ঢাকার ধামরাইয়ে ফাতেমা আক্তার নামে (১৬) এক তরুণী গোপনে দুই স্বামী নিয়ে সমানতালে ঘর-সংসার করতে গিয়ে শেষ রক্ষা হলো না। শেষমেশ ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। ওই তরুণীর পূর্বের স্বামীকে সহযোগীসহ দ্বিতীয় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করেছে।
খবর পেয়ে পুলিশ ও গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. ইমাম আলী ঘটনাস্থলে এসে ওই তরুণীর পূর্বের স্বামী ড্রেজার মেশিনের ড্রাইভার মো. হিমেল আহাম্মেদ ও তার সহযোগী মো. আলমগীর হোসেনকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন। এ ঘটনায় ৫ লাখ টাকা জরিমানা গুনলেও শেষমেশ পূর্ব স্বামীই ওই তরুণীকে স্ত্রী হিসেবে পেয়েছেন।
জানা গেছে, পূর্বের স্বামীকে কোনো প্রকার তালাক প্রদান না করেই ওই তরুণী মা-বাবার কথামতো কাওয়াখোলা গ্রামের মোহাম্মদালী কেরিনার ছেলে কাজলকে (২২) কাবিন রেজিস্ট্রিমূলে বিয়ে করেন। এরপর ওই তরুণী একই সঙ্গে ওই দুই স্বামীর সঙ্গে সমানতালে ঘর-সংসার করতে থাকে। তবে বিষয়টি দুই স্বামীর একজনও জানতেন না। পূর্বের স্বামীর কাছে খালার বাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে দ্বিতীয় স্বামীর সংসারে চলে আসেন ওই তরুণী।
নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত হলে পূর্বের স্বামী মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার বাছট গ্রামের হিমেল আহাম্মেদ (২৪) কুশুরা ইউনিয়নের পানকাত্তা গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেনকে (২২) সঙ্গে রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই তরুণীর দ্বিতীয় স্বামীর বাড়িতে যান। এরপর দ্বিতীয় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ প্রতিবেশীরা এসে ওই দুইজনকে ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেন।
কাওয়ালীপাড়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মো. ফয়েজ আহাম্মেদ ও গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের পানেল চেয়ারম্যান মো. ইমাম আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে প্রাণে রক্ষা করেন। পরে ওই তরুণীর ইচ্ছানুযায়ী প্রথম স্বামীর হাতেই তাকে তুলে দেওয়া হয়। তবে প্রথম স্বামীকে নগদ ৫ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হয়।
এ ব্যাপারে ওই তরুণী বলেন, আমি ভালোবেসে হিমেলকে কাবিন রেজিষ্ট্রিমূলে বিয়ে করে সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘর সংসার শুরু করি। এতে আমার মা-বাবা মোটেও সুখী হতে পারেনি। এমনকি তারা আমাদের এ বিয়ে মেনেও নেয়নি। পরে তারা সমস্ত তথ্য গোপন করে কোনোপ্রকার তালাক না করেই কাজলের সঙ্গে আমাকে দ্বিতীয় বিয়ে দেন। আমি অনেক কৌশল করেই দুই স্বামীর ঘর সংসার করে আসছিলাম।
এ ব্যাপারে প্রথম স্বামী হিমেল আহাম্মেদ বলেন, আমি এতদিন ঘুণাক্ষরেও জানতে ও বুঝতে পারিনি আমার স্ত্রী আমাকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। তবে তার ঘনঘন আত্মীয় বাড়ি গমনাগমন আমার মনে সন্দেহের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিল। আজ তার সবই প্রকাশ পেয়েছে। আমার স্ত্রী আমাকে অনেক ভালোবাসে বলেই এতসব ঘটনা জানার পরও তাকে মেনে নিলাম।
এ ব্যাপারে দ্বিতীয় স্বামী মো. কাজল বলেন, আমি বিষয়টি আগে মোটেও জানতাম না। জানলে আরেকজনের বউকে বিয়ে করতাম না।
এ ব্যাপারে এসআই ফয়েজ আহাম্মেদ বলেন, এ অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করি। জনপ্রতিনিধিরা পূর্বের স্বামীর কাছেই তুলে দিয়েছেন ওই তরুণীকে।
এ ব্যাপারে প্যানেল চেয়ারম্যান মো. ইমাম আলী বলেন, পূর্বের স্বামীকে তালাক না দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের কোনো বৈধতা নেই। ওই তরুণী ও তার পিতা-মাতা যা করেছেন তার সবই অন্যায় ও ভুল। এছাড়া প্রথম স্বামীর সংসারে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে ওই তরুণীকে তার পূর্বের স্বামীর হাতেই তুলে দেওয়া হয়।