ওষুধ চুরি করে দেড় কোটি টাকার মালিক ফার্মাসিস্ট সুধাংশু
প্রকাশ: ২৪ মার্চ, ২০২৩, ৮:৩৬ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের আলোচিত ফার্মাসিস্ট (সাময়িক বরখাস্ত) সুধাংশু শেখর বাড়ই। ওষুধ চুরি সিন্ডিকেটে একাধিকবার তার নাম আলোচনায় ছিল। ওষুধ চুরি করে দেড় কোটি টাকার মালিক হয়েছেন ফার্মাসিস্ট তিনি। অবশেষে সুধাংশু এবং তার স্ত্রী তুলসি রানী বাড়ইয়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সোমবার খুলনা জেলা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে তাদের দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে যার পরিমাণ ১ কোটি ৫২ লাখ টাকার কাছাকাছি। খুলনার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ গতকাল সন্ধ্যায় যুগান্তরকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রায় দুই বছর আগে নগরীর খালিশপুর থানাধীন শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ওষুধ চুরির সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তিকে আটক করে প্রশাসন। যারা বিভিন্ন সময়ে সরকারি ওষুধ বাইরে পাচার করে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করতেন। প্রশাসনের এক অভিযানে আটক হয়েছিলেন হাসপাতালের তৎকালীন ফার্মাসিস্ট সুধাংশু শেখর বাড়ই। ওই সময় হাসপাতালের ওষুধ চুরির সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। এমনকি তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তও করা হয়। পরবর্তীতে অভিযোগ ওঠে সুধাংশুর সম্পদ নিয়ে।
ওষুধ চুরির সিন্ডিকেটের পাশাপাশি অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পরবর্তীতে দীর্ঘ তদন্তের পর সুধাংশু শেখের সম্পদে গড়মিল খুঁজে পাওয়া যায়। দুদকের তদন্ত শেষে সহকারী পরিচালক তরুণ কান্তি ঘোষ বাদী হয়ে সোমবার সুধাংশু শেখ এবং তার স্ত্রী তুলসী রানী বাড়ইয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় এক কোটি ৫২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে, সুধাংশু শেখর বাড়ই তার জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে ৭০ লাখ ২২ হাজার টাকার সম্পদ প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তার নামে স্থাবর ও অস্থাবরসহ সর্বমোট ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। এর মধ্যে তিনি পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ বাবদ মোট ব্যয় করেছেন ২৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ব্যয় বাদে তার নিট আয় ৪৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
আরও দেখা গেছে, সুধাংশু শেখর বাড়ইয়ের অবৈধভাবে উপার্জিত আয় ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অবৈধ সম্পদের তথ্য গোপন করে তিনি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রদান করেছেন, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বিবরণে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সুধাংশু শেখর বাড়ই তার অবৈধ আয়ের মাধ্যমে নগরীর বয়রা এলাকায় জমিসহ একটি তিনতলা ভবন এবং তার স্ত্রী তুলসি রানী বাড়ইয়ের নামে একটি চারতলা ভবন তৈরি করেছেন। তুলসি রানী বাড়ই তার স্বামীর ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ নিজ দখলে রেখে একই আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এদিকে হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, সুধাংশু শেখরের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তারা বড় একটি সিন্ডিকেট। এদের দমানো খুবই কঠিন। দীর্ঘকাল ওষুধ চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার পর তিনি প্রশাসনের হাতে আটক হয়েছিলেন। তবে খুব দ্রুতই আইনের ফাঁক খুঁজে বের হয়ে গিয়েছিলেন।
বর্তমানে হাসপাতালের ওষুধ চুরির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের পরিচালক প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল এবং সন্ধ্যার পরও কর্মক্ষেত্রে থাকেন। এমনকি নিম্নমানের কোনো ওষুধ সরবরাহকারীরা দিলে সেটা তিনি বাতিল করে দেন। যার ফলে ওষুধ চুরি করে বিক্রি করা সিন্ডিকেটটা বর্তমানে একটু নিষ্ক্রিয় রয়েছে।
খুলনার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ আরও জানান, ফার্মাসিস্ট সুধাংশু শেখের বিষয়টি ওষুধ চুরি করে বিক্রি করার সময় হাতেনাতে আটক হওয়ার পর অনেকটা খোলাসা হয়। এরপর থেকে তার সম্পদের বিষয়ে আমরা তদন্ত করি। ফার্মাসিস্টের চাকরি করে জমি কিনে দুটি বাড়ি করাসহ নানান তথ্যপ্রমাণ আমরা পেয়েছি। বর্তমানে সুধাংশু সাময়িক বরখাস্ত রয়েছেন।