনি। তবে শীঘ্রই জমা দেবো। বরগুনা সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অফিসার মো: ফোরকান মিয়া বলেন, হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগেরই সত্যতা পাওয়া গেছে। আগে না জানানো হলেও তদন্তে ওই ব্যক্তি কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্পনা কর্মকর্তা ( ভারপ্রাপ্ত) ডা: মো: শাকিল তানভীর জানান, তদন্ত চলছে। তাই এ মুহুর্তে কোন মন্তব্য করতে চাইনা।
এর আগে ২০ জুন (বৃহাস্পতিবার) বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শওকত হাচানুর রহমান রিমন হাসপাতাল পরিদর্শনকালে রফিকুল ইসলামের কর্মান্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিভাগীয় কর্মর্তাদের বিরুদ্ধে তার দেওয়া মামলা তুলে নিয়ে স্বেচ্ছায় বদলী হয়ে যাওয়ার নিদের্শ দেন।