শিবগঞ্জ উপজেলায় ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ ছাড়াও কাজ করানো হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দিয়ে। শ্রমিকদের হাজিরার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট গরমিল দেখা গেছে। এ অনিয়ম লোকাতে প্রকল্প সভাপতিরা হাজিরা খাতা দুটি রেখে কাজ করছেন।
১৫টি ইউনিয়নের অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকার ৪০ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তা ও বাঁধ নির্মাণ এবং স্কুলের মাঠ সংস্কার। এসব প্রকল্পে ৪,৫১০ জন শ্রমিকের জন্য প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে মোট ৭ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, শাহবাজপুর ইউনিয়নের ৫টি প্রকল্পের মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ড গোপালপুর চাপড় রাস্তা এলাকায় ফরিদের বাড়ি থেকে সেন্টুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে কাজে কাগজ-কলমে ৮৩ জন শ্রমিক কাজ করছেন। কিন্তু বাস্তবে সেখানে ২১ জনকে পাওয়া গেছে। এ প্রকল্পে শিশুদের দিয়েও কাজ করানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইউনুস আলীর ছেলে বালিয়াদীঘি দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র জিহাদ আলী, গোপালপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র বাসির আলী এবং বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথমবর্ষের ছাত্র আওয়াল হোসেনকে কাজ করতে দেখা গেছে। এ ইউনিয়নের বাকি চারটি প্রকল্পেও একইভাবে অনিয়ম করা হয়েছে বলে দেখা গেছে।
অনিয়ম প্রসঙ্গে এ ইউনিয়নের প্রকল্প সভাপতি মো. হুমায়ন কবিরের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
একই চিত্র দেখা গেছে মনাকষা ইউনিয়নের চৌকা, রাঘববাটি, শিংনগর এবং বিনোদপুর ইউনিয়নের নামো কালীগঞ্জ, লছমানপুর এলাকায়। তবে বিনোদপুরের একটি প্রকল্পে সকাল ১১টার সময় কোনো শ্রমিককেই পাওয়া যায়নি। কানসাট, মোবারকপুর, ধাইনগর, ছত্রাজিতপুর, নয়ালাভাঙা, দুর্লভপুর ইউনিয়নের প্রকল্পগুলোতেও শ্রমিকের সংখ্যা কাগজ-কলমে বেশি থাকলেও বাস্তবে কম।
মোবারকপুরের ঘোষলাদর এলাকায় ১১ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। ওই প্রকল্পে কতজন শ্রমিক কাজ করছেন তার হিসাব সভাপতি না দিলেও নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক শ্রমিক জানান, এ প্রকল্পে ৪০ জন শ্রমিকের নাম দেওয়া আছে। কিন্তু গত ৫ দিন ধরে ১১ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখেছেন তিনি।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বেশিরভাগ প্রকল্পের সভাপতিরা তালিকায় নিজেদের লোকদের নাম দিয়ে সেই নামের বিপরীতে মোবাইল ফোনের সিমকার্ড নিজের কাছে রেখেছেন। প্রকল্পের টাকা এলে সিম চালু করে টাকা তুলে অর্ধেক নামধারী শ্রমিকদের দেবেন আর বাকিটা তাঁরা নেবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া অনিয়ম লোকাতে তারা দুটি হাজিরা খাতা রাখছেন। ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা বা গণমাধ্যমকর্মীরা গেলে যে খাতায় বেশি শ্রমিকের নাম রয়েছে, সেটি দেখানো হয়।
অনিয়মের বিষয়ে মনাকষা, বিনোদপুর, শাহবাজপুর, নয়ালাভাঙা, চককীত্তি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে দাইপুখুরিয়া, ধাইনগর, কানসাট, মোবারকপুর, ছত্রাজিতপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বলেন, প্রকল্পের কাজ স্বাভাবিকভাবেই চলছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। যে শ্রমিক কাজ আসে না, তাঁদের অনুপস্থিত দেখানো হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, কয়েকটি প্রকল্পে কিছু অনিয়ম হয়েছে। সভাপতিদের সতর্ক করা হয়েছে। ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ ও শিশুদের দিয়ে কাজ করানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শ্রমিকদের নিজস্ব বিকাশ নম্বরে টাকা যাবে। তাই টাকা আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই। শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। সত্যতা পেলে প্রকল্পের সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।